পরিণতি

উপন্যাস ৯

সুলতানা পারভীন

প্রকাশিত : জুলাই ১৯, ২০১৮

বীথিদের বাসা থেকে যখন বের হচ্ছি তখন ৯টা বাজে। আজ বীথির বান্ধবীরা কেউ ওর সাথে থাকবে না শুনে আমার কেমন জানি ভয় ভয় লাগল। কিন্তু করার কিছু নেই। বীথি কোনোমতে আর কাউকে ওর সাথে থাকতে দেবে না। ওর সাফ কথা, ও নাকি পুরোদমে সুস্থ এখন। এই মেয়েটাকে যে কেমন করে বুঝাই!

হসপিটালে এসে দেখলাম বাবা খাবার খেয়ে সবে শুয়েছে। কোনোরকম ভনিতা না করেই বাবার সামনে চেয়ারে বসলাম। বাবার চোখে মুখে কেমন রাগী ভাব। সেটা পাত্তা না দিয়ে বাবার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলাম। কথা বলাটা সত্যিই খুব জরুরি।
বাবা, কদিন আগে বীথির সাথে কথা হয়েছিল তোমার?
হুঁম।
কি বলেছিলে তুমি ওকে?
তার জবাব কি এখন তোকে দিতে হবে?
জবাব দিতে হবে কেন? আমি জানতে চাচ্ছি তুমি ঠিক বীথিকে কি বলেছিলে।
কেন? এই তিনদিনে ওই বজ্জাত মেয়েটা তোকে কিছু বলেনি সেটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?
তুমি বীথিকে কি বলেছ?
বলেছি তোর মাথাটা যেন আর না খায়। আর আমাদের যেন একটু শান্তিতে মরতে দেয়।
বাবা!
বাবা বলছিস কেন? খারাপ কিছু বলছি আমি! এই মেয়েটা দিনের পর দিন তোর মাথাটা বিগড়ে দিয়ে যাচ্ছে আর আমি সেটা মুখ বুজে মেনে নেব? তোর মা আর তোর বোন বোকা হতে পারে, আমি নই। প্রেম ভালোবাসা করা মেয়েগুলো একটা সংসারকে পুরাই দোজোখ বানায় দেয়।
বাবা, তুমি বীথিকে বলেছিলে আমাকে আর কল না দিতে?
বলব না? সেটা নিয়েও কোনো নাটক করেছে নিশ্চয়ই। এই মেয়ে যখন চুপ করে আমার কথাগুলো শুনেছে তখনই বুঝতে পেরেছিলাম, কোনো না কোনো নাটক করবেই করবে। হাতেনাতে প্রমাণিত হলো, দেখলি তো?
বীথি মোটেও নাটক করেনি বাবা। আমি সেদিন না গেলে হয়তো না খেয়েই মরে যেত।

আমার কথা শুনে বাবা হো হো করে হেসে ফেলল। কি বললি? মরে যেত? হা হা হা। এত নাটকও করতে পারে। মেয়েটার বাপ-মা কত বড় ছোটলোক। সব দেখেশুনেও মেয়েকে সাপোর্ট দিচ্ছে। হবে নাই বা কেন? এই মেয়েদের ব্যবসাই এইটা।
বাবা, তুমি এতটা খারাপ কথা বলতে পারবে আমি ভাবতেও পারিনি কখনো। তুমিও শুনে রাখো বাবা, বীথির যদি কিছু হয় তবে আমিও বাঁচব না। আর বীথির কাজটা তোমার নাটক মনে হতেই পারে, কিন্তু তোমার ছেলে যে কোনো নাটক করবে না সেটা তুমি ভালো করেই জানো।

বাবার রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। হসপিটালের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে রাগে নাকি ঘৃণায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার এখন। বাবা মানুষটাকে এখন কেমন অচেনা লাগছে। বাবা ঠিক কি কারণে এমন ব্যবহার করছে, কে জানে! কিন্তু বীথির ব্যাপারে বাবার রাগের কারণটা বুঝতে পারছি। আমি বীথিকে খুব ভালোবাসি এটাই বীথির সবচেয়ে বড় দোষ। অথচ বাবা আমার জন্য যেরকম মিষ্টি একটা বউ চান, বীথিটা হুবহু তেমন। সবাইকে একসাথে ভালোবেসে আগলে রাখার মতো একটা মেয়ে। একবার মা অসুস্থ হয়েছিল যখন, ও নফল নামাজ পরে মায়ের জন্য দোয়া করেছিল। এটা অবশ্য ও আমাকে বলেনি। ওর ডায়েরিটা না পড়লে কখনো জানতেই পারতাম না। অথচ বাবার ধারণা, বীথি আমাকে সরিয়ে নিচ্ছে উনাদের থেকে। মেহের হয়তো বীথির কথা মাকে বলেছে, আর মা হয়তো বাবাকে।

ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেছি, জানিও না। ছাড়া ছাড়া ঘুম হলো সারারাত। ঘুমটা ভাঙল সাতটা-সাড়ে সাতটার দিকে। মোবাইলের তোলপাড়ে। ঘুমটা কাটেনি তখনও। থেমে গিয়ে দু সেকেন্ড পর আাবার নড়ে উঠল। নামটা দেখে অবাক হলাম।

এত সকালে নেহার কল! আবার কি হয়েছে বিথির? ভালো আছে তো মেয়েটা?

চলবে