
পরিণতি
উপন্যাস ১
সুলতানা পারভীনপ্রকাশিত : জুন ২৮, ২০১৮
হাসপাতালে বাবার কেবিনের বাইরে বসে আছি। পরশু রাতে হঠাৎ করেই বাবার বুকের ব্যথাটা বাড়ে খুব। হাসপাতালে ভর্তি করা হলে অবস্থার উন্নতি না দেখে কাল দুপুরে বাবাকে নিয়ে আসি ঢাকায়। এখন বাবার অবস্থা মোটামুটি ভালোর দিকে। কয়েকদিন অবজারবেশনে রাখতে হবে।
কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা। পরশু রাগ করে বীথিকে বলেছিলাম আর কথা বলব না। তারপর থেকে ও নিজেও আর কল দেয়নি। আমারও এত টেনশনের মধ্যে কল করার কথা খেয়ালও ছিল না। মেয়েটা যে কী করে, বুঝি না!
বাড়ি গিয়েছিলাম ক’দিন আগে। তখন থেকেই কিছু একটা হয়েছে ওর। পরশু সকালে বীথি কল করেনি দেখে এগারোটার দিকে কল করলাম। হ্যালো বীথি, কী করো?
ঘুমাচ্ছি।
কয়টা বাজে এখন? ক্লাস নেই আজ?
জানি না।
কী হয়েছে তোমার?
কিছু হয়নি তো...
তো এখনো ঘুমাচ্ছ মানে কি? আর তুমি না আমাকে সকালে আমাকে ডেকে দিচ্ছ?
কী হলো, চুপ করে আছো যে?
ঘুম পাচ্ছে আমার।
উঠে যাও না। নাস্তা করে ফেলো। এগারোটা বাজে।
উঠব পরে।
বীথি?
রাখছি, পরে কল দিব।
আচ্ছা। তাড়াতাড়ি নাস্তা করে নিবা।
কথাটা পুরো না শুনেই কলটা কেটে দিল। ভাবলাম হয়তো কেউ এসেছে, তাই। দুপুরে কল দিলাম। একই অবস্থা, ঘুম। রাতেও যখন বলল ঘুম পাচ্ছে, তখন হঠাৎ রাগ হলো কেন জানি!
তোমার কী হয়েছে বলো তো?
কোথায়? কী আর হবে?
তো আজ হঠাৎ এত ঘুম কোত্থেকে আসছে?
জানি না। ঘুম পাচ্ছে আমার।
যত ইচ্ছা ঘুমাও, যাও। কথাই বলব না তোমার সাথে আমি।
বীথিকে যখন কল করেছিলাম তখন সাড়ে আটটা কী নয়টা বাজে। দশটার দিকে বাবার বুকে ব্যথাটা বাড়লে আর ওকে কল করা হয়নি। মেয়েটা সবসময় অবশ্য এমন করে না। কোনো কিছু নিয়ে খুব চিন্তা করলেই হঠাৎ হঠাৎ এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কাণ্ড করে।
অথচ সচরাচর কী শান্ত বীথিটা! মুখে মিষ্টি একটা হাসি লেগে থাকে সবসময়। আর আমার সাথে বের হলেই যেন ওর চোখে-মুখে অন্যরকম একটা চাঞ্চল্য খেলা করে। একদম চুপ থাকতে পারে না বীথি। তবে সেটা বোধহয় শুধু আমার সামনেই। অন্তত ওর বান্ধবীগুলোর এসব নিয়েই আমাকে ক্ষ্যাপানো দেখে, সেটাই মনে হয়।
কিন্তু হঠাৎ করে কেন যে বদলে গেল মেয়েটা, কিছুই বুঝলাম না। বাড়ি যাওয়ার আগেরদিন বিকেলে ওর সাথে বেরিয়ে ছিলাম। ঘণ্টা দুয়েক ছিলাম একসাথে। অনেকক্ষণ আমার গায়ে হেলান দিয়ে বসে ছিল। এর মধ্যে শুধু একটা কথাই জিজ্ঞেস করেছিল আমাকে। আমি মরে গেলে তুমি কী করবে?
এটা কোনো কথা! বকে দিয়েছিলাম খুব করে। বকব নাই বা কেন? কিছু প্রশ্ন নিয়ে আমি কখনোই ভাবি না। অথবা ভাবতে চাই না। তাই উত্তরটাও সেদিন দেয়া হয়নি বীথিকে। ও বোধহয় এখনো রাগ করে আছে সেজন্য।
বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরার আগে একবার বীথির সাথে দেখা করতে হবে। মোবাইলটা বের করলাম পকেট থেকে। বীথিকে কল করার আগেই একটা নম্বর থেকে কল এলো। মোবাইলের স্ক্রিনে নামটা ভেসে উঠতেই আমার বুকের ভিতরে ধ্বক করে উঠল। ও কেন কল করেছে হঠাৎ?
চলবে