শামীমা জামানের গল্প ‘সোনার পুতুল’

শরিফের দোকানে যারা চুল কাটাতে আসে, তারা দ্যাখে, গোটা কয়েক দূর্গার ছবি ঝোলে ওর দোকানে। আছে গণেশের ছবিও। যিনি কিনা ব্যবসার সমৃদ্ধির প্রতীক। লোকে অবাক হয়, আজকাল অনেকেই জানে এ দোকান শরিফের। শরিফ হাসে। সে যখন ধীরেনের কাছ থেকে দোকান ভাড়া নেয়, ছবিগুলো তখনকার।

লুবনা আপু আমাকে একদিন ডেকে নিয়ে বলছিলেন, শোন, পাঁচটা টাকা চাস? আমি বলছিলাম, চাই। লুবনা আপু বলছিলেন, এক শর্তে। রাশিদের বাসা চিনিস না? আমি হ্যাঁ চিনি তো বললে মাত্র বগলের চিপা থেকে বের করে তিনি আমাকে একটা ম্যাগাজিন দিয়ে বললেন, খবরদার ভাঁজ খুলবি না

রাতে শিরশির হাওয়া বইতে লাগল। আর গোলগাল চাঁদ উঠল বাঁশবাগানের মাথার ওপর। ছায়াবীথি খাটে ঘুমোচ্ছে। ঘরের ও বাইরের বাতি নেভানো। চাঁদের থই থই আলো উঠোনে। হাঁ করে খুলে রাখা দরজা। চৌকাঠের ওপর মাথা রেখে চিৎ হয়ে রিপা শুয়ে আছে। ওর বুকের ওপর শুয়ে আছি আমি।

পাহাড় তাকে কখনও ভালোবাসেনি। কিন্তু সে বেসেছিল। পাহাড়ের মধ্যে থাকা পশুপাখি আর মানুষ। পাহাড়ের মধ্যে সে প্রথম দেখেছিল মালতিকে। বিয়েও হয়েছিল তাদের। আর মালতি বিয়ের পরদিন উধাও হয়ে গ্যালো। পাহাড়ে মিলল তার লাশ, অক্ষত, যেন ঘুমিয়ে পড়েছে মালতি

গভীর রাত। চানখার পুলের রাস্তায় কয়েকটা ককুর শুয়ে আছে। দূরে কোথাও দু’একটা গুলি ফোটার আওয়াজ শোনা গেলে। রাস্তার কুকুরগুলো হঠাৎ সচকিত হয়ে শুরু করে দিল ত্রাহি ডাক। ঢাকার অল্পকিছু কুকুর এখনও জীবিত। তাই বলতে হবে, এই কুকুরগুলো ভাগ্যবান।

ভালো লাগার জন্য তাকে অনেক কিছু করতে হয়। যেমন মাঝে মাঝে সে ফার্মেসি থেকে ডিসপোজেবল সিরিন্জ কিনে আনে। সিরিন্জ দিয়ে সে তার নিজের রক্ত বের করে ফেলে দ্যায়। নিজেকে কষ্ট দিতে তার ভালো লাগে।

সজল রুহিকে ভালোবাসতে চায়। যদিও সজল তখনো নিশ্চিত নয়, এ ভালোবাসা অথবা ভালোবাসতে চাওয়া তাৎক্ষণিক, না অনেক দিনের জন্য। সজলের এই ভালোবাসতে চাওয়া রুহির প্রতি প্রথম কিংবা একমাত্র নয়। কিন্তু আমরা বুঝে যাই রুহির প্রতি জন্মানো এ অনুভূতি দীর্ঘস্থায়ী।

সে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি বোধহয় ভালো নেই। বলেছিলেন বৃষ্টি হলে আপনার মন ভালো থাকে না। তাই খবর নিলাম।’ নীলাঞ্জনা এবার অবাক হয়। এই সামান্য কথা, সামান্য এ কথা কারও মনে রাখার মানে কি?