আমাদের পুশকিন নেই, আছে আবু তাহের সরফরাজ

এস এম তুষার

প্রকাশিত : জুন ২৩, ২০২০

যেমন ধরুন, পুশকিন তার ডন যুয়ানকে দিয়ে অনেক কিছু বলাতে পারতেন, বিশেষত মৃত্যু যখন শেষবারের মতো আলিঙ্গন করে ডন যুয়ানকে। সে তখন এসব বলতে পারতো— না না, আমি যাব না, আমি যেতে চাই না, এই আন্দালুসিয়ার হাওয়া স্পেনের উপকূল আধো আলো অন্ধকারে রয়ে যাওয়া পীরেনীজ পর্বতকে রেখে আমি কোথায় যাব? কোথাও যাব না...

হ্যাঁ, তবে সে মানে ডন যুয়ানকে মৃত্যু একটা কথা বলেছে, বলেছে যে— মৃত্যু যখন অতিথি হয়ে আসে তখন ঈশ্বর তার যবনিকার অন্ধকারে সব কিছু আড়াল করে দেয়.... আমাদের তো পুশকিন নেই, আছে আবু তাহের সরফরাজ।

বলো তো নীলিমা, পৃথিবীর সীমা কোথায় গিয়েছে ঠেকে?
তারও ওইপাড়ে জগতের ছবি দেখাও তো কিছু এঁকে।

আবু তাহের সরফরাজ কাকে জিজ্ঞাসিল? নীলিমাকে? সে তবে কে?  উত্তর নেই, বইয়ের শুরুতে কিছু কথা লেখা আছে—

নীলিমা খাতুন কে, বলিতেছি শোনো
আসলে তাহার রূপে দেহ নেই কোনো!

কবি আবু তাহের সরফরাজ অনেক কিছু না বলে কত কিছু বলে গেলেন! তার কয়েকটা কথা বড় বেশি কানে বাজে—

রাত্তিরে চাদ ওঠে গোলগাল
মুগ্ধতা ছড়িয়ে তা দেখো কাল
আজ যাও বাজারে এই নাও ব্যাগ।

ব্যাগ হাতে সে বাজারে যেতে বলেছে জীবনানন্দ দাশকে। জীবনানন্দ সে কথা শুনে কী না-শুনে দুই হাতে দুইখানা ডাব নিয়ে সোজা চলে গেলেন ট্রামের চাকার নিচে। হ্যাঁ মৃত্যু, লাবণ্যের ভালো মানুষ কবিটি মরে গেল রক্তাক্ত, শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের দেয়াল ঘড়িটায় তখন বোধহয় সময়... গোলকটা দুলছে এক লয়ে টিকটিক-টিক... চারদিকে সুনসান...

আমি ভাবি কী, আবু তাহের কোথাও স্থির থাকেননি। কী জানি, থাকতে চেয়েছেন নাকি চাননি! স্থির থাকবেন, অথবা একদা ছিলেন কিনা তাও তো জানিই না।

আমি জানি এই কাতরতা যে নারী বলে ফেলতে পারে
তার সামনে দাঁড়িয়ে সব পুরুষেরই পুনর্জন্ম ঘটে।

এই কাতরতার মানে কী? সেটা নীলিমা খাতুন এর ২৩ পাতায় খোঁজ করা যেতে পারে। কবি আবু তাহের সরফরাজের কবিতার বইয়ের নাম নীলিমা খাতুন। বইটিতে তানভীর মাহমুদ গাজীর প্রচ্ছদ আর দশ নম্বর পাতার কবিতাটি পাশাপাশি সাজালে সাহিত্যের একটি ভয়ংকর সৌন্দর্যের চিত্র রূপকল্প হয়ে ভেসে ওঠে।

উত্তাল পদ্মার আসমান যখন অন্ধকার আর সে ছবির নিচে যখন কেউ লিখে দেয়, কালো মেঘ তুমি একবার বাদলের গীত গাও... সেরকম কী সেই ভয়ংকর সৌন্দর্য?

নীলিমা খাতুন বস্তুত বিবি হাওয়া
গন্ধম তার শেষ হয়ে গেছে খাওয়া
আদমের প্রাণ তাই তার হাতে
থত্থর কাঁপে কুয়াশার রাতে।
নীলিমা খাতুন কুয়াশার নিচে
ছুরিতে দিচ্ছে শান
আর আমি ভয়ে, আর শীৎকারে
ডেকে উঠি, বিবিজান!

৪৭টি কবিতাসমৃদ্ধ কবি আবু তাহের সরফরাজের নীলিমা খাতুন বইটি প্রকাশনা সংস্থা বৈভব গত বছর মানে দুই হাজার উনিশ সালে প্রকাশ করেছিল। ৮০ পৃষ্ঠার বইটির দাম ২৫০ টাকা। দ্যাখো দেখি কাণ্ড! দুই সের আলু আর দেড়কেজি পটল আর সোয়া তিন ভরি সোনার মতো কবিতার সংখ্যা গোনা শুরু করেছি...

একটা গোপন কথা বলি, নীলিমা খাতুন পড়ে মনে হলো, আবু তাহের সরফরাজ অনেক কিছু বা কিছুই নন, তবে তিনি আর্তুর র‌্যাবো নন। আজ যদি একজন র‌্যাবোর জন্ম হয়, তবে সে কি এরকম হবে?

জগত সংসারে আমি এক বোকা আইভান
চুরমার ঘরের বাপ আমার ফুটো টুপিঅলা মানুষ
বেধড়ক স্বপ্ন দেখেছিল গত মহাযুদ্ধে।

কী স্বপ্ন, কে তা বলবে! আবু তাহের সরফরাজ? তা আপাতত বলতে পারছি না। তবে বলার আছে যে, পাঠক যদি হৃদয় খুঁড়ে সুন্দরের খোঁজ পেতে চান তবে নীলিমা খাতুনকে অর্ডার করুন এই লিঙ্কে https://www.rokomari.com/book/188703/nilima-khatun। আপনাকে অবাক করে দিয়ে নীলিমা খাতুন পৌঁছে যাবে আপনার শোবার ঘরে, এক্কেবারে আপনার হাতে।

লেখক: সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা

একুশে বইমেলা ২০১৮