সাানোয়ার রাসেলের কবিতা ‘বাইদ্যার ছেড়ি’

প্রকাশিত : অক্টোবর ০৬, ২০২১

পুরান ঢাকার উচ্চারণে লেখা

আছমান আইন্ধার কালা মেঘে
আইন্ধার পুরা ছহর,
এইরম দিনে গাঙ্গের ঘাটে
আইলো বাইদ্যার বহর।
বাদলা দিনে জুয়ান পুলা
গেলো গাঙ্গের ধারে,
ছুন্দর একখান বাইদ্যার ছেমড়ি
চউক্ষু টিপি মারে!
খেইপ্যা গিয়া জিগায় পুলায়
‘মতলব কি তর ছেড়ি?’
বাইদ্যার ঝি কয়, ‘রসিক নাগর,
আইতে করলা দেরি!’
ঠুট বেকাইয়া হাছে ছেমরি
চউক্ষে মুখে হাছি,
রকম ছকম দেইখ্যা মনে
ভিরমি খাইতে আছি।
বাইদ্যার ছেরি আউগ্যাইয়া কয়,
‘জুয়ান মরদ পুলা,
কুচার দ্যাছ থন ছিইখ্যা আইছি
একছ রকম খেলা।
আছমান পানে ছাড়মু দড়ি
ছূন্যেতে ভাছাইয়া,
লউর পাইরা উটমু দড়িত
দ্যাকবা খালি চাইয়া।
লুহার ছিকল বাইন্দা দিবা
আমার চিক্কন হাতে,
হেই ছিকলি উধাও করমু
চোউক্ষের ইছারাতে।
মন্তর পইড়া তুলা ধইরা
আনমু দাঁতের পুকা,
তেব্দা লাইগা গেলে বুজুম
তুমি মরদ বুকা।
আলাই বালাই জাইরা দিমু
আছে তোমার যত,
কদর বুইজা পয়ছা দিবা
তুমার খুছি মত।
কাল নাগিনীর কামড় যদি
খাইতে থাক রাজি,
ছিকর বাইট্টা বিছ নামানু
এইটা ধরলাম বাজি।’
‘রাখ মাতারি ছাপের খেলা
ভুজুং ভাজুং যত,
ফন্দি ফিকির জানি ছবই
দেখছি ম্যালা কত!
ফাউ প্যাচালি বাদ দা থুইয়া
দেখা আছল খেলা,
ছারা ছইলে আগুন জলে
আমি জুয়ান পুলা।
ভরা গাঙ্গে আইছে জুয়ার
উথাল পাথাল পানি,
ছেই পানিতে খেলাইতে চাই
রছের নাউ লৌড়ানি।
রাজি থাকলে নাউয়ে উঠা
দিমু ডুরির ছারি,
ভাতার কইলে ভাতে ভরব
তর খাইল্যা হাড়ি।’
আগুন জ্বলে ছেমরির চোউক্ষে
হাত লাড়াইয়া কয়,
‘জারিজুরি ছবই করি
ছইল্যের ব্যবছা নয়,
দশ ভাতারির ব্যাটারে তুই
মুখেতে তোর ঝাঁটা,
ছাহছ থাকলে খাড়াইয়া থাক,
আহুক বাইদ্যার ব্যাটা।
ছইল বেচলে বহুত আগেই
দালান বাড়ি দিতাম,
তর মত দছ কামলা
মাছ মাহিনায় নিতাম।
লজ্জা ছরম ভাছাই দিয়া
আইছো গাঙ্গের পাড়ে?
চিনছি তরে বজ্জাত পুরুষ,
চিনছি হাড়ে হাড়ে।’
ছাপের মত হিছ হিছ করে
হাতে লইয়া ঝাঁটা,
বাইদ্যার ছেমরির ছামনে খাড়ায়
কুন ছে বাপের ব্যাটা।
মানে মানে কাইট্টা পরে
বাড়ির রাচতা দরে,
বাইদ্যার ছেরির লাইগ্যা পুলা
আপছুছ খালি করে।
বাও বাগিচায় গুলাপ ফুটে
কত যত্নের পরে,
ইমুন ছুন্দর জংগইলা ফুল
ফুটলো বাইদার ঘরে!
জংলি ফুলের লাইগা পুলার
দিল দরপর করে,
ইচ্ছা করে গাঙ্গে ভাছে
কি আছে ছহরে?
জীবন হইল তামা তামা
বাইদ্যার ছেমরির রুপে,
ঘরে বইছা বেক্কল পুলা
কান্দে চুপে চুপে।