বেশ্যাকন্যা

পর্ব ২

সরদার মেহেদি হাসান

প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮

ভাবনা শেষ। একদিন রওনা দিলাম কান্দাপট্টি পতিতাপল্লীর উদ্দেশ্যে। সঙ্গে নিলাম এসএসএস এর মামুন ভাইকে। সকাল ১০টা। কান্দাপট্টি পতিতাপল্লী টাঙ্গাইল মূল শহরের খুব নিকটেই অবস্থিত। রাউ-শেপ মূল পাকা রাস্তা ঘেঁষেই এর অবস্থান। পল্লীটি রাস্তা ঘেঁষা হওয়ায় মেয়েরা রং-বেরঙের গাঢ় মেকাপ নিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যায় খদ্দের ধরার জন্য। রাস্তা দিয়ে পুরুষ মানুষ দেখলেই তারা হাত ইশারা করে কাছে ডাকে, কেউবা চোখ মারে, কেউবা টিপ্পনি কাটে, কেউবা শরীরের বিভিন্ন ভাঁজ দেখিয়ে খদ্দেরদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে।

আমরা রিক্সা থেকে নেমে দাঁড়িয়েছি পল্লীর সামনের রাস্তায়। একটি মেয়ে মুচকি হেসে আমাকে তার ঘরে যাবার জন্য আমন্ত্রণ করল। কিন্তু মামুন ভাইকে আমার পাশে দেখে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে গেল। এখন আমি কিছুটা আগ্রহ দেখিয়ে মেয়েটিকে বললাম, চলো, আমি তোমার ঘরে যাব।
সে বলে উঠল, না-না, যাব না। আমার এখন খদ্দের ধরতে হবে।
বলো কি? আমি তো তোমার খদ্দের হয়েই যাব, পেমেন্ট করব।
না-না, আপনে এনজিওর লোক।
না, আমি এনজিওর লোক নই। মামুন আমার বন্ধু, আমি তোমার সঙ্গে সময় কাটাতে চাই।
মেয়েটি কথা না বলে চুপ করে আছে। মামুন ভাই বলল, আরে চলো, চলো। ঢাকা থেকে বন্ধু আসছে তোদের সঙ্গে একটু মাস্তি করবে, চলো।
মেয়েটি এবার কিছুটা আস্থা পেয়ে আমাদের নিয়ে তার ছোট্ট টিনশেডের ঘুপরি ঘরে গেল। যেতে যেতে চোখে পড়ল অজস্র প্রকৃতির নারী ও পুরুষ। ভিতরে ঢুকে আমার কেন জানি মনে হলো, আমি অন্যকোনও গ্রহের মধ্যে প্রবেশ করতে চলেছি। শুধুই নারী-পুরুষের মিলনমেলা। মেয়েটির ঘরে প্রবেশ করলাম। ছোট্ট ঘর। একটি কাঠের চকি বসানো রয়েছে। প্রচুর অগোছানো পরিবেশ। মানুষ শুধুই কামের জন্য এখানে আসে, কাজের জন্য আসে না তা ঘরের পরিবেশ দেখেই বুঝা যায়। আমি দাঁড়িয়ে থাকব নাকি চকিতে গিয়ে বসব তা বলতেই সরাসরি শুয়ে পড়লাম মেয়েটি বিছানায়। মেয়েটির অপরিচ্ছন্ন বালিশ-বিছানা থেকে মৌ-মৌ করে ভেসে আসছিল দম আটকানো কসমেটিকস এর গন্ধ। আমি দু-চোখ বন্ধ করে জোরে একটা নিঃশ্বাস নিলাম।
মামুন ভাই বলল, ভাই গল্প করেন, আমি ঘুরে আসছি।
ঘরে আমরা দুজন। মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে। আমি মেয়েটিকে বললাম, দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি আমার পাশে এসে শুয়ে পড়বে?
মেয়েটির অবাক হবার কথা নয়, কিন্তু অবাক!
আমি বললাম, তুমি কাপড় খুলতে পারো, আবার নাও খুলতে পার।
মেয়েটি এবার অনেকটা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল, ওই মিয়া, সত্যি করে কন তো, আপনে কি সত্যি সত্যিই কি বইতে আইছেন?
এবার আমার অবাক হবার পালা। বলো কি? বসতে আসব কেন?
তাহলে কাপড় খুলতে কন ক্যা?
আচ্ছা, কাপড় খুলতে না চাইলে দরকার নেই। তবু বসো।
হা হা হা... মেয়েটি হেসে উঠল, ওই মিয়া, কাপড় না খুললে বসব ক্যামনে?
আমি অনেকটাই অবাক হয়ে বললাম, তোমাদের এখানে বসতে হলে কাপড় খুলে বসতে হয় নাকি?
হা হা হা... ধুর মিয়া, মশকরা করেন? অন্য কেউ হলে তো এরই মধ্যে এক হিট মেরে দিত।
আমি তো তোমার কথা বুঝতেছি না, হিট-মিট কি কও?
আরে মিয়া, হিট বোঝেন না? চো... আইছেন?
আমি একটু হেসে বললাম, বুঝি না বলেই তো এসেছি। বুঝিয়ে বলো।
মেয়েটির উত্তর, হিট হচ্ছে মিলনের স্থায়ীত্বকাল। প্রতি হিট আমি নেই একশো টাকা। প্রতি হিট দশ মিনিটের বেশি বাড়তে দেই না। টেকনিক আছে।
আর বসার ব্যাপারটা?
আরে মিয়া, বসা মানে মিলিত হওয়া। আপনে কি বইবেন? মানে মিলিত হবেন?
ও...আচ্ছা, বুঝলাম।
এরমধ্যে মামুন ভাই চলে আসল। বলল, মেহেদী ভাই চলেন নার্গিস আপার সঙ্গে পরিচয় করে দেই আপনাকে।
আমি পকেট থেকে পাঁচশো টাকা বের করে মেয়েটির হাতে ধরে দিয়ে বেরিয়ে যেতে থাকলাম ঘর থেকে। মেয়েটি বলল, বন্ধু আবার এসো, তোমার কাছে টাকা চাই না। তুমি এমনিতেই এসো...