সানোয়ার রাসেলে

সানোয়ার রাসেলে

সানোয়ার রাসেলের তিনটি কবিতা

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২৯, ২০২৩

আলো

 

বাদামি-সবুজ ক্যানভাসে ফুটে উঠছে পশুর মুখ;
ঝোঁপ ঠেলে―
দূরাগত ঝর্ণাধ্বনির সাথে মিশে যাচ্ছে শিশুর কলরোল
একটি শৃগাল― ভেঙচি কেটে হারিয়ে যাচ্ছে নিমিষেই
ইতস্তত দেবদারু ফুঁপিয়ে কাঁদছে
প্রেইরির বুকে আগুন জ্বালিয়ে
আমি সোনালি ভূখণ্ডের স্বপ্ন দেখছি
ধেঁয়ে আসছে আঁধারকে সাথি করে― আলো।

 

কবর

 

তৃণ ঠোঁটে নিয়ে উড়ে গেল যে পাখিটি
সে যে জানলো না―
সে যে জানলো না―
যেই ভূমি থেকে পাখি
কুড়িয়েছে মরে যাওয়া ঘাস
ঠিক তার নিচে
অগণিত; অজস্র মৃতের আবাস
সাড়ে তিন হাত―
সাড়ে তিন হাত―
মাটির সিন্দুক কেউ করছে খনন
প্রতি কোপে কোদালের
প্রতি ঘায়ে শাবলের
আশ্চর্য অনিবার্য গন্তব্য সবার
কবর!
কবর!
কবর; এক অফুরান হাহাকার; অনিশ্চয়তার
কবর; এক অন্তহীন আহ্বান; খেয়াতরী ওপারে যাবার

 

―এসো; আমি অন্ধকার ঘর
―এসো; আমি মাটির বিছানা হয়ে ডাকছি কবর
―এসো; আমি বিষধর সরীসৃপ বুকে নিয়ে ডাকি
―এসো; আমি বহুদিন ধরে এক নিঃসঙ্গ একাকী
―এসো; আমি দিতে পারি দখিনা হাওয়ার মাঠে রাখালের শান্তির ঘুম
―এসো; পবিত্র দেহ; এইখানে সব কিছু শান্তনিঝুম
―এসো; পিছে ফেলে সব মায়া; দারা-পুত্র-পরিবার
―এসো; তোমাকে আমার আছে বেশ কিছু প্রশ্ন করার

 

তৃণ ঠোঁটে নিয়ে উড়ে গেল যে পাখিটি
সে যে জানলো না―
সে যে জানলো না―
ঠিক তার নিচে কত মৃতের কবর
আয়ত আকার নিয়ে প্রতিদিন জীবিতের নিচ্ছে খবর!

 

পিতার অন্তর

 

দুনিয়াটা দুঃখের আখড়া,
দেশে ও বিদেশে শুধু দুঃখের খবর।

 

মার্কিন মুল্লুকে নাকি সাদারা ঝাঁপিয়ে পড়ে
কালোরঙা লোকের ওপর।
ইয়েমেনে শান্তি নাই,
সিরিয়ায় কে যে কারে মারে তার পাই না ঠাহর!
বহুদিন ধরে মরে বিপ্লবী ফিলিস্তিনিরা
প্রথম ক্বেবলায় নাকি জায়নেরা দিচ্ছে পাহাড়া।
স্পেনেও মানুষ মরে, ওখানেও দুঃখের পসরা,
শংকায় ডুবে আছে ইউরোপ,
আফ্রিকা খুঁজে মরে শান্তিতে মরার খসড়া।

 

দেশের কথাই যদি ধরি,
ঝড়ে, জলোচ্ছ্বাসে, বন্যার করাল গ্রাসে
প্রতিদিন মরি।
দৈনিক পত্রিকা যেন নিয়মিত শোক সংবাদ,
খুনে, গুমে, ধর্ষণে ভরপুর― শান্তি যেন বিলুপ্ত প্রবাদ।
প্রতিদিন লাশ হই গাড়িতে, বাড়িতে,
প্রতিদিন কারবালা দেশজ হাঁড়িতে।

 

শোক-দুঃখের কথা আর কত কহতব্য,
বললে তো ফুরাবে না, তালিকা বিস্তর,
সব শোক ম্লান হয়ে যায়,
সব দুঃখ তুচ্ছ হয়, সকল খবর,
যখন শুনতে পাই বাড়ি ফিরে,
‘আজ আমার সন্তানের জ্বর।’