সৈয়দ আলী আহসানের কবিতা

প্রকাশিত : জুলাই ২৫, ২০২১

কবি সৈয়দ আলী আহসানের আজ মৃত্যুদিন। ২০০২ সালের ২৫ জুলাই তিনি ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। ১৯২২ সালের ২৬ মার্চ মাগুরা জেলার আলোকদিয়া গ্রামে তার জন্ম। ছাড়পত্রের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য হিসেবে তার রচিত দুটি কবিতা পুনর্মুদ্রণ করা হলো:

দেশের জন্য

কখনও আকাশ
যেখানে অনেক
হাশিখুশি ভরা তারা,
কখনও সাগর
যেখানে স্রোতের
তরঙ্গ দিশাহারা।

কখনও পাহাড়
যেখানে পাথর
চিরদিন জেগে থাকে,
কখনও-বা মাঠ
যেখানে ফসল
সবুজের ঢেউ আঁকে।

কখনও-বা পাখি
শব্দ ছড়ায়
গাছের পাতায় ডালে
যেসব শব্দ অনেক শুনেছে
কোনও এক দূর কালে।

সব কিছু নিয়ে
আমাদের দেশ
একটি সোনার ছবি
যে দেশের কথা
কবিতা ও গানে
লিখেছে অনেক কবি।

এ দেশকে আমি
রাত্রি ও দিন
চিরকাল ভালবাসি
সব মানুষের ইচ্ছার কাছে
খুব যেন কাছে আসি।

এ দেশকে নিয়ে
আমার গর্ব
প্রত্যহ চিরদিন,
দেশের জন্য
সবকিছু দিয়ে
বাঁচব রাত্রিদিন।

আমার পূর্ববাংলা

আমার পূর্ববাংলা একগুচ্ছ স্নিগ্ধ
অন্ধকারের তমাল

অনেক পাতার ঘনিষ্ঠতায়
একটি প্রগাঢ় নিকুঞ্জ

সন্ধ্যার উন্মেষের মতো
সরোবরে অতলের মতো
কালো কেশ মেঘের সঞ্চয়ের মতো
বিমুগ্ধ বেদনার শান্তি
আমার পূর্ববাংলা বর্ষার অন্ধকারে
অনুরাগ
হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া
সিক্ত নীলাম্বরী

নিকুঞ্জের তমাল কনকলতায় ঘেরা
কবরী এলো করে আকাশ দেখার
মুহূর্ত
অশেষ অনুভূতি নিয়ে
পুলকিত সচ্ছলতা
এক সময় সূর্যকে ঢেকে
অনেক মেঘের পালক
রাশি রাশি ধান মাটি আর পানির
কেমন নিশ্চেতন করা গন্ধ
কত দশা বিরহিণীর— এক দুই তিন
দশটি
এখানে ত্রস্ত আকুলতায় চিরকাল
ঘর আর বিদেশ আঙিনা
আকুলতায় একাকার
অভিসার

তিনটি ফুল আর অনেক পাতা নিয়ে
কদম্ব তরুর একটি শাখা মাটি
ছুঁয়েছে
আরও অনেক গাছ পাতা লতা
নীল হলুদ বেগুনি অথবা সাদা
অজস্র ফুলের বন্য অফুরন্ত
ঘুমের অলসতায় চোখ বুজে আসার মতো
শান্তি
কাকের চোখের মতো কালোচুল
এলিয়ে
পানিতে পা ডুবিয়ে—রাঙা–উৎপল
যার উপমা
হৃদয় ছুঁয়ে–যাওয়া সিক্ত নীলাম্বরীতে
দেহ ঘিরে
যে দেহের উপমা স্নিগ্ধ তমাল—
তুমি আমার পূর্ববাংলা
পুলকিত সচ্ছলতায় প্রগাঢ় নিকুঞ্জ।