‘আগিলা যুগের আয়ু’ বর্তমানের কণ্ঠে অনাদিকালের ঘোর

আব্দুল্লাহ আল মুক্তাদির

প্রকাশিত : জানুয়ারি ০৪, ২০২১

মেহেদী উল্লাহর গল্পগ্রন্থ ‘আগিলা যুগের আয়ু’ অনায়াসে বর্তমানের কণ্ঠে কাহিনি তুলে দিয়েছে। তারপর ‘আগিলা’ যুগের সুর বসিয়ে তৈরি করেছে অনন্য সব ঘোর। ‘জামাই রাষ্ট্রপতিরে জিতাইতে গেছে’—গল্পে গল্পে পরিচয় হওয়া এই জামাইয়ের বউ বিলকিসের সাথে আমরা অনাদিকালের অথচ অতি আধুনিক এক ঘোরে ঢুকে যাই। সেই ঘোর যখন ভোরের আলোয় কাটতে থাকে, আমাদের শূন্য লাগে, চারদিকে নিরন্তর বিলাপ শুনি।

আবার কখনো কখনো ‘আগিলা’ যুগের গলায় আমরা বর্তমানের স্বর শুনতে পাই। চিরদিনের নদী তাড়া করে আজকের যুগের চলচ্চিত্রের নায়িকাকে। পূর্বপুরুষের পুরনো কবর তাকে জীবনের পর্দায় আরো একবার উজ্জ্বল করে তোলে।

এই বইয়ের চরিত্রগুলো হয়তো আমাদের চারপাশের সাধারণ কেউ, কিন্তু তাদেরও অনবদ্য অসাধারণ জীবন। যেমন, এক পর্যায়ে আমাদের দেখা হয় ‘রুমানার দাদি’র সাথে। এক শক্তপোক্ত বুড়ি। ‘নব্বই বছর বয়সেও হাতে লাঠি ওঠে নাই’। একজন ‘ফরমিডেবল মেট্রিয়ার্ক’ হয়ে ওঠার জন্যেই হবে হয়তো—সে চারপাশে এক মিথ্যা জগৎ তৈরি করে সবাইকে বাধ্য করে সত্য ভুলে যেতে।

এরপর ভুলে ফেলে রাখা ছাই থেকে আগুন জ্বলে ওঠে। এবং তিনজন বিধবার ‘শীত-বসন্ত’ ঘুরে, বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় পৌঁছানোর পর অবশেষে বুঝতে পারা যায়—বইয়ের চরিত্রগুলোর যে চলাচল, কাহিনি-কথায় যে জোয়ার-ভাটা—সবকিছুর মূলে আসলে রয়েছে একজন স্বতন্ত্র গল্পকথক, আর তার বলার অন্যরকম ঢঙ।

‘আগিলা যুগের আয়ু’ মেহেদী উল্লাহর ষষ্ঠ গল্পগ্রন্থ। বইটি প্রকাশ করেছে ‘বৈতরণী’। প্রচ্ছদ এঁকেছেন রাজীব দত্ত। মূল্য দুশো টাকা।  

যেন পায়ের ওপর হালকা রোদ নিয়ে চায়ের দোকানে বসে আছি। সামনে ঘোলা জল। আর আমাদের গল্পকার একের পর এক ডুবে যাওয়া, ভেসে ওঠা মানুষদের গল্প বলে চলেছেন। আমরা আরাম করে শুনে যাচ্ছি। কোথাও কোনো ‘প্যারা নাই’! মাটির চুলা থেকে ওঠা ধোঁয়ার সাথে তাল মিলিয়ে তার শব্দগুলো মৃদুমন্দ দুলছে।

লেখক: কবি ও গল্পকার

একুশে বইমেলা ২০১৮