হযরত মুহম্মদের (স.) পবিত্র রওজা

হযরত মুহম্মদের (স.) পবিত্র রওজা

সীরাত: কেন পড়বেন, কী পড়বেন

নাজমুল হাসান

প্রকাশিত : অক্টোবর ২১, ২০২০

সাহাবি আমর ইবনে আবাসা (রা.) নবিজীকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কে?
নবিজী বললেন, আমি নবি।
আমর জিজ্ঞেস করলেন, নবি কি?
নবিজী বললেন, আমাকে আল্লাহ রিসলাতের দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন।
আমর আবারও জিজ্ঞেস করলেন, কী দায়িত্ব?
রাসুল (সা.) জবাবে দুটি বাক্য বললেন। প্রথমটি হচ্ছে, মানুষের মধ্যে পারস্পরিক হৃদ্যতা ও ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি করার জন্য। এরপর বললেন, তাওহিদ প্রতিষ্ঠার জন্য। (সহিহ মুসলিম)

আল্লাহ কুরআনে বলেন, আপনি যদি কোমল হৃদয়ের অধিকারী না হয়ে কঠোর হৃদয়ের অধিকারী হতেন, তাহলে আপনার পাশে কেউই থাকতো না।

নবিজী আসলে কেমন ছিলেন? নববি মিশন শুরু করে যিনি সমাজের সমস্ত প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন, যাকে হত্যা করার জন্য একের পর এক প্রচেষ্টা চালানো হলো। বন্দি করা হলো। যার অনুসারীদের নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। যার নিজের গোষ্ঠী তার বিরুদ্ধে দাঁড়ালো। যাকে দেশ থেকে একরকম তাড়িয়ে দেয়া হলো...

ভাবুন তো, মাত্র ২৩ বছরের ব্যাবধানে তার লক্ষ লক্ষ অনুসারী। আশপাশের সমস্ত সাম্রাজ্য তটস্থ এবং এরও অল্প কয়েকদিনের ব্যাবধানে পুরো পৃথিবীর একটা বড় অংশ তারই প্রতিষ্ঠিত রাজ্যের অধীন হয়ে গেল। যারা পরস্পর যুদ্ধ করতো, তাদেরকে তিনি বন্ধু বানিয়ে দিলেন। যারা অন্যায় অপরাধে বুঁদ হয়ে থাকতো, তারা একেকজন ন্যায়ের প্রতিবিম্ব হয়ে উঠলো।

মাত্র ২৩ বছর সময়। কোনো পৌরাণিক, প্রাগৈতিহাসিক ঘটনা নয়, সুস্পষ্ট ইতিহাস। কী এমন ম্যাজিক ছিল তার, যার কারণে আশপাশের পুরো পৃথিবী বদলে গেল? পৃথিবীর ইতিহাস নতুন বাঁক নিলো। পুরো পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম ঘটনা আর কোথায় আছে? মাত্র ২৩ বছরে একজন মানুষ লক্ষ মানুষের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক জীবন পর্যন্ত সমস্ত গতিপথ বদলে দিলেন। তিনি নবি ছাড়া আর কে? ঐশী শক্তির সাহায্য ছাড়া কে এমন করতে পারেন?

রাসুলের জীবনী উল্টাতে থাকলে প্রত্যেকটা পর্বে অপেক্ষা করবে চমক। যিনি বলে দিচ্ছেন, দাঁত কিভাবে মাজতে হবে, বসতে হবে কিভাবে, অন্যের ঘরে ঢুকতে হলে কী করতে হবে, অন্যের দোষ কতটুকু ধরা যাবে, যুদ্ধের মোকাবেলা ক্যামনে করতে হবে, স্বামী-স্ত্রীর আচরণ একে অন্যের প্রতি কেমন হবে, কেউ মারা গেলে তার সম্পদ বণ্টন কিভাবে হবে। আবার তিনি সবার সাথে মিলে কবিতা পড়তে পড়তে কাজ করছেন। আখিরাতের বর্ণনা দিচ্ছেন, আবার কিছু সময় পর হাসান ইবনে সাবেতকে মিম্বারে তুলে দেন, তারপর হাসানের চমৎকার কবিতা মনযোগ দিয়ে শোনেন। কখনো কখনো জাহেলি যুগের যেসব কবিতা অশ্লীল নয়, সেসব কবিতাও পড়ে শুনাইতে বলেন কাউকে।

রাসুল (সা.) সঙ্গীতও শুনতেন। ইবনে রাওয়াহা, আঞ্জাসা, আমের, সালামা— বেশ কয়েকজন সঙ্গীতকার ছিলেন তার। কাফেলার সাথে ফিরতে ফিরতে সঙ্গীত শুনে একদিন তো আঞ্জাসাকে বলে ফেললেন, আঞ্জাসা, দুর্বল নারী বেচারিদের দিকেও একটু দয়া দৃষ্টি রেখ। (জা`দুল মা`আদ)

নবিজী মজা করতেন। একদিন এক বৃদ্ধ নারীকে খুব গম্ভীর হয়ে বললেন, বৃদ্ধরা তো জান্নাতে যাবে না। নারী সাহাবি তো কেঁদেকেটে অস্থির। নবিজী হাসতে হাসতে বললেন, শোনো, তুমি যখন জান্নাতে ঢুকবে, তখন আর এরকম বৃদ্ধ থাকবে না।

নবিজী বাচ্চাদেরকে আদর করতেন, আর বলতেন, বাচ্চাদের প্রতি যার মায়া নাই, সে ক্যামনে আমার উম্মৎ হয়!

হয়তো যুদ্ধ থেকে এসেছেন, ঘরে এসে দেখছেন, আয়েশা তরকারি কাটছেন। রাসুল নিজের তরবারি নিয়েই বসে পড়লেন, নিজের তরবারি দিয়েই তরকারি কেটে আয়েশা আলাইহাস সালামকে সাহায্য করলেন। রাত্তির বেলা স্ত্রীদের নিয়ে ঘুরতে বেরুতেন। স্ত্রীকে নিয়ে কুস্তি দেখতে যেতেন। প্রতিযোগিতা করে নিজেই হেরে যেতেন স্ত্রীর অভিমান ভাঙাতে।

কোনো অস্থিরতা ছিল না নবিজীর। শুধু উম্মতের চিন্তায় রাব্বে করিমের দরবারে রাত্রির পর রাত্রি সিজদায় নির্ঘুম কাটিয়ে দিতেন। একেকটা সিজদা এত লম্বা হতো, আয়েশার মনে হতো— নবিজী বুঝি সিজদার মধ্যেই ইন্তেকাল করেছেন।

একজন মানুষ সব সামলাচ্ছেন, সংসার, ঘর, আত্মীয়-স্বজন, সাহাবি, নবুওতের দায়িত্ব, রাষ্ট্রের দায়িত্ব। যুদ্ধ করছেন। রাত জেগে জেগে ইবাদত করছেন, ক্লান্তি তাকে স্পর্শ করেনি কখনো। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা পড়ে তার অনুসারী দাবি করছি আমরা। যারা তাকে নিয়ে মিথ্যা বলছে, তারাও হয়তো তেমন কিছুই পড়েনি নবি জীবনী থেকে! কী আশ্চর্য!