
A painting by Swapan Nandy
পরিণতি
উপন্যাস ২
সুলতানা পারভিনপ্রকাশিত : জুলাই ০১, ২০১৮
যে মানুষটা কল করেছে তাকে ভয়ের কিছু নেই। বীথির বান্ধবী নেহার নম্বর। বীথি নিজেই সেইভ করে দিয়েছিল আমার মোবাইলে। আঁতকে ওঠার কারণ হলো, নামটা। নেহার নামটা মোবাইলে ‘রেড অ্যালার্ট’ দিয়ে সেইভ করা। কারণটা জানতে চাইলে বীথি হেসে বলেছিল, যদি এই নম্বর থেকে কখনো কল আসে, বুঝবে আমার কিছু একটা হয়ে গেছে।
বীথির মুখের ভঙ্গি আর কথায় সেদিন হেসে ফেলেছিলাম। ঘটনাটা আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগেরকার। কিন্তু এতদিন পরে সত্যিই যখন কলটা এলো, তখন কীভাবে রিঅ্যাক্ট করব বুঝলামই না অনেকক্ষণ। কলটা বাজতে বাজতে একসময় থেমে গেল। সম্মোহিতের মতো দেখছিলাম কী ঘটছে! মোবাইলটা আবার বেজে উঠল। সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ঝেড়ে কলটা রিসিভ করলাম।
আবির ভাই... বীথি কোথায় কিছু জানেন?
নাতো। কেন, কি হয়েছে ওর?
সপ্তাহ খানেক ধরে কলেজে আসছে না। আর তিন-চারদিন হলো কারো কলই রিসিভ করছে না। ভাবলাম আপনি জানেন নাকি কিছু...। আমারও কাল থেকে কথা হয়নি। বাবা হসপিটালাইজড, তাই আমিও আর কল করতে পারিনি।ে
ও আচ্ছা। তোমরা একটু ওর বাসায় গিয়ে দ্যাখো, আমার সাথে কথা হলে জানাব।
জ্বি আচ্ছা।
হুঁম।
ভাইয়া, আপনাদের মধ্যে সব ঠিক আছে তো?
নেহা, হঠাৎ এ কথা কেন জিজ্ঞেস করছ?
না ভাইয়া, বীথিকে লাস্ট যেদিন দেখেছি কলেজে, চোখমুখ ফ্যাকাসে। এতটা ভেঙে পড়তে আমি দেখিনি কখনো ওকে।
আমি সত্যি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার সাথেও... তুমি প্লিজ একটু দেখো... প্লিজ! কী হয়েছে আমাকে একটু জানাও।
জ্বি আচ্ছা।
কলটা কেটে দিয়ে কীথিকে কয়েকবার কল দিলাম। আসলে কয়েকবার না। মোটামুটি ২০-৩০ বার। কল গেল। কিন্তু কোনো রেসপন্স নাই। মনের মধ্যে একটা ভয় ঢুকে গেল হঠাৎ। বীথি ঠিক আছে তো? আমি যদি কোনো কিছু নিয়ে বেশি চিন্তা করি, মেয়েটা কেমন করে যেন বুঝে যায়। এবারও বুঝতে পেরে গেছে বীথি? কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব? আমি তো কিছু বলিনি ওকে। আর কেউ কি বলেছে? কিন্তু কে?
আগের বারও ঠিক এমনই হয়েছিল। অনার্স ফাইনালের আগে। একটা সাবজেক্টের প্রিপারেশন খারাপ আমার। জ্বর ছিল কদিন। তাই পড়া হয়নি। কথাটা আমি ছাড়া আর কারো জানার কথা না। এমনকি প্রিপারেশন খারাপের কথা বীথিরও জানার কথা না। চিন্তা করবে, তাই অসুস্থতার কথাই আমি ওকে জানাইনি। অথচ কেমন করে জানি জেনে গেল মেয়েটা। জানা তো বড় কথা না। সমস্যা হলো, যখন দেখা করতে গেলাম। গাল ফুলিয়ে বসে আছে। চোখমুখ ফোলা। ১০০% বাজি ধরে বলতে পারি, আসার আগেও ঘণ্টাখানেক কেঁদেছে মেয়েটা।
আর সেই যে গুম মেরে বসেছিল, যাবার আগে একটাও কথা বলেনি। অবস্থা দেখে আমি মুখ পাংশু করে বললাম, আমার পরীক্ষাটা খারাপ হলে। সব দোষ তোমার। একথা শুনে বীথির মুখটা হয়ে গেল দেখার মতো। তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল সে। বুঝলাম, প্রিপারেশন খারাপের জন্য তার রাগটা ছিল না। বীথি রাগ করেছিল, ওকে আমার অসুস্থতার কথা না জানানোর কারণে। রাগটা ভাঙাতে পাক্কা এক সপ্তাহ সময় লেগেছিল তখন।
কিন্তু এবারে তো তেমন কিছুই ঘটেনি। তবে কেন? যে মেয়েটা ঘণ্টায় ঘণ্টায় কল করে, কথা না বলতে পারলে পাগল হওয়ার দশা হয়, সেই বীথিই আজ ক’দিন এমন অদ্ভুত হয়ে গেছে! বুঝতে পারছি, কথা না বলে থাকতে পারবে না বলেই বাহানা করে ঘুমাচ্ছে। আবার কী ঘুমের ওষুধ খেয়ে চোখ বুজেছে ও? কিন্তু কেন?
চলবে