
বেশ্যাকন্যা
পর্ব ৯
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : মার্চ ০৫, ২০১৮
ক্যামেরা চলছে... হঠাৎ...
একটি মেয়ে বক-শালিকের মতো উড়ে এসে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল। বুকের উপর ছড়িয়ে থাকা আকাশি-ব্লু রঙের ওড়নাটি খুলে নিয়ে ডান হাতে মাথার ওপর ঘোরাতে ঘোরাতে কামিজের সামনের অংশ বাম হাতে ওপরের দিকে উঁচিয়ে ধরল। নাচতে নাচতে উচ্চস্বরে হেসে যেন আমাদেরকে ব্যঙ্গ করছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আমাদেরকে নয়... সমগ্র জাতিকে ভেংচি কাটছে।
থেমে নেই ক্যামেরা... অজস্র নারীর মাঝে অল্প বয়সী একটি মেয়ে, মাথার দু’ধারের চুলে হলুদ ফিতার ফুল বানিয়ে বসিয়ে দিয়েছে নিজের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য। পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে পূর্ণ যৌবনা উজ্জ্বল-গোলাপি রঙের সালোয়ার-কামিজ পরিহিতা একজন নারী। তার ডান হাতে শোভা পাচ্ছে একটি মোটা পলা চুড়ি, গলায় রুপালি চেইন, কানে দুল, ঠোঁটে কাল লিপিস্টিক, দু’চোখে আই-লাইনারের কালো আঁচড়, মাথার দু’ধারের চুলে গোলাপি ফিতার ফুল বসিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাড়া বুঝি আর সইছে না, এমনভাবে দৌড়ে এসে ১৩-১৪ বছরের একটি ছেলে হুট করেই ছোট মেয়েটির হাত ধরে গলি পেরিয়ে ঘরের দিকে এগুতে থাকল। কেউবা এক হাতে আয়না নিয়ে নিজের শরীরের রূপ-সৌন্দর্য ঠিক করতে ব্যতিব্যস্ত।
ক্যামেরা বন্ধ করার সময় নেই... এ গলি... ও গলি, সবখানেই বিভিন্ন বয়সের পল্লীর ছোট্ট শিশুদের হট্টগোল। তাদেরই মাঝ থেকে দালাল গোছের মাঝবয়সী একজন লোক হাতের তর্জুনি উঁচিয়ে আমাদেরকে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে। একটি মেয়ে কত অশ্লীলভাবে তার জিহ্বাকে বের করে, ঘুড়িয়ে-ফিরিয়ে দেখানো যায় তার কিছুটা নমুনাপত্র দেখাচ্ছে। এমন কসরত করলে কি পোলাপানের মাথা ঠিক থাকে? ধৈর্য্য থাকলেও তারও তো একটা সীমা আছে! আমার ইউনিটের প্রতিটি সদস্যদেরই ধৈর্যের সীমা প্রখর। তা না-হলে ওদেরকে খুঁজে বের করতেই আমার দিন শেষ হয়ে যেত। শুটিং করতাম কখন? তবে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছিল রাজরাড়ী দৌলতদিয়া ঘাট পতিতাপল্লীতে, তা লিখব পরবর্তীতে।
আমরা শুটিং করছি... হঠাৎ এক খালা এসে হাজির হলো আমাদের সামনে। মিঠু ভাইকে দেখে বলল, বাবা, কি খবর?
মিঠু ভাই বলল, হ্যাঁ চাচি ভালো?
তুমি এতদিন আসো নাই কেন?
আমরা তো সবাই আকাশ থেকে পড়লাম। জিজ্ঞেস করলাম, কি খবর মিঠু ভাই? তুমি এর আগে এখানে কতবার আইছো?
আরে না, ধুর। আমি. তো এই প্রথম তোর সঙ্গে আসলাম।
না-না, তুমি মিথ্যা কথা বলছ। খালা তোমারে চিনল ক্যামনে?
আরে নাহ, খালা বুঝি অন্য কারে দেখছে।
খালা বলল, না বাবাজি, আমি তোমারেই দেখছি। তুমি গতবার টাকা না দিয়াই গেছো গা।
মিঠু ভাই হেসে উঠল, হা হা হা। আমি এ কোন গ্যাঁড়াকলে পড়লাম রে বাবা!
অবস্থা দেখে আমরাও হাসছি, হা হা হা!
এক সময় আমি খালাকে বললাম, হইচে খালা, হইচে। এই নেন একশো টাকা।
একশো টাকার যা দিছেন, তাতেই মিঠুর একশো বছর মনে থাকবে... হা হা হা। মিঠু আমার প্রচণ্ড ভালো বন্ধু। এখানে এসে তাকে দেয়া আমার তরফ থেকে মজার উপহার... হা হা হা।
মামুন, শুধু হাসলেই কি হবে? ভিডিও করো ভিডিও...
বৈশাখের পান্তা ভাত। শখের মূল্য এক হাজার দুশো টাকা। হিটের মূল্য একশো টাকা। মাঝে মাঝে ভাবি, কখনো কখনো নারীর ইজ্জতের মূল্য এক প্লেট পান্তা ভাতের চেয়েও কম। মায়ের হাতে মাখা পান্তাভাত এক চুমুকে যতটা মুখে টেনে নেয়া যায়, নেয়ার পর আমাদের ক্যামেরার সামনে মুখ ফিরিয়ে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে ছোট্ট মেয়েটি। আমরা হাসছি। সে অবাক হচ্ছে। মায়ের প্রশান্তির দৃষ্টি তখন তার আদরের কন্যা শিশুটির দিকে। অসাধারণ মুহূর্তের প্রতিচ্ছবি। এখানে গলির সংখ্যা অনেক। যৌনকর্মীর তুলনায় ঘরের সংখ্যা কম। অধিকাংশ ঘরেই রয়েছে ডবল বিছানা। মাঝে শুধু পাতলা কাপড়ের আবরণ। তাতেই খুশি একই ঘরে অবস্থানকৃত দুই নারী।