
চাঁদ সোহাগীর ডায়েরী
পর্ব ১৭
শ্রেয়া চক্রবর্তীপ্রকাশিত : মে ১৩, ২০১৯
বিয়ের পর মেয়ের জীবনে অনেক রকম অসুখ জেনেও অনেক মা-বাবাই চুপ করে থাকেন, ভাবেন যেমন করে হোক সংসারটা টিকে যাক। রিগ্রেসিভ ম্যারেজে কোনো রকমে টিকে যাওয়া সংসারে যে ভালো না থাকাগুলোও জমে জমে অসুখে পরিণত হয়, সে খবর ক’জন রাখে! কিন্তু সে তো হলো গিয়ে ভেতর দিকের কথা। লোকে তো বড়জোর বসার ঘর অবধি, চা জল মিষ্টি অবধি, ততদূর কোনো আঁচ না এলেই হলো। তবেই তো যাবতীয় জবাবদিহির ঊর্ধ্বে থাকা যায়। নার্ভাস মা-বাবা তাই মেয়ের দোষই বেশি করে দেখেন, জামাইয়ের মাথা ঠাণ্ডা রাখতে।
সংসারে নিজেকে মূল্যহীন হয়ে পড়তে দেখেও বেচারি মেয়েটি হয়তো তাই চুপ করে যায় একসময়। তার যেসকল গুণের জন্য একদিন উচ্ছ্বাসের অন্ত ছিল না তার জীবনসঙ্গীর, তাকে প্রকাশিত করার জন্য নয় কেবল অর্জনের জন্য, সময়ের ধুলো লেগে সোকেশে সাজানো পুতুলের জরিচুমকির পোশাকের মতো তার ঔজ্জ্বল্যও একদিন ম্লান হয়ে যায়। তার প্রতিটি ভালো থাকার সকরুণ ইচ্ছের ওপর আকস্মিক হাওয়ার মতোই এক লহমায় লেগে ছিটকে যায় বুড়ি শাশুড়ির অভিসম্পাত। যাকে বিশ্বাস করে ভালোবেসে ঘর ছেড়েছিল সে একদিন, সে হাত হাতড়াতে গিয়ে হয়তো সে খুঁজে পায় নিজেরই হৃদয়ের রক্তলাগা ছুরি।
সংসারে এমন কত কিছু হয়, আরো কত কত কিছু। তবুও হয়তো মেয়েটি নিশ্চুপ থেকে যায় শেষ বয়সে বৃদ্ধ মা বাবার রাতের ঘুম কেড়ে নিতে চায়না বলেই। এসব ভালো না থাকার কথা তার বালিশের নিচে চোখের জল হয়ে মিশে যায় অকথিত ব্যথা শুষে নেয়ার দাগে, যে কথা কাউকে বলা যাবে না কোনো দিন।
কন্যার জন্ম দেয়ার সাথে সাথেই এখনো যে মা-বাবারা ভাবেন, একমাত্র বিয়েই নারী জীবনের আদর্শ পরিণতি তাদের ভুল ভাঙার ক্ষমতা পৃথিবীর কারো নেই। পারলে যত্ন নিয়ে দেখুন, মেয়েটির মধ্যে আর কি কি গুণ আছে। ভালোবেসে দেখলে নিশ্চয়ই খুঁজে পাবেন। আজকে আপনি তার মধ্যে যা দেখবেন ভরসা জোগাবেন সাহস দেবেন, বিশ্বাস করুন, একদিন হয়তো পৃথিবীও তার মধ্যে সেই সকল গুণের প্রকাশ দেখবে। তবে আর নতমস্তকে করজোড়ে কারোর কাছে মিনতি করতে হবে না এই বলে, যে সব দোষ আপনার মেয়েরই ছিল, আর কারো কোনো দোষ ছিল না, এই ভয়ে পাছে ওই টলমল করতে থাকা তাসের ঘরটি ভেঙে যায়!
লেখক: কবি