চাঁদ সোহাগীর ডায়েরী

পর্ব ১০

শ্রেয়া চক্রবর্তী

প্রকাশিত : মার্চ ২৫, ২০১৯

আমার ভেতরটা ভীষণ শব্দময়। কখনো ভীষণ নীরবতার মধ্যেও তার এক শব্দ থাকে, কয়েক টন জলের নিচে কান পাতলে যেমনটা শোনা যায়। তাই বাইরের শব্দাবলি সহজে আমার ভেতর অবধি আসে না। আসে ততটুকুই যতটুকু অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।

সবধরনের বই আমি পড়ি না। চায়ের টেবিলে চানাচুরের মতো দুপুরবেলা ঘুমোতে যাওয়ার আগে মৌরি চেবানোর মতো যেসকল বই লোকে পড়ে ওসব আমি পড়িনা, যা একবার পড়েই ফেলে দিতে হয়। আমাকে নতুন করে ভাবাতে পারে যা এমন সৃষ্টি ভালোবাসি।

সবার সাথে আমার বন্ধুত্ব হয় না। অসৎ, ধূর্ত, ড্রামাবাজ, হিপক্রিট পাবলিক আমার পোষায় না। মিলে যাই সহজে তার সাথে যে বলে কম, যার না বলে রয়ে যাওয়াটা হাজার স্কোয়ার ফুট ঘরে হাত পা ছড়িয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকার মতো স্বস্তি দেয়।

ছুটকো ছাটকা প্রেম করি না আর। ওসব হাতখরচে বিশ্বাস করি না। যা অমোঘ যা দুর্মূল্য লার্জার দ্যান লাইফ কেবল তার সাধ্যাতীত অনুরাগে থাকি। তাকে তপস্যাও বলা যায়, কিংবা জীবনচর্যা।

শূন্যতায় যেতে ভালোবাসি। যা কিছুর হিসেব নেই হিসেব হয় না মন তার কাছে যেতে চায়। আবার সংসারের একশো একটা হিসেবে দাঁত চেপে পড়ে থাকি। এ এক অদ্ভুত দ্বৈত জীবন। কখন সুইচ `অফ` হয় কখন `অন`, কখন কোথা থেকে কোন্ স্পেসে সিফ্ট করি নিজেও জানি না।

আমি ভীষণ অনড়, ছোটখাটো টিলার মতো। গোড়া থেকে এতটুকু হলেও নাড়া দিয়ে গেছে যা, সে সকল মহান ভূমিকম্পকে আমি ধারণ করতে ভালোবাসি। সেই দোলাচলে থাকি, রয়ে যাই।

এই যে এতকটা কথা লিখলাম, কে তা জানি না। দুপুরবেলা মাঝে মাঝে নিজেকে ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়, দূরে দূরে পাখি ডাকার শব্দ শুনি যখন।