শামীমা জামানের গল্প ‘সোনার পুতুল’

রাতের হাওড়ার জিটি রোড। তখন খুব বেশি হলে এগারোটা বাজে। কোলাহলের শব্দ না থাকলেও, রাস্তায় তখনও দু’একটা গাড়ি চলাচল করছে। রাতের নিশাচররাও তখনও বেরোতে শুরু করেনি।

জানলাটা অনেক পুরোনো। এই `অনেক` শব্দটা আসলে কিছুই বোঝায় না। কত পুরোনো হলে একটা জিনিসকে `অনেক` পুরোনো বলা যায়? এইসব বিশেষণ যা সত্যিই কিছু বোঝায় না, আমাদের ব্যবহার করতে হয়, আর তখনি বোঝা যায়, আমাদের ভাষা—  মানুষের ভাষা— কত পঙ্গু।

জানলার পাশে বসে আছে রোকসানা। গম্ভীর চেহারায় হাতে কফির মগ নিয়ে চিন্তায় মগ্ন। কাঠঠোকরা বাসা বাঁধার উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পেয়েছে হয়তো। এক তালে ঠুকে যাচ্ছে পুরানো চৌকাঠে। রোকসানা তাকিয়ে আছে। কালো চুল তার উড়ছে সূতোর মতো দিকবিদিক।

রিপা খাতুন খিলখিল হেসে ওঠে। এরপর দু’হাত বাড়িয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরে। বলে, বেশ তো। তবে খুন হয়ে যাও। এসো, আমি তোমাকে খুন করব। তুমি আমাকে খুন করতে পারবে না।

আগন্তুক ঝুম বৃষ্টি যখন গগনের বুক চিরে ধরণীতে এসে বৃষ্টির ফোঁটা হয়ে পৃথিবীকে স্পর্শ করে, তখন শাশ্বত সময়ের জন্য প্রতিটি জীবকণা স্বস্তিকা অনুভব করে! আর, সে সাথে আজকের অম্যাবসা রাতের বৃষ্টি কেন জানি শুভ্রকে অক্সিজেনের অনুভব করাচ্ছে! গড়পততায় থাকা বেশ প্রস্থত বারান্দায় বসে মৃদু আওয়াজে রবীন্দ্রসংগীত শুনছিল শুভ্র

আমার ঘরে এই রূপ তো রূপীর জোড়েই। কিন্তু মজিদ ভাই, রূপী দিয়ে রূপ কেনা যায় মনটাতো যায় না। ৫ মাস ১৬ দিন হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে। তবে লাখ টাকা বাজি ধরে বলতে পারি এই এতদিনের মধ্যে ৫ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের জন্যও অনন্যা পুরোপুরি আমার হয়নি

কাউকে বলার সাহস পাচ্ছিলাম না, তাই সাহস করে তোকে বলেছি।.....আমার খুব ভয় করছে, শুভ্র...!” বলতে বলতে কেঁদে ফেলে শুভ্রা, চোখ থেকে অনবরত টপটপ ফোঁটায় মুক্তার মতো ঝরঝরে অশ্রুকণা বেরিয়ে আসে থাকে।

হঠাৎ বৃষ্টি নামার মতো রটে গেল খবরটা। একদল লোকের নাকি অচেনা একটা ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। এখন তারা যাকে সামনে পাচ্ছে, তারই ঘাড় কামড়ে ধরে শরীর থেকে নিচ্ছে মাংস, শিরা থেকে রক্ত আর পকেট থেকে টাকা-পয়সা।