নামাজে মন ফেরানো

পর্ব ৮

শারিন সফি অদ্রিতা

প্রকাশিত : জুলাই ১৭, ২০২০

আমরা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছি, রসূল (ﷺ) আমাদের জীবনে না থাকলে আমাদের কি হতো? তিনি নিজের জীবন দিয়ে আমাদের জন্যে জলজ্যান্ত উদাহরণ রেখে গেছেন। আপনি জীবনের যেই সমস্যাটার কথাই ভাবুন না কেন, সেই সমস্যা এবং দুঃখ-যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়েছেন আমাদের রসূল (ﷺ) এবং তিনি সেগুলোর সমাধান করেছেন আল্লাহর সাহায্যে। আমাদের জন্যে সমাধানগুলো তিনি রেখে গেলেন। তিনি আমাদেরকে শিখিয়েছেন আল্লাহকে ভালবাসতে, আল্লাহর বান্দাদেরকে ভালোবাসতে। মাঝে মাঝে মনে হয়, ইয়া রব, জান্নাতে একটু ঠাই দিও, তোমার এই অসাধারণ নবিকে (ﷺ) চোখ জুড়িয়ে দেখে আসতে চাই।

আজকে আমরা রসূলের (ﷺ) দরূদ পাঠের ব্যাপারে আলোচনা করব। নবির (ﷺ) প্রতি দরূদ পড়ার নির্দেশ আল্লাহতা`য়ালা নিজেই দিয়েছেন। নবির (ﷺ) প্রতি দরূদ পড়া আল্লাহর আদেশের বাস্তবায়ন করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তার ফেরেশতারা নবির প্রতি সালাত-দরূদ পেশ করেন। হে মুমিনগণ, তোমরাও তার প্রতি সালাত পেশ করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও। (সূরা আহযাব ৫৬)

এছাড়া হাদিসেও এ বিষয়ের গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। মুসলিম শরিফের ৩৮৪ নম্বর হাদিসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার ওপর দশবার দরূদ পাঠ করবেন। সুনানে তিরমিজির ৩৫৪৬ নম্বর হাদিসে বলা হচ্ছে, প্রকৃত কৃপণ সেই ব্যক্তি, যার কাছে আমি উল্লিখিত হলাম (আমার নাম উচ্চারিত হলো), অথচ সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করল না।

রসূলের (ﷺ) নাম শোনার পর তার উপর দরূদ না পড়াটা মারাত্মক ব্যাপার। প্রায় সময়েই আমরা খুব নর্মালভাবে আমাদের আলাপে নবি মুহাম্মদের (ﷺ) নাম উল্লেখ করি, অথচ তাঁর নাম উচ্চারণের সাথে সাথে সল্লাল্লাহু ওয়া আলাইহি ওয়া সল্লাম (ﷺ) বলি না। অথবা আমরা দেখি যে, অন্য কারো লেখায় বা কথায় রসূলের নাম উল্লেখ করা হচ্ছে, কিন্তু আমরা সেটা পড়ার বা শোনার সাথে সাথে সল্লাল্লাহু ওয়া আলাইহি ওয়া সল্লাম বলছি না। এইটুকু বলতে মাত্র কয়েক সেকেন্ডই লাগে, কিন্তু আমাদের খেয়াল থাকে না বলতে। এই বেখেয়ালিপনা করে আমরা অজান্তেই নিজের ক্ষতি ডেকে আনছি না তো?

আমরা কি জানি যে, রসূলুল্লাহর (ﷺ) নাম শুনে যে ব্যক্তি দরূদ পড়ে না তার জন্য হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম বদদুয়া করেছেন? আর স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সেই দুয়ায় আমিন বলেছেন। কাব ইবনে উজরা (রা.) বলেন, নবি (ﷺ) বলেছেন, তোমরা মিম্বরের কাছে একত্রিত হও। আমরা উপস্থিত হলাম। যখন তিনি মিম্বরের প্রথম ধাপে চড়লেন তখন বললেন, হে আল্লাহ কবুল করুন। তারপর যখন দ্বিতীয় স্তরে চড়লেন তখনও বললেন, হে আল্লাহ কবুল করুন। তারপর তৃতীয় স্তরে চড়ে আবারও বললেন, হে আল্লাহ কবুল করুন।

খুতবা শেষে যখন মিম্বর থেকে অবতরণ করলেন, তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল, আজ আমরা আপনার থেকে এমন কিছু শুনলাম যা এর আগে আর কখনও শুনিনি। তখন তিনি বললেন, আমার কাছে জিবরাইল (আ.) এসে বলল, যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও তাকে ক্ষমা করা হলো না, সে বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন। যখন দ্বিতীয় স্তরে চড়লাম তখন তিনি বললেন, যার কাছে আপনার নাম উল্লেখ করা হলো কিন্তু সে আপনার ওপর দরূদ পড়ল না, সেও বঞ্চিত হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন। যখন তৃতীয় স্তরে চড়লাম, তখন তিনি বললেন, যে পিতা-মাতাকে অথবা তাদের কোনো একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়েও তারা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে পারল না, সেও বঞ্চিত  হোক। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহ কবুল করুন। বায়হাকি: ১৪৬৮

আমাদের নামাজে পঠিত দরূদের বাংলা উচ্চারণ এবং অর্থ— আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদিও। ওয়ালা আলি মুহাম্মাদ। কামা সল্লাইতা আ`লা ইব্রহীমা ওয়ালা আলি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়ালা আলি মুহাম্মাদ। কামা বারক্তা আলা ইব্রাহীমা ওয়ালা আলি ইব্রহীমা ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। (সহিহ উচ্চারণের জন্যে আরবিটা অবশ্যই দেখে শিখে নেয়ার অনুরোধ রইলো)

অর্থ, হে আল্লাহ, আপনি নবি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও উনার বংশধরদের উপর রহমত এবং বারাকাহ বর্ষণ করুন, যেরূপভাবে আপনি ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও তার বংশধরদের উপর রহমত এবং বারাকাহ বর্ষণ করেছিলেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। চলবে