বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প ‘মৌরীফুল’
অন্ধকার তখনও ঠিক হয় নাই। মুখুজ্জে-বাড়ির পিছনে বাঁশবাগানে জোনাকীর দল সাঁজ জ্বালিবার উপক্রম করিতেছিল। তাল-পুকুরের পাড়ে গাছের মাথায় বাদুড়ের দল কালো হইয়া ঝুলিতেছে- মাঠের ধারে বাঁশবাগানের পিছনটা সূর্যাস্তের শেষ-আলোয় উজ্জ্বল। চারিদিকে বেশ কবিত্বপূর্ণ হইয়া আসিতেছে
জানুয়ারি ৩০, ২০১৯
জালালি খতম
ভোর হতে না হতেই বিবি সকিনার বাড়ি হতে কুরআন তেলাওয়াতের শব্দ আসছে। সাতজন মৌলানা একসাথে কুরআন খতমে বসেছেন। সবাই মিলে সত্তুর বার কুরআন খতম করবেন আছর আযানের আগেই। তারপর আছর থেকে মাগরীবের ওয়াক্ত পর্যন্ত জায়নামাযে বসে বিবি সকিনার পাপমুক্তির দোয়া করবেন সাত মৌলানা।
জানুয়ারি ২৯, ২০১৯
তখন সবাই বিস্রস্ত ছিল
চলেই তো যাচ্ছিল জীবনখানা, মামুনের। গতকালও বলা যেত সে চাইলে অভীষ্ট গর্তে গিয়ে পড়বে তার ছুঁড়ে দেয়া মার্বেল, যে-কোনো তবলাবাদকের আঙুল ও করতলে কাহারবা শুরু হলে শেষ না হওয়া পর্যন্ত এর মধ্যে যে ঢুকে পড়ে না অন্য কোনো তাল, গতকাল পর্যন্ত তো তাই ছিল। অন্তত কোনো ঘটনা ছিল না।
জানুয়ারি ২৮, ২০১৯
রোকসানা দরোজা খুলছে না
বিয়ের পর কলাবাগানে ছোটো ফ্ল্যাটে রোকসানা আর আমি সংসার পাতি। ফ্ল্যাটের দরোজা ছিল বেশ সুন্দর। কাঠের দরোজা। কারুকাজ করা। আমরা ডোরবেল লাগালাম। সেটির উপরে রোকসানা একটি স্টিকার লাগালো। তাতে লেখা, ‘ডাক দিয়ে যাই’। আর দরোজার ভেতরের অংশে আবিমাল গুজম্যানের কারাবন্দি একটি পোস্টার।
জানুয়ারি ২৭, ২০১৯
যত ক্ষত যত ক্ষতি
জাহিদ হঠাৎ অনভ্যস্ত কণ্ঠে গলাখাকারি দিয়ে সমবেত উপস্থিতির দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করল। তরপর সরাসরি ধান ভানা বাদ দিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে শীবের গীত গেয়ে যা বোঝালো তার মমার্থ অনেকটা এরকম: আজকের রাতটা অন্তত অপেক্ষা করা যাক। তারপর আগামীকাল অবস্থা বুঝে চূড়ান্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
জানুয়ারি ২৫, ২০১৯
আবু তাহের সরফরাজের দরবেশি কিস্সা
বড়পির আব্দুল কাদের জিলানি তখন যুবক। পথ চলতে চলতে একদিন হঠাৎ থমকে দাঁড়ালেন। সৌন্দর্যের বিস্ময়কর ছটায় তিনি হতচকিত। শিরশির কাঁপুনি টের পেলেন রক্তের কোষে কোষে। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে এক যুবতী। মুচকি হাসি তার ঠোঁটে। হাসি ছড়ানো এই ঠোঁটের জীবন্তদৃশ্য হৃদয় চিরে দেয়ার মতো।
জানুয়ারি ২৪, ২০১৯
হিজরা
জন্ম হল নীলাভ্রের। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় আকাশের নীল সম্পূর্ণ দৃশ্যমান। নীলাভ্রের নাম বড় সমারোহ করে। বংশের একমাত্র ছেলে, বংশপ্রদীপ। ছোট্ট নীল সবার আদরের ছিল। তার আগে বলার দরকার, নীলাভ্রকেই সকলে নীল বলে ডাকত। নীল ছিল শান্ত স্বভাবের। সমবয়সী অন্যান্য ছেলেদের মতো সে দুরন্ত ছিল না।
জানুয়ারি ২৩, ২০১৯
ইগো
বেবিট্যাক্সিওয়ালা কোনো কথা না বলে চালিয়ে যেতে থাকে। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, বৃষ্টির কারণে ইলেক্ট্রিসিটি চলে গিয়েছে। ঝম ঝম করে প্রচণ্ড বৃষ্টি আর কোথাও বাজ পড়ার আওয়াজ। স্বামীবাগের গলিটা জনশূন্য, কেউ নাই রাস্তায়। পাড়ার দোকানটাও বন্ধ করে মুদিওয়ালা ঘুমে কাতর।
জানুয়ারি ২১, ২০১৯
ছঁ`ছি
কলতলায় অন্য যারা পানি নিতে আসতেন তাদের বেশিরভাগই ছিল হিন্দু পরিবারের। ঝর্নাদির প্রতি অজানা এক টানে কিছুটা কাছে এগিয়ে গেলে কলতলায় আসা অন্য দিদি-মাসিদের গল্পে শুনতে পেতাম, দূর-দূরান্তের কোনো এক রাজকুমার ঝর্নাদির বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।
জানুয়ারি ১৭, ২০১৯
স্বামী
জমিলার মন আন্ধার হইয়া আসে। একমাত্র পোলা সামছুর লিগা বাপ-মা মরা এই এতিম মাইয়ারে পছন্দ হইছিল তার। আট বছর আগের কথা, পরীর মতো সুন্দর আবার নামও পরী। কেন যে রূপ দেইখা চোখ ঝলসায়ে গেল আল্লায়ই জানে। পরে দেহা গেল, এই মাইয়ার বাচ্চা হয় না, শেষে কত ডাক্তর কবিরাজ দেখাইয়া এই নাতি।
জানুয়ারি ১৪, ২০১৯

























