
আন্ডারগ্রাউন্ড
উপন্যাস ৬
রিফাত বিন সালামপ্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৯
কাদেরের ইচ্ছা করছে ব্যাটাকে এক থাপ্পড় দিয়ে চারটা দাঁত ফেলে দিতে। কিন্তু সেটা পারছে না, এই পুলিশকে সে খুব স্নেহ করে। হাসি মুখে বলল, আচ্ছা তোমার পির ঘুরেফিরে আসুক আবার। আমাকে সাথে সাথে ফোন করবে একটা। উনার সহিত আমি মোলাকাত করতে থানায় যাব।
মামুন একটু ঘাবড়ে গিয়ে বলল, ‘আচ্ছা স্যার।’ সে জানে, এই লোকটা আস্ত হারামি। এরা হাসি মুখে ক্ষতি করে মানুষের। সন্ধ্যায় তোফাজ্জল এলেই কাদেরকে একটা ফোন করতে হবে। মন্ত্রীর হাতে ওকে তুলে দিতে হবে। এসব বিরক্তিকর ঘটনার মধ্যে থাকা যাবে না।
রাত ৯টা বেজে ৩৭ মিনিট। মামুন টেনশনে সিগারেট টানছে। ঠিক ১০টায় তার কাছে একটা ফোন আসবে। কাদেরের ফোন। কাদের ওপাড় থেকে খুব মিষ্টি গলায় বলবে, কি খবর মামুন? ডিনার করেছ? শরীর ভালো? তারপর বলবে, তোমার পির বাবার কি খবর? এখনো আসেন নাই উনি, তাই না? আসলে কামেল ব্যক্তি তো তাই হয়তো কোথাও ধ্যানে বসে গেছে কিংবা হয়তো মুরিদদের জ্ঞান দিচ্ছে। আচ্ছা রাখি, তুমি ঘুমাও আরামে। রাখি হ্যাঁ? শুভরাত্রি...
মামুন জানে, তোফাজ্জল তাকে বোকা বানিয়েছে। লোকটা আর আসবে না। তাকে ফাঁসানো হচ্ছে না তো! মন্ত্রীর কাছের লোক হওয়ায়, তার উপর অনেকের রাগ আছে।
এক প্যাকেট সিগারেট শেষ। আরো সিগারেট লাগবে। কাউকে দিয়ে আনালেই হয়। কিন্তু মামুন নিজেই বের হলো। সে ঠিক করল, এক কাপ চা খাবে। এরপর একটা সিগারেট ধরাবে। এরপর একটা রিকশা ভাড়া করে ঘুরবে। ঘোরাঘুরি করলে মাথা হালকা হবে। তোফাজ্জল মালটাকে এত সহজে ছাড়া যাবে না। শুরোরের বাচ্চা পুলিশের সাথে ফাজলামি করে। এত সাহস!
মামুন চা-সিগারেট একসাথে নিলো। সিগারেট জ্বালিয়ে তারপর চায়ে চুমুক দিলো। সামনে একদল ছেলে আড্ডা দিচ্ছে দোকানে। ওরা সম্ভবত কোনো বন্ধুর সমালোচনা করছিল। মামুনকে দেখেই ওদের কথা আস্তে হয়ে গেল। সম্ভবত ভয় পেয়েছে। পুলিশ দেখলে এদেশে মানুষ ভয়ে কুকড়ে যায়। এই পাবলিকই কি ৫২, ৭১ এর মতো ঘটনা ঘটিয়েছে! মামুন মাঝে মাঝে এসব নিয়ে অবাক হয়।
১০টা বেজে গেছে। ঠিকঠাক নিয়ম মেনে ফোন এলো। ওপাড় থেকে কাদের বললো, কি খবর মামুন? ডিনার করেছ? শরীর ভালো?...
জ্বী স্যার ভালো আছি। ডিনার করবো একটু পরেই।
কাদের স্নেহময় সুরে বলল, আহা, রাতের খাবার ১০টার মধ্যে খাবে। লেট করবে না। তোমার এত অনিয়ম করো না। ধুর, এসব অন্যায়। অন্যের উপর অন্যায় করা যায়, নিজের উপর অন্যায় করা মহাপাপ।
আচ্ছা স্যার, নিজের উপর আর অন্যায় করবো না।
ভেরি গুড। তা, তোমার পির বাবা এসেছেন?
মামুন খুব আত্নবিশ্বাসের সাথে বলল, হ্যাঁ স্যার। উনি আমার সামনেই। আমরা একসাথে চা খাচ্ছি।
কাদের কথাটা শুনে একটু ধাক্কা খেল। হতাশ গলায় বললো, ভেরি গুড, ভেরি গুড। আচ্ছা উনাকে নিয়ে ডিনার টিনার করো। আমি ১১টা নাগাত বাড়ি ফিরবো। উনাকে নিয়ে সাড়ে এগারোটায় আমার বাড়িতে আসো। এই বলে ফোনটা কেটে দিলো।
মামুন চায়ে আরেকটা চুমুক দিলো। তার চোখ তোফাজ্জলের দিকে। লোকটা কোন ফাঁকে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা বুঝতেই পারেনি মামুন। কিন্তু একটা অদ্ভুত বিষয় লক্ষ্য করল সে। লোকটা একটা পাঞ্জাবি পড়ে এসেছে, এখন শরীর থেকে ভুড়ভুড় করে আতরের গন্ধ আসছে। ভয়াবহ গন্ধ। মাথা ঘুরছে গন্ধে...
চলবে