‘ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস’ বইয়ের প্রচ্ছদ

‘ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস’ বইয়ের প্রচ্ছদ

‘ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস’ পাঠকের হান্ডবুকের কাজ করবে

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২০

ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস বিষয়ে দুজন ফরাসি অধ্যাপক লেগুই ও কাজামিয়া রচিত বইটি দুনিয়াজুড়েই বহুল পঠিত ও সুপরিচিত। ইংরেজি সাহিত্যের বিভিন্ন যুগের লেখকদের মৌল প্রবণতাগুলো উন্মোচনে এই গ্রন্থের জুড়ি নেই। সূক্ষ্ম অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ নানা অবলোকনে ঋদ্ধ এ বইটি, আর এর খ্যাতিও বিশ্বব্যাপী। এছাড়া Andrew Sanders রচিত The Short Oxford History of English Literature বইটি যেন লেগুই কাজামিয়ার বইটিকে সমৃদ্ধি ও উপযোগিতার দিক ছাড়িয়ে যাওয়ার এক চেষ্টা। সাহিত্যের ইতিহাসকে ইংল্যান্ডের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসের পটভূমিতে রেখে বইটি রচিত। বইখানা অশেষ উপকারী। Malcolm Bradbury রচিত From Puritanism to Postmodernism: A History of American Literature বইটি আমেরিকান সাহিত্যকে দেখেছে সমকালীন তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। বেশ জনপ্রিয় এই বইটি। আমাদের কাছে I For Evans এর ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে ছোট পরিসরের বইটি বেশ প্রিয় ছিল। জে লং এর বইটিও আমাদের একাডেমিয়াতে ব্যাপক পরিচিত।

ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন লেগুই-কাজামিয়ার বইটিকে আদর্শ ধরে বাংলায় লিখেছেন, ইংরাজি সাহিত্যের ইতিহাস। প্রচুর তথ্য আছে বইটিতে, আছে অন্তর্দৃষ্টির ঝলক। বিশ্লেষণী মন্তব্যও আছে সুপ্রচুর। ড. সাজ্জাদের পাণ্ডিত্যও সুবিদিত। তবে ইংরেজি সাহিত্যের সাধারণ শিক্ষার্থীরা খুব আয়েশ করে পড়তে পারে না বইটি। শীতল ঘোষের ইতিহাসগ্রন্থটি বেশ আবেগসিঞ্চিত; ইংরেজি ও বাংলাসাহিত্যক পাশাপাশি রেখে আলোচনা করায় বইটির বেশ আবেদন আছে। যদিও ভাষাগত অলংকারের তোড়ে কেজো পাঠকদেরকে বইটি খুব বেশি উপকার দেয় না, তবে বইটি থেকে পাঠের আনন্দ অবশ্যই প্রাপনীয়।

বিশ্বনাথ চট্টপাধ্যায়, কুন্তল চট্টপাধ্যায়, শিশির কুমার চট্টপাধ্যায় রচিত ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস বিষয়ক বইগুলোও বাংলাদেশে প্রচলিত ও পঠিত। লেখকগণ সবাই পশ্চিমবঙ্গের। তবে পূর্ববঙ্গের একজন মুখোপাধ্যায় ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস রচনায় এগিয়ে এসেছেন, তুহিন কুমার মুখোপাধ্যায়। সরকারি হরগঙ্গা কলেজের ইংরেজি বিভাগের বয়োজেষ্ঠ্য অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান।

তুহিন কুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস’ বইটি শিক্ষক ও ছাত্রদের ব্যবহারিক প্রয়োজন মেটাতে বেশ ভালোভাবেই সক্ষম। ইংরেজি সাহিত্য সম্পর্কে সাধারণ ধারণা লাভ করতে আগ্রহী পাঠক ও জ্ঞানার্থীরাও উপকৃত হবেন বইটি পাঠ করে। বইটি সহজ ভাষায় লেখা। প্রতিটি যুগের সাহিত্যিক আবহ উল্লেখপূর্বক সেই আবহে ব্যক্তি লেখকদের অবদান ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করা হয়েছে বইটিতে। ইংরেজি সাহিত্যের সমস্ত মেজর লেখকের প্রধান প্রধান রচনার পরিচিতি পাবেন বইটিতে, সাথে পাওয়া যাবে লেখকের জীবনীর প্রয়োজনীয় খণ্ডাংশও, যা সংশ্লিষ্ট সাহিত্যিকের রচনার পটভূমি ও অর্থান্তর বুঝতে সহায়ক হয়। একজন বড় লেখক অনেক সময়ই বহু স্মরণযোগ্য পঙক্তিমালা রচনা করেন, যা তাকে পাঠকের প্রাত্যহিক উচ্চারণে ও কথকতায় প্রতিনিয়ত হাজির রাখে। এই বইটিতে প্রায় সব প্রধান সাহিত্যিকের উল্লেখযোগ্য জ্ঞানবাক্য বা স্মরণযোগ্য তীক্ষ্ণ উদ্ধৃতি উল্লেখ করে লেখকের শক্তিমত্তার সাথে পাঠকের পরিচয় ঘটানোর চেষ্টা করেছেন তুহিনকুমার মুখার্জী। তাছাড়া বিভিন্ন প্রসঙ্গে ইংরেজি সাহিত্যের কৃতবিদ্য ইতিহাস রচয়িতাদের প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি ব্যবহার করে পাঠকদেরকে পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছেন সংশ্লিষ্ট সাহিত্যিকের শৈল্পিক সামর্থের সাথে।

বইটি এমনভাবেই রচিত হয়েছে যাতে পাঠক ইংরেজি সাহিত্যের প্রতিটি যুগ ও প্রধান সাহিত্যিকদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ সহজে স্মরণে রাখতে পারে। বইটি বিসিএস পরীক্ষার্থী, ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র, জ্ঞানার্থী ও আগ্রহী পাঠকদের হ্যান্ডবুকের কাজ করবে। বইটির মধ্য দিয়ে তুহিন কুমার মুখোপাধ্যায় স্কলাস্টিক মূল্য সৃষ্টির চেয়েও বিভিন্ন শ্রেণির পাঠকদের ইংরেজি সাহিত্য সংশ্লিষ্ট বিবিধ ‘দরকার’ মেটাতে চেয়েছেন। বইটি শিক্ষার্থীদের জন্যে হতে পারে ‘সেল্ফ টিচিং ম্যাটেরিয়াল’ আর পাঠকদের ত্বরিৎ প্রয়োজন মেটানোর এক কেজো গ্রন্থ।

বইটি প্রকাশ করেছে বাংলাবাজারস্থ প্রকাশনী ‘বুক সেন্টার’। ‘ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস’ নামক এই বইটির বহুল প্রচার কামনা করি।

 

লেখক: প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক

একুশে বইমেলা ২০১৮