আন্ডারগ্রাউন্ড

উপন্যাস ৫

রিফাত বিন সালাম

প্রকাশিত : ডিসেম্বর ১৭, ২০১৮

দুপুরে মামুনের আর খাওয়া হলো না। জরুরি কাজে তাকে মন্ত্রী সাহেবের অফিসে যেতে হবে। ডাক এসেছে। যাওয়ার আগে তোফাজ্জলকে বলল, আমি কাজে বের হচ্ছি। আপনি কি করবেন? তোফাজ্জল বললো, আমি তাহলে ঘুরে আসি স্যার। সন্ধ্যায় এক সাথে ইফতার করবো।

মামুন আচ্ছা বলে বেরিয়ে গেল। তোফাজ্জল আরেকটা সিগারেট ধারলো। দীনেশ দরজার বাইরে থেকে দেখছে। সে অবাক হচ্ছে। ইদানীং যা হচ্ছে তা বড়ই অদ্ভুত। দুনিয়াটা অদ্ভুত লাগছে দীনেশের কাছে।

মামুন বসে আছে মন্ত্রীর সামনে। স্পেশাল ফোর্স মিনিস্টার কাদের খান। আসলে উনাকে বিশেষ কিছু ক্ষমতা দিয়ে একটা মন্ত্রণালয় বানানো হয়েছে, উনিই সেই বিশেষ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। এর আগে এদেশে এমন মন্ত্রী আগে কেউ হয়নি। দশ বছরে দেশের গ্রাম অঞ্চলে মাওবাদীদের ব্যাপক আনাগোনা বেড়েছে। দেশি-বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শে এই মন্ত্রণালয় খুলেছে সরকার। কাদের খান অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মাওবাদীদের দমন করেছেন। কারণ উনিও এক সময় একটা মাওবাদী পার্টির নেতা ছিলেন। পরে সরকারের জোটে যোগ দিয়েছেন।

মামুনের মতে, কাদের লোক ভালো তবে মহা ভণ্ড। ভালো কারণ কাদের মামুনকে খুবই স্নেহ করে। আর ভণ্ড কারণ, যে লোকটা এতদিন মাওবাদী ছিল, সে হুট করেই সরকারের সাথে জোট করে মন্ত্রী হয়ে গেল! কথায় কথায় মিথ্যা বলে যাকে তাকে ছাগল বানিয়ে দিতে পারে লোকটা।

মামুন কমরেড মাওয়ের দর্শন পড়েছে। তার ভালোই লাগে মার্ক্স-মাওকে। কিন্তু মামুন জানে না, কিভাবে সমাজে অমন একটা পরিবর্তন হবে। এসব ভাবলে তার মাথা ঘোরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাই মামুনকে প্রায় বলতো, জানো মামুন, মার্ক্স আসলে মানুষ না, মার্ক্স একটা সুপার কম্পিউটার। পুরো দুনিয়ার সব তথ্য নিয়ে মার্ক্স হিসেব-নিকেশ করে একটা তত্ত্ব দিলো। যে তত্ত্ব মানুষকে মুক্তি দেবে। কিন্তু আমরা ভোদাই, আমরা মুক্তি চাই না।

মামুনেরও তাই মনে হয়ে মার্ক্স পড়ার পর। তবে সে কোনোকালেই এসবে যুক্ত হয়নি। পড়াশোনা আর চাকরির চাপে এসব নিয়ে অত ভাবার সময় সে পায়নি।

তারপর তোমার কি খবর বলো?
এই তো স্যার, ভালো চলছে।
তোমাকে ডেকেছি এমনি, কোনো কাজ নাই। দুপুরে তো খাও নাই এখনো? খাবার আসছে। এক সাথে খাবো। তারপর আবার একটা মাহাফিলের প্রোগ্রাম আছে। ওখানে আবার হুজুর-টুজুর আছে। ওদের সামনে বলা যাবে না যে রোজা নাই। হা হা হা...
স্যার একটা কথা ছিল।
বলো কি কথা?
তোফাজ্জল নামের এক লোককে আমরা গ্রেফতার করেছি আজ সকালে। আপনার বাড়ির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছিল দিন কয়েক ধরে। ওকে জিজ্ঞেসবাদ করার পর বলছে, আপনার নাকি বিপদ তাই আপনাকে সাবধান করতে এসেছিল। কি বিপদ সেটা বলেনি। কিছুটা পির টাইপ কেস, মানে ভাগ্য গণনা।
বলো কি! এইটা আবার কোন পাগল? শালার পিঠের ছাল তুলে দিতে পারলে না? ফাজলামি আর জায়গা পায় না।

মামুন কী বলবে বুঝছে না। পিঠের ছাল তো পরের কথা, লোকটাকে তো তুই বলাটাই কঠিন মামুনের জন্য। সে কাদেরকে আর কিছু বললো না। চুপ করে বসে থাকলো। কাদের সিগারেট জ্বালিয়ে টান দিলো। তারপর বললো, অবশ্য পির জিনিসটা ইন্টারেস্টিং। এককালে সুফি সাধনা নিয়ে অনেক পড়েছিলাম। যদিও সুফি আর এই আমলের পির ফকিরের মধ্যে ফারাক আছে। এই ব্যাটারা বাটপারি করে। তা এই পির কোথায় এখন? থানায় আটক?
না স্যার, উনি ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যায় থানায় আসবেন আবার। আমার সাথে ইফতার করবে বলেছে।
কাদের চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে মামুনের দিকে। মামুনকে দেখতে ছাগলের মতো লাগছে। মামুনের কান বড় বড়। আগে কখনো এভাবে খেয়াল করা হয়নি। মামুনের চেহারার সাথে ছাগলের চেহারার অনেক মিল!

চলবে