পরিণতি

পর্ব ৪

সুলতানা পারভীন

প্রকাশিত : জুলাই ০৬, ২০১৮

বীথির বাবা-মা আমাকে দেখে একটুও অবাক হলেন না। এটা দেখে আমি নিজেই অসম্ভব অবাক হলাম। বীথির মা একনাগাড়ে কেঁদেই চলেছেন। কান্নাকাটি বোধহয় অনেকক্ষণ ধরেই করছেন। তাই কথাও বলতে পারছেন না। উনার কান্না দেখে আমার বুকের ভিতরটা তোলপাড় করে উঠল। হঠাৎ কেমন একটা ভয় ঢুকে গেল মনে। বীথি ঠিক আছে তো!

বীথির বাবা গুম মেরে বসে আছেন। আমাকে দেখে বোধহয় আমাকে একটু সাহস দেয়ার জন্য জোর করে হাসলেন। বললেন, তুমি তো আবির? বীথি প্রায়ই তোমার কথা বলতো।
জ্বি আংকেল...
কতবার বলেছি, তোমাকে কখনো বাসায় নিয়ে আসতে। কিন্তু এই মেয়েটা কী কারো কথা শোনে? তোমাকেও নিশ্চয়ই বলেনি যে, আমি আসতে বলেছি?
কই না আংকেল, ও আমাকে এসব কিছু তো...
জানি বাবা। এই মেয়ের এই এক সমস্যা। দুনিয়ার যত কথা তা বলবে, শুধু যেটা জরুরি সেটা বাদ দেবে।

আমি আংকেলের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছি। কী বলা উচিত, কী ভাবা উচিত, সব তালঘোল পাকিয়ে যাচ্ছে। বীথির মুখে ওর বাবা-মার কথা অনেক শুনেছি। উনাদের সাথে বীথির অসাধারণ বন্ডিয়ের কথাও শুনেছি। কিন্তু তাই বলে ও আমাকে ভালোবাসে জেনেও উনাদের রিঅ্যাকশান দেখে আমি নিজেই অভিভূত হয়ে যাচ্ছি।

কিন্তু বীথিটা কোথায়? কাকে যে জিজ্ঞেস করব, সেটাই বুঝতে পারছি না। নেহাকেও দেখছি না। বীথির আব্বু আবার গুম মেরে বসে আছেন। উনাকে জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে কীনা বুঝতেও পারছি না।

‘বুঝলে বাবা আবির, আমার বীথিটা এরকমই। সারাদিনের যত দুষ্টুমি, যত অবাক হওয়া ঘটনা সব ওর মাকে এসে বলে। ওর মা একসময় বিরক্ত হয়ে যায়। আমি বাসায় ফিরলে ও আমাকেও একই ঘটনাগুলো প্রথম থেকে বলে যাবে। তোমাকেও হয়তো বলে।’ বীথির বাবার গলাটা ধরে এসেছে, তাই চুপ করে গেছেন। চোখ পানিতে টলমল করছে। আমিও ভাবছি, বীথির দিন শেষের গোছালো বা অগোছালো পাগলামির কথাগুলো।

আঙ্কেল, বীথির কি হয়েছে?
কী হয়েছে বাবা সেটা আমি জানি না। খায় না। কোথাও যায় না। সারাদিন পড়ে পড়ে ঘুমায়। প্রথমে ভেবেছি, হয়তো তোমার সাথে কিছু হয়েছে। মিটমাট হয়ে গেলে ঠিক হয়ে যাবে। কয়েকবার জিজ্ঞেসও করেছি। ও কিছুই বলেনি। কাল থেকে শোয়া ছেড়েও উঠতে পারছে না। ডাক্তার ডাকলাম। ডাক্তার এসে তো মাথায় হাত...। বিপি নাকি সাঙ্ঘাতিক ফল করেছে। কাল সারাদিনে অনেক জোরাজুরি করে না কিছু খাওয়াতে পেরেছি, না স্যালাইন দিতে। নেহা যখন এসেছে বিকেলে তখন ডাক্তার একপ্রকার জোর করেই স্যালাইন দিয়েছে। তাই নেহাকে বললাম তোমাকে একবার আসতে বলতে। তোমার বাবাও নাকি হসপিটালাইডজড। তাই আর...
বাবা ভালো আছে এখন। বীথি কি করছে এখন?
কী করবে আর! অনেকক্ষণ চিল্লাচিল্লি করেছে স্যালাইন দেয়া নিয়ে। এখন বোধহয় আবার...
আঙ্কেল, আমি একটু ওকে দেখতে...
হ্যাঁ হ্যাঁ বাবা, যাও। নেহা মা, আবিরকে একটু বীথির রুমে নিয়ে যাও। আমি মেয়েটাকে আর এভাবে সহ্য করতে পারছি না।

নেহা আমাকে বীথির রুমে নিয়ে গেল। পরে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেল। এই প্রথমবার বীথিকে এতটা অপরিচিত লাগছে আমার। বীথির মাথার কাছে ফ্লোরে বসে মাথায় হাত বুলাচ্ছি। ও ঘুমোচ্ছে। ঘুমাচ্ছে বললে ভুল হবে। বোধহয় সেন্স হারিয়েছে। মুখটা একেবারে ফ্যাকাশে। রক্তশূন্য লাগছে। এই বীথি, ওঠো না প্লিজ... কখন আমার নিজের চোখ ভিজে গেছে বলতে পারব না। বীথিকে এ অবস্থায় দেখে আমার নিজের খুব অসহায় লাগছে।

কী করব এখন? আরো একবার ডাকব? ও কি শুনতে পাচ্ছে আমার ডাক?

চলবে