বিয়ের পর মেয়েদের সেক্স ইন্টারেস্ট কমে যায় কেন

ডা. অপূর্ব চৌধুরী

প্রকাশিত : জুলাই ০৭, ২০২১

শরীরে সাবালকত্ব আসার পর থেকে সেক্স ডিজায়ার একটি নরমাল ইস্যু। সময় ও বয়সভেদে শুরুর দিকে এটি যেমন থাকে, একটি পরিণত বয়স একুশ থেকে পঁচিশে এটি পূর্ণতা পায়, চাহিদা সম্পূরক হয় এবং সেক্স ইন্টারেস্ট বেড়ে যায়, যা স্বাভাবিক।

দেখা যায়, বিয়ের দুই থেকে তিন বছর পর মেয়েদের সেক্স করার ইন্টারেস্ট কমে যায়। কিন্তু কেন এমন হয়? সেক্স ইন্টারেস্ট মানে হলো, সেক্স করার ইচ্ছা। এখানে সেক্সের চাহিদা কিন্তু কমে না, সেক্স ডিমান্ড কমে না। শুধু যার সাথে থাকে, তার সাথে সেক্স করতে ইন্টারেস্ট জাগে না মেয়েদের। শরীরে ইচ্ছেটি মরে যায়, কিন্তু ক্ষুধা থাকে। যেমনটি অনেক সময় আমাদের ক্ষুধা আছে পেটে, কিন্তু খেতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু কেন এমন হয় ?

ছেলেদেরও বিয়ের পর এমন সমস্যা হতে পারে। তবে তুলনামূলকভাবে শারীরিক অসুস্থতা বা অক্ষমতা ছাড়া ছেলেদের সেক্স ইন্টারেস্টের ক্ষেত্রে বিয়ে তেমন প্রভাব ফেলে না। কারণ সিম্পল। ছেলে ও মেয়েদের সেক্স স্টিমুলেশনের প্যাটার্ন একইভাবে কাজ করে না। যদিও সেক্স হরমোন দুজনেরই একই।

বেশ কয়েকটি কারণে বিয়ের পর মেয়েদের সেক্স ইন্টারেস্ট কমে যায়। এ বিষয়গুলো নিচে আলোচনা করা হলো:

এক. মেয়েদের সেক্স ইন্টারেস্টটি মুডের ওপর নির্ভর করে বেশি। মুড মেয়েদের মোটিভেট্যাড্ করে সেক্সের ক্ষেত্রে অনেকখানি। বিয়ের পর সাংসারির ব্যস্ততা ও বিচিত্রতা এই মুডকে অনেকখানি নিয়ন্ত্রণ করে। সিঙ্গেল থাকা অবস্থায় লাইফ অনেক মনোটোনাস থাকে মেয়েদের।

দুই. মাতৃত্ব মেয়েদেরকে সেক্সের ব্যাপারে সাবকনসাসলি ডিমোটিভেটেড করে। এর কারণ, সমাজ। সমাজে মাদারহুড কনসেপ্টটি একধরনের ডিসেকচুয়েলাইজ। মা হওয়ার পর মেয়েদের শরীর ও মনে ভিন্ন একটি মানসিক টার্ন নেয়। এজন্যে দেখা যায়, ছেলেমেয়েরা একটু বড় হতে থাকলে বাবা-মা আলাদা বিছানায় ঘুমোতে শুরু করেন, যা তাদের সেক্স ইন্টারেস্টকে আরও কমিয়ে দেয়। কেবল মাঝে মাঝে কর্তা রাতের খাবারের পর ইশারা দেবেন, আজকে আইসো।

তিন. স্ত্রী যদি বারবার কোনো অজুহাত তোলেন যে, তার কিছু করতে ইচ্ছে করছে না বা শরীর ভালো না— এমন সব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েরা যখন ইমোশনালি তার হাজব্যান্ড কিংবা পার্টনারের সাথে কানেক্ট করতে পারে না, তখন মেয়েদের সেক্স ইন্টারেস্ট কমে যায়। সরাসরি বললে সংসারের ক্ষতি হবে ভেবে কোনো একটা অজুহাত তুলে এড়িয়ে যেতে চায়। তবে সংসার ধরে রাখতে, ইচ্ছা না থাকলেও মাঝে মাঝে বেলতলায় যায়।

চার. কোনো মানসিক পীড়া, বিষণ্ণতা, দুশ্চিন্তা দীর্ঘদিন একনাগাড়ে চলতে থাকলে মেয়েরা সেক্সে ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলে।

পাঁচ. সেক্স ড্রাইভকে বলে লিবিডো। সময় ও পরিস্থিতি ভেবে লিবিডো কমবেশি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যখন শরীরের নিজের কোনো রোগ থাকে তখন মেয়েদের সেক্স ইন্টারেস্ট কমে যায়। যেমন থাইরয়েড সমস্যা, বিশেষ করে হাইপোথাইরয়েডিজম, আর্থ্রাইটিস, ক্যান্সার, আন কন্ট্রোল ডায়াবেটিস, ক্রনিক স্ট্রেস, হরমোন ইমব্যালেন্স, কিছু মেডিসিন খেলে লিবিডো কমে যেতে পারে। যেমন: এন্টিহিস্টামিন, ব্লাড প্রেশার মেডিসিন কিংবা আন্টি ডিপ্রেসেন্ট ট্যাব্লেটস। জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল খেলে প্রতি দশজনের মধ্যে দুজনের উল্টো সেক্স ড্রাইভে কমে যায়। শরীরে আয়রন কম থাকলে বা এনিমিক হলে লিবিডো কম থাকতে পারে।

ছয়. বেশি একটিভ লাইফ মেয়েদের সেক্স ড্রাইভকে অনেক সময় ডিএকটিভ করে দেয়। বিশেষ করে চাকরিজীবি মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি হয়। এর কারণটিও স্বাভাবিক। মেয়েরা চাকরি করলেও সংসারের কাজগুলো কিন্তু তাদের কমে না। একটি মেয়েকে তিনটি সেক্টরে কাজ করতে হয় তখন। কিন্তু পুরুষরা কেবল ঘরের বাইরে চাকরি করলেই দায়িত্ব যেন শেষ। মেয়েরা চাকরি করলে অফিসে কাজ করে এসে সংসারের কাজগুলিও তাদের করতে হয়, বাচ্চাদের দেখাশোনাও করতে হয়। দিনশেষে নিজের ইচ্ছার কোনো দাম থাকে না। না পেতে পেতে আর খাওয়া হয় না, মন আর খেতেও চায় না।

সাত. একেকটি মানুষের সেক্স সিগন্যাল একেক রকম। একটি মেয়েরও তাই। বেশিরভাগ দাম্পত্য জীবনে স্বামী বা পার্টনার এটি বোঝে না। মেয়েটি তার মতো সেক্স সিগন্যাল না পেলে স্টিমুলেটেড হবে না। বিয়ের পর মেয়েরা এমন করে তাদের সেক্স সিগন্যালটি না পেয়ে পেয়ে একসময় ইন্টারেস্ট হারিয়ে ফেলে। সেটা নিজের ডিজায়ারের প্রতি, সেটা পার্টনারের প্রতি, এমনকি সেটা নিজের ডিমান্ডের প্রতিও ইন্টারেস্টলেস হয়ে উঠতে পারে। ধারালো ছুরিও বেশিদিন ফেলে রাখলে এমনিতেই জং ধরে।