চাঁদ সোহাগীর ডায়েরী

পর্ব ৫৩

শ্রেয়া চক্রবর্তী

প্রকাশিত : মার্চ ০৫, ২০২০

আজকাল একা একা বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে করে। একা একা কফিশপ সিনেমা একা একা পথ হাঁটা একা একা কোনও নিরুদ্দেশের পানে চেয়ে বসে থাকা বেশ উপভোগ করছি। ইচ্ছে করে, একা একা কোনও নদীর কিনারা বরাবর হেঁটে যাই। কোনও খালের ধারে কিংবা বাঁশের সাঁকোর ওপর একা একা দাঁড়িয়ে থাকি কিছুক্ষণ। একা একা সূর্যাস্ত দেখি। আমি কি সেল্ফ অ্যাডিক্ট হয়ে পড়ছি?

অথচ কোনও এক সময় এই একা পড়ে যাওয়াকেই সব থেকে বেশি ভয় ছিল। ভালোবাসার বৃত্ত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে আমি নিজেকেই অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছি। আবার সেই বৃত্তের ভেতরে থেকেই সব থেকে বেশি একলা হয়েছি। এটাই হয়তো ভবিতব্য। একা থাকা কোনও অভিশাপ নয়। বেদনার হলো অনেকের মাঝে থেকেও একা হয়ে পড়া।

অথচ আমি সেভাবে নিঃসঙ্গ নই। চাইলে আমাকে সঙ্গ দেবে এমন অনেক। তবে কি আমি প্রেমে পড়তে ভুলে যাচ্ছি? নাকি নিজের সাথেই এমন ভাবে প্রেমে জড়াচ্ছি, যেমন ভাবে আগে কখনোই হয়ে ওঠেনি।

আমি জানি, আমি আসলে লোনার। যারা আমাকে ছুঁতে চায় তাদের কাছেও কেমন তৈলচিত্রের নীরব হাসিটির মতো ঝুলে আছি, কিছুক্ষণ অবলোকন করে ফিরে যাচ্ছে কেউ কেউ। রক্ত মাংসের মানুষটা যেন অনেক দূরের...

এসবের মাঝে এজেসি বোস রোড বরাবর আমি রোল্যান্ড স্ট্রিটে পৌঁছে যাচ্ছি। কোথায়, একা লাগছে না তো! একা লাগছে না। কারণ মাথার ভেতর তখন চলছে দারুণ একটা কনভারশেসন। কার সাথে, ঠিক জানা নেই। হয়তোবা নিজের সাথে নিজে, অন্তহীন এই কথা বলা।

আমি শুধু প্রশ্ন করি তাকে
যে আমার মাথার ভেতর
দরজা দিয়ে শুয়ে থাকে

আমি তার বিছানা বালিশ
সব এলোমেলো করে দিয়ে
টেনে আনি নিচে—
তাকে আমি দেব না
দেব না ঘুমাতে আজ কিছুতেই
মাথার গভীর বুকে থাবা দিয়ে
জাগিয়ে রেখেছে সে আমাকেই

আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই...