অলঙ্করণ: পাপিয়া জেরিন

অলঙ্করণ: পাপিয়া জেরিন

তৃষ্ণাকুমারী

পর্ব ১৫

আবু তাহের সরফরাজ

প্রকাশিত : মার্চ ১৫, ২০১৮

ভানু ঝাঁজের সঙ্গে বলল, তুই চুপ থাক তো সোনালি। দেখেছিস, কী সুন্দর দেখতে ছেলেটি। যেন ভিন রাজ্যের রাজকুমার। সোনালি জিভ কেটে বলল, এসব তুই কী বলছিস সই? তুই হলি এ রাজ্যের রাজকুমারী। আর তোর মুখে রাস্তার একটি ছেলের সুনাম? রাজামশাই শুনলে কী দুঃখটাই না পাবেন।

আলোকনাথ দেখছিল চার কিশোরীকে। কিন্তু এক কিশোরীর রূপ তাকে খুব ভেতর থেকে টানছিল। কী যেন মায়া আছে মুখটায়। প্রগাঢ় মায়া। কিন্তু মেয়েগুলো কী করছে ওখানে দাঁড়িয়ে? কী বলছে তারা? বটগাছের নিচ থেকে উঠে এলো আলোকনাথ। দাঁড়ালো চার কিশোরীর সামনে। জিগেশ করল, এ রাজ্যের নাম কি?

শ্রীরাজ্য। জবাব দিল সোনালি।
আমার নাম আলোকনাথ। আর কিছু মুখে এলো না তার। মায়া মাখানো মুখটায় মুগ্ধতার চোখে সে চেয়ে রইল। আর দেখল, ওই মুখটিও চেয়ে আছে তার দিকে। জিগেশ করল, কী নাম আপনার?
ভানু। কিশোরী জবাব দিল।
সোনালি বলল, ভানু হচ্ছে আমাদের সখি। সে এ রাজ্যের রাজকুমারী।
আলোকনাথ জিগেশ করল, রাজকুমারী বুঝি সখিদের নিয়ে বেড়াতে বেরিয়েছেন?
সোনালি জবাব দিল, না। এ সময়টায় প্রতিদিন আমরা নদীতে স্নান করতে যাই। এই বলে সে ভানুর বাহুতে একটু ধাক্কা দিল। চলরে ভানু, আমরা স্নানে যাই। এরপর ফিরতে আবার দেরি হয়ে যাবে।
ওরা চলে গেল।

আলোকনাথ ফিরে এলো বটগাছের নিচে। মুগ্ধতার ঘোর নিয়ে সে বসে রইল। কিছু সময় পর স্নান শেষ করে রাজকন্যা সখিদের নিয়ে ফিরে এলো। আলোকচন্দ্র দেখল, চলতে চলতে ভানু তার দিকেই বারবার তাকাচ্ছে।  সারাদিনে আর কোথাও যাওয়ার আগ্রহ রইল না আলোকচন্দ্রের। বটগাছটার নিচে সে বসেই রইল।

রাজবাড়ির পুকুরঘাটে বসে আছে ভানু আর সোনালি। আকাশে চাঁদ। জ্যোছনা যেন পাপড়ি মেলেছে, এরকম নরম আলো চাঁদের। পুকুরে পদ্মফুল। আর পাড়ধরে নানা গন্ধের ফুলের গাছ। ভুরভুর গন্ধ ছড়াচ্ছে রাতের হিম হিম বাতাসে। সিঁড়িতে পা ছড়িয়ে বসে আছে ভানু। একটু দূরে, সিঁড়ির দুটো ধাপ নিচে বসে আছে সোনালি। গুনগুনিয়ে কী যেন গাইছে সে। ভানু জিগেশ করল, কী গাইছিস রে সই?
সোনালি এবার একটু শব্দ করে গাইল:

কী রূপে মইজিলি কন্যা
কার ছবি তোর ধ্যানে?
রূপের মাঝে রূপসদাগর
রূপের সদাই কেনে।

ভানু ডাক দিল, সোনালি?
গান থামিয়ে সোনালি জিগেশ করল, কিছু বলবি সই?
আমি যে কিছুতেই ভুলতে পারছি না সেই ছবি। সেই মানুষটিকে।
সোনালি উঠে এলো ভানুর সিঁড়ির ধাপে। এরপর পাশে বসে জিগেশ করল, আচ্ছা আমায় বলতো, সেই তখন থেকে তোর মুখে একই কথা। কী হয়েছে তোর? কী এমন আহামরি তুই দেখলি তাকে? হ্যাঁ, স্বীকার করছি, দেখতে সে সুপুরুষ। কথাও বলে বেশ সুন্দর করে। তা বলে রাস্তার ছেলে। তার জন্যে এত টান, এ তো ভালো কথা নয় ভানু। তুই হলি রাজকুমারী। ভুলে গেলে চলবে?

ভানু বলল, কিন্তু আমি যে তাকে স্বপ্নে দেখেছি।
স্বপ্নে দেখেছিস মানে? কবে?
কয়েকদিন আগে। দেখি, আরে...। থেমে পড়ল ভানু। এরপর বলল, আজ সকালে যা যা ঘটেছে, এসবই আমি স্বপ্নে দেখেছি। হুবহু একই ছবি, একই ঘটনা।
চোখ কপালে উঠে গেছে সোনালির। অবাক হয়ে সে বলল, কী সব ভুতুরে কথা যে বলিস ভানু। স্বপ্ন কী বাস্তরের মতো হুবহু এক হতে পারে?
ভানু দৃঢ়তার সাথে বলল, পারে তো। তাই তো হলো। এখন বলতো, এসবই কী ভগবানের ইশারা নয়?

ভাবল সোনালি। স্বীকার করল, হ্যাঁ। আমারও তাই মনে হচ্ছে। আর দেখেছিস, যুবকটিও কী মুগ্ধ চোখে তোর দিকে চেয়ে ছিল। যেন কতকালের তৃষ্ণা ওর বুকে।

চলবে...