
অলঙ্করণ: দীপাঞ্জন সরকার
বেশ্যাকন্যা
পর্ব ৭
সরদার মেহেদি হাসানপ্রকাশিত : মার্চ ০২, ২০১৮
দেখতে দেখতে ছয়-সাত মাস পার হয়ে গেল। আরও কত কিছু জানার আছে, বোঝবার আছে। এর মধ্যে শুটিংয়ের একটি সম্ভাব্য তারিখ ঠিক করলাম। রুমি ভাই একদিন ফোন করে বললেন, আপনার সঙ্গে আমাদের অ্যাডমিন পরিচালক কথা বলতে চান, আপনি কবে আসবেন?
আমি দু’এক দিনের মধ্যেই সময় করে টাঙ্গাইলে গেলাম। দেখা করলাম আডমিন পরিচালকের সঙ্গে। উনি বললেন, “মেহেদি ভাই, আপনি মেরিকে নিয়ে কাজ করছেন ভালো কথা, কিন্তু তার চেহারা স্ক্রিনে দেখানো যাবে না।”
কারণটা কি?
আমরা চাই না সবাই তাকে চিনে ফেলুক।
আমি বলি, সে যদি বিয়ের পর পর্দা করে চলে তাহলে তো তাকে কারও চেনার কথা নয়। তাকে আড়াল করে রাখলেই কী সব সমস্যা মিটে যাবে? নিষিদ্ধপল্লী বলে কোনও কথা নয়।’ সভ্য সমাজের যে কোনও মানুষের ছবি ক্যামেরায় ধারণ করার আগে তার অনুমতি নেয়া প্রয়োজন। অনুমতি নিলে সমস্যা থাকার কথা নয়। আমি এটা নিয়ে ছয়-সাত মাস ধরে কথা/কাজ করে যাচ্ছি ও অনুমতি নিয়েছি। একজন মেরিকে পর্দার আড়ালে রাখলেই কি সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে?
মেরি তো একজন প্রতীকী। তার মতো অন্য দশজনের চেহারা জনসম্বুখে দেখানো খারাপ কিছু নয়। খারাপ হচ্ছে, আমাদের বিচার-বিবেক-বুদ্ধি-চরিত্র ও আচরণের। সভ্য সমাজের কেউ একজন মেরির মতো মেয়েদের গোপনে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে যাবে এবং ছেলের পরিবার ও সমাজ সহজে মেনে নেবে, তার তো কোনও গ্যারান্টি নেই। আগে সমাজের বিবেকের শুদ্ধিকরণ করতে হবে। এদেরকে সহজে মেনে নেবার দায়িত্ব নিতে হবে এই সভ্য সমাজের, সরকারের। তবেই এককভাবে কোনও একজন ছেলে তাদেরকে সহজেই নিজের জীবনের সঙ্গে মেনে নেবার স্বপ্ন দেখবে। চিন্তা করবে রঙিন ভালোবাসার জালে তাদেরকে আবদ্ধ করতে।
হে সমাজ, তুমি সভ্য হও। সভ্য হও সত্যকে মেনে নিতে। হাজারো বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আমি সত্যি সত্যিই শুটিংয়ের ডেট করে ফেললাম। নিউ স্টার থেকে যাবতীয় শুটিং ইউনিট বুকিং দিলাম। নিউ স্টারের কর্ণধর খোকন ভাই আমাকে সকলপ্রকার সাহায্য করবার প্রতিশ্রুতি দিলেন। আমার আরটিভির সহকর্মী ও বন্ধু এনামুল হক মিঠু আমার সকল কাজের শুভাকাঙ্ক্ষি ও সহযোদ্ধা। আমার সকল কাজেই মিঠু ছিল আমার সঙ্গে। ক্যামেরাই ছিল আমার একান্ত ছোট ভাই সহকর্মী আল মামুন। শুটিং ইউনিটে যোগ হয়েছে দশজনের বহর। বহরের প্রতিটি সদস্যদের মিডিয়ার অসংখ্য কাজের অভিজ্ঞতা থাকলেও, ব্রথেলে কাজ করবার অভিজ্ঞতা কারোরই নেই। এ কারণে সবার শরীরে ১০০ ডিগ্রি তাপমাত্রা বইছে।
কি হবে?
শুটিং করা সম্ভব তো?
ক্যামেরা ভেঙে ফেলবে না তো?
ভাই, মারামারি হলে আমরা কি করব?
ইত্যাদি... ইত্যাদি...।
আমি ভাবছি, এতদিনে আমার যে অবস্থান তৈরি হয়েছে তাতে আমি সুন্দরভাবেই শুটিং শেষ করে নিয়ে আসতে পারব। বাকিটা আমার কপাল। দেখিই না কী হয়!
চলবে...