
চাঁদ সোহাগীর ডায়েরী
পর্ব ২৩
শ্রেয়া চক্রবর্তীপ্রকাশিত : জুলাই ১১, ২০১৯
মঞ্চে মাইক নিয়ে গাওয়ার লোক আমি নই। আপন মনে নিজের সাথে গেয়ে চলার লোক। মঞ্চে যে কখনো গাইনি, এমন নয়। কিন্তু সে অভ্যাস বহুদিন হলো গেছে। আর আমি নিজের ভেতর ডুব দিতে থেকেছি কেবল।
সুরের চর্চাও আমার কাছে কবিতার মতো। শব্দের ঠোকাঠুকিতে আমি অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ। তবে যখন এক একটা সুর ছোঁয়ায় প্রচেষ্টা করি একান্তেই, মনে হয় ওর ভেতর অনেকটা আশ্রয় আছে, যে আশ্রয় দিয়ে শব্দ আমাকে লালন করেছে নিরলস।
যা কিছুর সুচতুর পার্থিব অস্তিত্ব আছে সেই সকলই গ্রহণযোগ্যতার সীমার ভেতর এসেই কেমন যেন ধূসর জলছবি হয়ে গেছে। ছুঁতে চাইলেও স্পর্শ করা যায় না যেন। এই আমার জীবন। সেই সকলই স্পর্শাতীত আমার শব্দ বন্ধে সুর বিন্যাসে বড় বেশি স্পর্শকাতর মনে হয়, যার কিছুটা নিবিড়তা দাবি করতে পারি আমি অন্তত।
`আলাপিনী` নামের একটা গানের স্কুল আছে আমার মায়ের। তবে তাঁর কাছে আমার প্রথাগত শিক্ষা হয়নি গানের। বরং যেটা হয়েছে সেটা হলো প্যাসিভ লার্নিং। বন্ধ দরজার ওপার থেকে একঝাঁক কণ্ঠে সুরের ওঠানামা শুনেছি কেবল। সেই আমার শোনার শুরু। তারপর হারমোনিয়ামের রিডে সেলোটেপের ওপর সা রে গা মা লিখে সুর পরিচয়। খুব ছোটবেলায় যিনি শেখাতে আসতেন তার নাম শ্রী শৈলেন মুখোপাধ্যায়।
তারপর আবার দীর্ঘদিনের অনভ্যাস। অনভ্যাসের পরতে পরতে জমে থাকা মরচে মাঝে মাঝে কেটে গেছে রবীন্দ্রসঙ্গীতের আনুগত্যে। সোস্যাল স্কোয়াডে শেখাতেন শ্রদ্ধেয় সমীর বাবু, ‘আমার জীবন পাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী করেছো দান।’ তখন ক্লাস থ্রি বা ফোর। তারপর শ্রদ্ধেয়া মিতা দের কাছে কিছুদিন।
এরপর দীর্ঘদিনের অনভ্যাসের ঘোর কাটে রবীন্দ্রনাথের গানেই, তাঁর কাছেই আবার ফিরে যাওয়া শ্রী সৌভিক চক্রবর্তীর শিক্ষায়। আরো একজন, যার কাছে বেশ কিছুদিন রাগ শিক্ষার অবকাশে, বারবার ধ্যাতানি খেয়েছি ‘মানি গানটা ঠিক করে করলে না।’ শ্রী দ্বিজেন ভট্টাচার্য।
এভাবেই বারবার সরে সরে যাওয়া আমি কবিতা থেকে সরে যাইনি কোনো দিনই, কারণ সম্ভবত কেবল এটাই যা কেবল নিজের কাছে শেখা যায়। কাল এক বন্ধু বললেন, ‘গানের ভিডিওগুলো আরো এডিট করে দিতে পারেন। আরো বেশি ভিউ পাবেন।’ কারণ এগুলো সবই প্রায় নুড ভয়েসে রেকর্ড করা, খেলার ছলে নিজের খুশি মতো। আমি বললাম, ‘ধুর! ওসবের পিছনে ছোটার কোনো ইচ্ছে নেই আমার। যেটুকু স্বাভাবিক ভাবে ফিরে আসে তাই নিয়েই থাকি।’
তাছাড়া আমি তো গায়িকা নই। কবিও নই। তবে আমি কে? আমি একটা বাসার খোঁজে থাকা পাখি, যার আত্মা শব্দের ভেতর সুরের ভেতর নিজেকে প্রকাশ করতে চায় না বোধহয়, কেবল গুটিয়ে নিতে চায় যেন নিজেকেই, কারণ ওটাই তার গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকার আশ্রয়, একটা কাউচ যা তাকে আরাম দিতে পারে। চলবে
লেখক: কবি