শামীমা জামানের গল্প ‘সোনার পুতুল’

তিনপায়া একটা কাঠের টুলে ফজু মিয়া বইসা। এক হাতে সইষ্যার তেলের শিশি আর অন্য হাতের আঙ্গুল একবার কানের ফুটায়, আরেকবার নাকে আবার আরেকবার নাভিতে গোল গোল ঘুরাইতাছে। ভাঙা টুলে ব্যালেন্স রাইখা কাজগুলি করা খুব কঠিন। বিলকিস তাকায়া দেহে তারে। ভোর রাইতে এই বেডারে স্বপ্নে দেখছে সে।

দরজা খুলেই অবাক হয়ে গেলেন নীহারিকা। বিতান দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশে বিহারি রিকশাওলার মাথায় হোলড-অল, ব্যাগ ইত্যাদি। তিন বছর পরে বিতান আবার এল। অথচ এই ক`বছরের ব্যবধানে তাকে বড়ো বয়স্ক মনে হচ্ছে, যেন বিতান তিন হাজার বছর পেরিয়ে এসেছে।

শিস দিয়ে একটা সুর ভাঁজছি। অনেকক্ষণ পর খেয়াল করলাম, হায়রে, চরণ ধরিতে দিও গো আমারে, নিও না সরায়ে! একটাই আশার কথা সুরটা তুলতে পারিনি। অরা আর আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। ইংলিশে। অনার্স হয়ে গেছে। সামনে মাস্টার্স পরীক্ষা। মানে আমাদের বয়স পঁচিশের আশপাশে।

আলাদা আলাদা সত্য প্রতিষ্ঠায় সমস্যা আছে। মানুষ তার নিজের মতো করে সত্যের সন্ধান করার অধিকার হারাচ্ছে। এক একটি ধর্মমতের অনুসারীরা তাদের ধর্মগুরুর দেখানো পথেই জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে। অথচ তারা নিজেরাও যদি সত্যের অনুসন্ধান করত তবে মানুষ জাতি একদিন পরিপূর্ণ সত্য আবিষ্কার করতে পারত।

তার দিনটা আজ কেয়ামতের চেয়েও কঠিন। বিষাদ। এর চেয়ে বিষাদময় আর কোনো দিন নাই। নিজেকে তার মনে হচ্ছে, পৃথিবীর সবচেয়ে খারাপ মা। সারাদিন অফিসের ধকল শেষে সব সময় সে চাইত একটু প্রশান্তি। আর এ প্রশান্তির জন্য গা বেয়ে ওঠা দুরন্ত অবন্তিকাকে সে কতই না ধমক দিয়েছে। আহারে! আমার সোনার পুতুল!

চৈত্রের শেষ দুপুর আজ। কেমন যানি একটা ঘুমঘুম ভাব পেয়ে বসে শতরুপাকে।

আল্লাহর দেয়া সবকিছুরই যাকাত আছে। আত্মার যাকাত হচ্ছে চিন্তা করা। জ্ঞানী মানুষ নির্জনে থেকে এ যাকাতই আদায় করে। লোকজনের ভেতর থেকে সে আত্মার মুখোমুখি হতে পারে না। আত্মার গহীন সমুদ্রে ডুব না দিলে চিন্তার মনিমানিক্য আপনি কীভাবে খুঁজে পাবেন?

আগের দিনের বাচ্চাদের একটি টেডিবিয়ার ধরিয়ে দিলেই হতো। এখন দিন পাল্টেছে। জ্যান্ত জিনিস চাই এখন তাদের। যেগুলো কিনা লেজ নাড়িয়ে নাড়িয়ে পেছনে পেছনে ঘুড়বে। মাঝে মাঝে মিঁউ মিঁউ, ঘেউ ঘেউ করে ডাকবে। জিভ দিয়ে চেটে চেটে আদর করবে আর রাত হতেই পেটের ভেতর ঢুকে ঘুমিয়ে যাবে। ব্যাটারি লাগবে না।