কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকর আর নেই
ছাড়পত্র ডেস্কপ্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০২২
কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকর আর নেই। আজ রোববার সকালে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভারতের ইন্দোরে মরাঠি পরিবারে তার জন্ম। ৯ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে প্রথম মঞ্চে ওঠেন তিনি। বাবার কাছেই শুরু অভিনয় ও গান শেখা। ১৩ বছর বয়সে বাবার মৃত্যুর পর তাকেই ধরতে হয় পরিবারের হাল।
১৯৪২ সালে মারাঠি গান গেয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন লতা। এরপর ১৯৪৬ সালে প্রথম হিন্দি সিনেমায় গান করেন। বসন্ত জোগলেকরের ‘আপ কি সেবা মে’ ছবিতে তিনি ‘পা লাগু কার জোরি’ গানটি গান। দুই বছর পর সুরকার গুলাম হায়দারের সহযোগিতায় গান ‘মজবুর’ ছবিতে ‘দিল মেরা তোরা’ গানটি।
এরপর অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এগোতে হয় তাকে। ‘বড্ড সরু গলা’ বলে তাকে ফিরিয়ে দেন মুম্বাইয়ের বাঙালি প্রযোজক শশধর মুখোপাধ্যায়। উর্দু সিনেমায় গান গাওয়ার পর দিলীপ কুমার আপত্তি তুলেছিলেন উর্দু উচ্চারণ নিয়ে। এরপর উচ্চারণ ঠিক করতে উর্দুর শিক্ষক রেখেছিলেন লতা।
ভারতের ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষার পাশাপাশি লতা গেয়েছেন বিদেশি ভাষার গানও। ৩০ হাজারেরও বেশি গান গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন তিনি। ১৯৭১ সালের মধ্যেই লতা রেকর্ড করে ফেলেন প্রায় ২৫ হাজার গান।
পুরস্কারের ঝুড়িও বেশ ভারি। শ্রেষ্ঠ প্লে-ব্যাক শিল্পীর পুরস্কার পান ২৩ বার। পেয়েছেন মধ্যপ্রদেশ সরকারের তানসেন পুরস্কার, ভারত সরকারের চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মান `দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার` ও `পদ্মভূষণ`। ২০০১ সালে ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কার `ভারতরত্ন`।
পুরস্কারের ক্ষেত্রে ছাড়িয়েছেন দেশের গণ্ডি। পেয়েছেন ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান অফিসার দে লা লিজিয়ঁ দ্য ’নর। সংগীত পরিচালনার জন্যও পেয়েছেন পুরস্কার। মারাঠি চলচ্চিত্রে ‘আনন্দ ঘন’ ছদ্মনামে গানের পরিচালনাও করেন তিনি। পুরস্কার পাওয়ার পরই রহস্য ভেদ হয় মারাঠি চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালক আনন্দ ঘনর।
ভারতের আরেক সংগীত কিংবদন্তী মান্না দে বলেছিলেন, “যে যত ভালো গানই গাক, লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে ঈশ্বর বাস করেন। ওর মতো কেউ গাইতে পারবে না।।”
১৯৬৩ সালে ভারত ও চীনের যুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের উজ্জীবিত করতে লতা গেয়েছিলেন ‘ইয়ে মেরে ওয়াতান কি লোগো’ গানটি। তার একই গান ব্যবহার করা হয় কার্গিলের যুদ্ধেও।
মৃত্যু সইতে পারতেন না তিনি। তাই চিকিৎসকের কড়া নির্দেশ ছিল কোনো মৃতদেহের সামনে যেন তিনি না যান। অবশেষে মৃত্যু পৌঁছে গেল তার-ই দুয়ারে। পাড়ি দিলেন অন্য সুরের জগতে। অগণিত ভক্ত-শ্রোতার কণ্ঠে-কানে-মনে রেখে গেলেন নিজের অবিনশ্বর সুর। শেষ হলো সংগীতের শুধু একটি নয়, কয়েকটি অধ্যায়ের।
লতা মঙ্গেশকরের প্রয়াণে দুদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। রোববার সন্ধ্যায় মুম্বইয়ের শিবাজি পার্কে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হবে তার শেষকৃত্য।
























