শ্রেয়া চক্রবর্তী

শ্রেয়া চক্রবর্তী

চাঁদ সোহাগীর ডায়েরী

পর্ব ২৬

শ্রেয়া চক্রবর্তী

প্রকাশিত : জুলাই ৩১, ২০১৯

মন ভালো হোক বা খারাপ, তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সিতে সামান্য হেলদোল হলে কোনো বন্ধুকে ডেকে বলি, ‘চলো কফি খাওয়া যাক।’ শহরের কফিশপগুলো তাই ভীষণ প্রিয়। সাথে কেউ না থাকলেও চুপচাপ এক কাপ কফি নিয়ে বসে তো থাকাই যায়। কাচের দেয়াল টপকে চোখ চলে যায় ব্যস্ত শহরের রাস্তা পারাপার রত পথিকের দোলাচলে।

এমন কতদিনই তো হয়েছে, উল্টোদিকের মানুষটাকে বোঝাতে চেয়েছি কতকিছু বলে বা না-বলে। সেও ক্যাপোচিনো বা কাফে মকার অর্ডার দিয়ে চেয়ে থেকেছে, চোখ ভরা অনুচ্চারিত জিজ্ঞাসা। কিভাবে শুরু করা যায় সেই খুঁজে ফেরা শূন্যতার ভেতরে এসে পড়েছে গরম গরম কফি। ভাগ্যিস এসে পড়েছে। এই সব ক্যাফেইনের ধোঁয়া গন্ধ মাখা ভাপ ভাপ বিকেলে গড়ে উঠেছে এক একটা গল্প কথা। কখনো কবিতা কখনো সিনেমা কখনোবা নিখাদ বন্ধুত্ব। এই সবকিছুর বহমানতার জায়গা করে দিয়েছে যে তার নাম `সিসিডি` বা `কাফে কফি ডে`।

দমবন্ধ হয়ে আসা ক্লসট্রোফোবিক জীবন থেকে এক ঝলক মুক্তি যেন কফিশপের আড্ডা। কত মানুষের কত কথার মুক্তবন্ধ বনানী যেন। মাঝে রাখা এক একটি কফির কাপ যেন এক একটা আগল মাত্র। এপার ওপারের বিনিময়ে সুগারের টুংটাং চামচ নাড়ার অছিলায় উড়ে উড়ে যায় অবয়বহীন উষ্ণ আকাঙ্ক্ষারা। তাই তো, আ লট ক্যান হ্যাপেন ওভার আ কাপ অফ কফি! লিখেছিলাম তাই:

অনতিক্রম্য দূরে রাখা আছে
উষ্ণ কফির কাপ।
একটু আলতো করে
আমি তাকে তুলে নিয়ে
ঈষৎ গরম ভেবে
রেখেছি নামিয়ে।
জিভের আড়াল করে এসেছে যে
বন্ধুতা দাবি করে, আমি তাকে বলেছি সে
যেন আসে বিকেলের দিক করে।
তখন বৃষ্টি হবে
তখন আমার ঘরে অনেক কফির কাপ
জড়ো করে একটি আড়াল দেব আমি।
ওদিকে বসবে এসে যে কিনা বৃষ্টিজাত
অন্যদিকের আমি যা কিছু আগুনময়
তাই দিয়ে পুনরায় ওভেনে চড়াব
আজ কাফে কফি ডে!

                   কাব্যগ্রন্থ: চিনুক নদীর ধারে

অথচ সেই মানুষটি যিনি এই ভাবনার বিশ্বায়ন ঘটিয়েছিলেন, জীবন হয়তো তার জন্য তেমন করে কোনো অবকাশ রাখেনি আর নিছক স্বপ্নময়তার। জীবনটা এমনই। সবকিছু অক্ষত রেখে নতুন কিছু আসে না বোধহয়। জীবনটা মূল্যবিনিময়ের। তাই হয়তো কফির কাপ নয়, মানুষটার শেষ আশ্রয় হলো নেত্রবতী নদী!
রেস্ট ইন পিস।