কবি সিকান্দার আবু জাফরের আজ মৃত্যুদিন

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : আগস্ট ০৫, ২০২৫

কবি, সঙ্গীত রচয়িতা, নাট্যকার ও সাংবাদিক সিকান্দার আবু জাফরের আজ মৃত্যুদিন। ১৯৭৫ সালের ৫ আগস্ট তিনি মারা যান। ১৯১৮ সালের ১৯ মার্চ খুলনা জেলার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে তার জন্ম। পিতা সৈয়দ মঈনুদ্দীন হাশেম। পেশায় তিনি কৃষক ও ব্যবসায়ী ছিলেন। পিতৃব্য সৈয়দ জালালুদ্দীন হাশেম।

স্থানীয় স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করার পর আবু জাফর কলকাতার রিপন কলেজে পড়েন। ১৯৪১ সালে তিনি কাজী নজরুল ইসলামের নবযুগ পত্রিকায় যোগ দেন। এছাড়া দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক মিল্লাতে চাকরি করতেন। আমাদের সংগ্রাম চলবেই তার রচনা বিখ্যাত গান। দেশবিভাগের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন।

পঞ্চাশের দশকে রেডিও পাকিস্তানের শিল্পী হিসেবে কাজ করেন। ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি সাহিত্য পত্রিকা `সমকাল`-এর প্রকাশক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সাহিত্যিক হিসেবে সিকানদার আবু জাফরের যে খ্যাতি তার চেয়েও অনেক বেশি প্রসিদ্ধি সাহিত্য সম্পাদক হিসেবে।

সাহিত্য পত্রিকা সমকাল সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশ ও সম্পাদনা তার জীবনের তাৎপর্যময় ঘটনা। ১৯৫৭ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ‘সমকালে’র প্রকাশক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে পূর্ববঙ্গের সাহিত্য আন্দোলনে নতুন গতির সঞ্চার করেন।

এ পত্রিকায় ষাটের দশকের নামি-দামি সকল কবি-লেখকের রচনা প্রকাশিত হয়। লেখার সাবধানি ও নৈর্ব্যক্তিক নির্বাচন, প্রতিভাবান নতুন লেখকদের মর্যাদা প্রদান, মনোযোগী সম্পাদনা ও মুদ্রণ পরিপাট্যের জন্য সমকাল সকল কবি-লেখকের জন্য স্বপ্নের পত্রিকা হয়ে উঠেছিল। একই সঙ্গে এটি প্রগতিশীল বাংলা সাহিত্যধারার অগ্রগামী সাহিত্য পত্রে পরিণত হয়।

তার নিজরেও প্রচুর লেখা এ পত্রিকায় তিনি প্রকাশ করেছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত ‘বাংলা ছাড়ো’ কবিতাটি:

রক্তচোখের আগুন মেখে ঝলসে যাওয়া আমার বছরগুলো
আজকে যখন হাতের মুঠোয় কণ্ঠনালীর খুন পিয়াসী ছুরি
কাজ কি তবে আগলে রেখে বুকের কাছে কেউটে সাপের ঝাপি
আমার হাতেই নিলাম আমার নির্ভরতার চাবি
তুমি আমার আকাশ থেকে সরাও তোমার ছায়া
তুমি বাংলা ছাড়ো।

তার রচনাবলির মধ্যে রয়েছে, প্রসন্ন প্রহর (১৯৬৫), বৈরী বৃষ্টিতে (১৯৬৫), তিমিরান্তিক (১৯৬৫), বৃশ্চিক লগ্ন (১৯৭১), বাংলা ছাড়ো। তার রচিত নাটকগুলো হচ্ছে: সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৫), মহাকবি আলাওল (১৯৬৬), শকুন্তলা উপাখ্যান (১৯৫২), মাকড়সা (১৯৬০)।

তার রচিত উপন্যাস হচ্ছে: মাটি আর অশ্রু, পূরবী, নতুন সকাল, জয়ের পথে ও নবি কাহিনি। তিনি ১৯৬৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন এবং ১৯৮৪ সালে মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন।