নায়ক মান্নার মৃত্যুর কারণ জানালেন তার স্ত্রী

ছাড়পত্র ডেস্ক

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১

ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা মান্নার মৃত্যুর কারণ হিশেবে তার স্ত্রী শেলী মান্না জানিয়েছেন, সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা না দেয়ার কারণেই মান্নার মৃত্যু ঘটেছে। মান্নার ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকীর উপলক্ষে এফডিসিতে গণমাধ্যমের কাছে তিনি এ দাবি জানান।

শেলী মান্না বলেন, “মান্নাকে সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা দেয়া হয়নি। দিলে মান্না হয়তো আমাদের মাঝে বেঁচে থাকতেন।”

তিনি আরও বলেন, “মান্না মাঝরাতে যখন বাসায় ফেরে তখন তার বুকে হালকা ব্যথা করছিল। রাতে খাওয়াদাওয়া করেছে, কিন্তু ব্যথা যায়নি। সে নিজের স্বাস্থ বিষয়ে খুবই সচেতন ছিল। আমরা হলে হয়তো এতটা হতাম না। একটা অ্যালার্জি হলেও সে ডাক্তারের কাছে যেত।”

শেলী বলেন, “ওর অসুখবিসুখ বলতে কিছু ছিল না, শুধু এসিডিটি ছিল। যেহেতু ব্যথা কমছে না, মান্না ভাবল ইউনাইটেড হাসপাতালে যাই। কেন ইউনাইটেডে যাবে, কারণ ‘পিতা-মাতার আমানত’ ছবির শুটিং ইউনাইটেড হাসপাতালে করা হয়েছিল। তখন মনে হয়েছিল, ইউনাইটেড হাসপাতালটা ভালো। সব কিছুই প্রপার।”

তিনি আরও বলেন, “মান্না কিন্তু নিজে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে গেছে। ডাক্তারের ভাষায় অ্যাকুইট হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তার। যদি কারো কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় সে কোনোভাবেই গাড়ি চালিয়ে যেতে পারবে না। একটা স্টেপও নিতে পারবে না। ইউনাইটেড হাসপাতাল আমাদেরকে যেসব ফুটেজ দিয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে মান্না হেঁটে গেছে।”

শেলী মান্না বলেন, “মান্না বিভিন্ন টেস্ট করিয়েছে। এরপর ভর্তি হয়েছে। তাকে কিন্তু কেউ ধরেও নেয়নি। সে একজন স্বাভাবিক মানুষ গেছে। গ্যাসের পেইন, হার্টের পেইন সেইম। ডাক্তাররাও একইভাবে ট্রিটমেন্ট করেন। কোনো প্রস্তুতি না রেখেই মান্নাকে হার্টের ইনজেকশন দেয়া হয়েছে, যেটা উন্নত বিশ্বের চিকিৎসাশাস্ত্রে ঘটে না।”

তিনি আরও বলেন, “বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। এ বছরই মান্নার শুনানি হবে, মানুষ জানবে মান্নার মৃত্যু কিভাবে হয়েছে। বিষয়টি সবার কাছে ক্লিয়ার হয়ে যাবে।”

শেলী বলেন, “মান্না যখন হাসপাতালে ভর্তি হলো তখন ভোর পৌনে পাঁচটা। আমি যদি বাংলাদেশে থাকতাম তাহলে কী করতাম? যে হার্টের স্পেশালিস্ট, তাকে দেখাতাম। আমার যখন হাত ভেঙে গিয়েছিল তখন আমি অর্থোপেডিকস ডাক্তারের কাছেই গিয়েছিলাম। সাধারণ ডাক্তাররা কিন্তু আমার হাত জোড়া লাগাতে পারবে না।”

তিনি আরও বলেন, “মান্নার চিকিৎসা কিন্তু সাধারণ ডাক্তাররা করেছে। ট্রিটমেন্ট করে যখন কন্ট্রোলের বাইরে চলে গেছে। ৭টা ৪০-এর দিকে তারা হার্টের একটা ইনজেকশন দেয়। ইনজেকশনের নাম এসকে। অভিজ্ঞ ডাক্তার ছাড়াই এসব করা হয়েছে। আমরা কেস করেছি, এগুলো পয়েন্ট আছে। ব্যাংকক বলেন, উন্নত দেশে অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত রেখে, কার্ডিওলজিস্ট সঙ্গে রেখে তারপর ওই এসকে ইনজেকশন দেয়া হয়।”

শেলী বলেন, “মান্নার বেলায় এসব করা হয়নি। ওই ইনজেকশন দেয়ার পর মান্না গোঙরাইছে। গোঙরানিতে মান্না তখন বমি করে দিয়েছে। তাদের ডাক্তার রুটিন অনুযায়ী ৯টায় এসেছে। ডাক্তার ফাতেমার আন্ডারে ট্রিটমেন্ট। ওই হাসপাতালে কি প্রোসিডিউর ছিল না বলেন? ওই সময় ইমার্জেন্সিতে নিয়ে অভিজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে রাইট টাইমে রাইট চিকিৎসাটা করত, দুই ঘণ্টা ৪০ মিনিটের হিসাব কিন্তু দিতে পারেনি।”

উল্লেখ্য, টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জন্ম নেয়া মান্নার প্রকৃত নাম এস এম আসলাম তালুকদার। ছোটবেলা থেকে সিনেমার প্রতি তার ছিল প্রচণ্ড ঝোঁক। কলেজে পড়ার সময় প্রচুর সিনেমা দেখতেন। নায়ক রাজ্জাকের সিনেমা ছিল তার প্রিয়।

স্বপ্ন দেখতেন তিনিও একদিন অভিনয় করবেন। অনেকের ইচ্ছে থাকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার; কিন্তু তার ইচ্ছে ছিল নায়ক হওয়ার। হলেনও। কিন্তু বেশিদিন রইলেন না। তুমুল জনপ্রিয়তা নিয়ে চির বিদায় নিলেন।

মান্নার মৃত্যু এখন পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি তার কোটি কোটি ভক্ত। নিতে পারেনি তার পরিবারও। ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান মান্না।