বিশ্বজয়ী হও

পর্ব ১২

অমিত কুমার কুণ্ডু

প্রকাশিত : জুলাই ১০, ২০২০

মানুষের যে ক’টি গুণ তাকে এগিয়ে নিয়ে যায় তার একটি ধৈর্য। ধৈর্য যার আছে সে বিশ্বজয় করতে পারে। ধৈর্যশীল ব্যক্তিকে ঈশ্বর সবকিছু দেন। যে ধৈর্য ধারণ করে সে সবকিছু পায়।

পরীক্ষার রেজাল্ট পেতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস ধৈর্য ধরেতে হয়। একটি নতুন ক্লাসে উঠতে একবছর অপেক্ষা করতে হয়। এসএসসি সার্টিফিকেট অর্জন করতে দশ বছর স্কুলে অধ্যায়ন করতে হয়। সব জায়গায় ধৈর্যের পরীক্ষা।

সারদা দেবী বলতেন, ‘সন্তোষের সমান ধন নেই, আর সহ্যের সমান গুণ নেই। পৃথিবীর মতো সহ্যগুণ চাই। পৃথিবীর ওপর কতরকমের অত্যাচার হচ্ছে, অবাধে সব সইছে।’

শ্রীরামকৃষ্ণও বলতেন, ‘সহ্যগুণের চেয়ে আর গুণ নাই। যে সয় সে রয়। যে না সয় সে নাশ হয়। সকল বর্ণের মধ্যে ‘স’ তিনটি, শ,ষ,স। সকলেরই সহ্যগুণ থাকা চাই।’

বন্ধুরা, কী চমৎকার কথা, `যে সয় সে রয়। সকলের সহ্যগুণ থাকা চাই।` সত্যই সহ্যগুণ থাকা চাই আর এ সহ্যগুণ ও ধৈর্যগুণ এক কয়েনের এপিঠ ওপিঠ। একে অপরের পরিপূরক।

একজন মা তার সন্তান জন্মদানের জন্য দশ মাস অপেক্ষা করেন। গাছের চারা রোপণ করলে কমপক্ষে বছর লাগে তার ফল পেতে। সর্বত্র ধৈর্য ধারণ। যেমন হাল ধরে রাখলে বড় কোনও সঙ্কট না হলে নৌকা ঠিকই গন্তব্যে পৌঁছায়। তেমনি জীবনের লক্ষ্য ঠিক রাখলে এবং সে লক্ষ্যের পথে হাটলে জীবনে সফলতা আসবেই। সে জন্য চাই ধৈর্য।

ধৈর্য ধরে মন প্রাণ এক করে পড়াশুনা করলে একজন খারাপ ছাত্রও ভালো ছাত্রের তকমা পায়। ভালো ছাত্র হতে গেলে শুধুমাত্র অধ্যয়ন এবং অধ্যয়নের দরকার।

আমরা যখন বিপদে পড়ি তখন সবচেয়ে দরকার হয় ধৈর্য ধারণের। কথায় বলে, বিনাশ কালে বুদ্ধি নষ্ট। বিপদে সঠিক পদক্ষেপ ফেলতে ধৈর্য ধরার বিকল্প নেই।

স্বামীজির ভাষায়, ‘এইটি জেনে রেখো যে, যখনই তুমি সাহস হারাও, তখনই তুমি শুধু নিজের অনিষ্ট করছ তা নয়, কাজেরও ক্ষতি করছ। অসীম বিশ্বাস ও ধৈর্যই সফলতালাভের একমাত্র উপায়।’

যখন কেউ দুর্ঘটনায় পতিত হয় তখন সেটা ঘটতে কয়েক মুহূর্ত লাগে কিন্তু সেই দুর্ঘটনা কাটিয়ে উঠতে তার দরকার হয় দীর্ঘ সময়ের। এখানেও ধৈর্য চাই।

বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দিনের পর দিন রাতের পর রাত। পাঠক বই পড়ে দিনরাত এক করে। লেখক দিনের পর দিন চিন্তা ভাবনা করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে লিখতে থাকে। চিত্রকর ছবি আঁকে নিখুত ভাবে, কর্মকার গহনা তৈরি করে দীর্ঘ সময় ধরে, ধীরে ধীরে।

ধৈর্য না ধরলে এদের কাজ শেষই হতো না, সুষ্ঠু ফলতো দূরের কথা। ড্রাইভার ধৈর্য হারালে দুর্ঘটনা ঘটে। খেলোয়ার ধৈর্য হারালে হয় পরাজিত, আর মানুষ ধৈর্য হারালে হয় লক্ষ্যচ্যুত। তাইতো কাজের সুষ্ঠু ফল পেতে ও বিপদে চাই ধৈর্য ধারণ। প্রথম প্রথম ধৈর্যকে তিতো মনে হলেও, ধৈর্যের ফল অত্যন্ত মিষ্টি। তোমরাও ধৈর্য ধরে, তোমার কাজ সুনিপুণভাবে করে যাও।

স্বামীজির ভাষায়, জাগো, জাগো, দীর্ঘ রজনী প্রভাতপ্রায়। দিনের আলো দেখা যাচ্ছে। মহা ঢেউ উঠেছে। কিছুতেই আর এর গতি রোধ করতে পারবে না, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা। আর ভয় পেও না, সবচেয়ে গুরুতর পাপ, ভয়! ওঠ, জাগো, যতদিন না লক্ষ্যে পৌঁছচ্ছো, ততদিন নিশ্চিন্ত থেকো না; ওঠো, আর একবার ওঠ, ত্যাগ ছাড়া কিছুই হতে পারে না। অন্যকে যদি সাহায্য করতে চাও, তবে তোমার নিজের ‘অহং’ ত্যাগ করতে হবে। বৈরাগ্যবান হও। তোমাদের এই ক্ষুদ্র জীবন বিসর্জন দিতে প্রস্তুত হও। ওঠ, জাগো; এই ক্ষুদ্র জীবন যদি যায়, ক্ষতি কি? সকলেই মরবে, সাধু অসাধু, ধনী দরিদ্র্য, সকলেই মরবে। শরীর কারও চিরকাল থাকবে না। অতএব ওঠ, জাগো এবং সম্পূর্ণ অকপট হও।"

আমি বিশ্বাস করি, তুমিও বিশ্বাস করো, ভয় ত্যাগ করে, সম্পূর্ণ অকপট হয়ে, ধৈর্য ধরে তুমি যে কাজ করবে, তার সুফল পাবেই পাবে। অবশ্যই পাবে। চলবে