বেশ্যাকন্যা

পর্ব ২৯

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : মার্চ ২৬, ২০১৮

মায়া বলল, লজ্জা? লজ্জা কিসের? বেশ্যার আবার লজ্জা থাকে নাকি?
বললাম, বেশ্যাদের কি লজ্জা থাকতে নেই?
লজ্জা! খদ্দের আইলে বইতে বইতেই সময় পার। লজ্জা পাব কখন?
তাহলে কি বলছো, তোমার লজ্জা নেই?
লজ্জা থাকবে না কেন? লজ্জা নেই তোমাদের।
কেন? কিভাবে?
তোমরা আমাদেরকে ঘেন্না করো, আবার লোকের চোখের আড়ালে ছুটে আসো আমাদের ঘরে। তাহলে লজ্জা তোমাদের আছে? কখনও কখনও তোমরা একসাথে চার-পাঁচজন আমাদেরকে নিয়ে রুমে ঢোকো। তখন লজ্জা করে না?
এখন দেখছি, তুমিই আমাকে লজ্জা দিচ্ছ। আচ্ছা, তাহলে তুমি আমার গল্পের নায়িকা হচ্ছো?
হ্যাঁ, হবো। কিন্তু আমি তো অভিনয় জানি না।
সমস্যা নেই, অভিনয় শিখিয়ে নেব। কিন্তু তোমার বাবু অভিনয় করতে দেবে?
অভিনয় করতে না দিলে প্রয়োজনে বাবু পরিবর্তন করে ফেলব।
বলো কি? বাবু চেঞ্জ করে ফেলবে?
তোমার জন্য এতটুকু করতে পারব না?
আমি ধন্য... আমি ধন্য...
কেন?
কেন আবার? এই যে, তুমি আমার জন্য তোমার বাবুকেও ত্যাগ করতে চাচ্ছো।
বন্ধুর জন্য এতটুকু করতে পারব না?
না... না... আমি বন্ধু হতে চাই না, তোমার প্রেমিক হতে চাই।
আমি তোমাকে প্রেমিক হিসেবে পেতে চাই না।
বলো কি? আমার কি যোগ্যতা নেই?
অনেক অনেক বেশি যোগ্যতা আছে। কিন্তু আমি বন্ধু করেই পেতে চাই।
তোমার কাছে বন্ধু ও প্রেমিকের পার্থক্য কি?
প্রেমিক যে কেনো সময়ে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে। আমার জীবনে আবারও নতুন প্রেমিক আসতে পারে, কিন্তু বন্ধু? সারাজীবন ধরেই বন্ধু বন্ধুই থাকে। এখন তুমিই বলো? কি হতে চাও?
ঠিক আছে বন্ধু। আমার খুব লোভ হচ্ছে...
কিসের?
নাহ! থাক।
ঠোাঁটে জল আসছে?
আসা আসা ভাব।
সমস্যা নেই। ওইটা পুরুষদের সহজাত প্রবৃদ্ধি, খাবে?
দিলে তো খেতাম।
খাও। পকেটে পয়সা আছে?
হ্যাঁ।
কত?
কত লাগবে?
জানো না? কোনও দিন খাওনি?
খেয়েছি। তবে এখানে খাইনি।
আহারে, পোলার লোভ কত...
নাও, টাকা নাও।
বন্ধুর কাছে টাকা নিব?
নিলে সমস্যা কি?
নিব না। তুমি সখ করেছে খাবে, আমার টাকা দিয়েই খাওয়াব।
ঠিক আছে। বন্ধু বলে মেনে নিলাম। এখানে এনে খাব? নাকি গিয়ে খাব?
আমরা মিষ্টির দোকানে বসে থেকেই খাব।।
আচ্ছা। তোমার উড়তে ইচ্ছা করে না?
কোথায়?
মুক্ত আকাশে...
তোমরা তো বেঁধে রেখেছো।
যদি মুক্ত করে দেই?
তুমি পারবে মুক্ত করে দিতে?
চেষ্টা করতে পারি।
লাভ নেই।
কেন?
তুমি চাইলেও অন্যরা চাইবে না।
অন্যরা কারা?
যারা চায়, যুগ যুগ ধরে আমরা এভাবেই খাঁচার মধ্যে আবদ্ধ থাকি।
খাঁচা বলছো কাকে?
আমার সমাজ নামক পল্লীকে।
খাঁচার মধ্যে উড়ে মজা পাও?
তুমি অন্ধকার ঘরে কতক্ষণ থেকেছো?
আমি জানি না। তবে অন্ধকারে থাকতে ভয় পাই।
ভয় পাও কেন? আমাদের এই অন্ধকার জগতে আসতে তো তোমরা ভয় পাও না।
ওই যে, ধমনিতে খারাপ রক্ত বইতে থাকে, তখন ছুটে আসি তোমাদের এই অন্ধকারে।
খারাপ রক্ত ফেলে দিয়ে শরীরে ভাল রক্ত ভরিয়ে নাও।
না, ওইটাতে আমার আগ্রহ নাই্। যদি টাকা শেষ হয়ে যায়। তাহলে রাতের অন্ধকারে তোমাদের এখানে আসব কি করে?
তোমরা আসলে কি চাও?
কার কাছে?
এই যে, আমাদের কাছে।
সুখ।
ঘরে সুখ পাওনা?
পাই।
তাহলে?
নিষিদ্ধ সুখ নিতে আমি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি।
অভ্যাসটা পরিবর্তন করো। দিনের আলোতে নিজের চেহারা দেখতে ভয় পাও কেন?
কেউ যদি জেনে যায়।
লোকে জানলে কি হবে?
আমি চরিত্রহীন হয়ে যাব। সমাজে মুখ দেখাতে পারব না।
তাহলে আমাদেরকে মুখ দেখাও কি করে?
তোমরা তো সভ্য সমাজের কেউ নয়।
আমরা কি?
তোমরা বেশ্যা।
আমাদের নাম ধরে ডাকতেও কি তোমাদের ঘেন্না হয়?
তোমাদের ভালো নামে ডাকব কেন? পরে যদি তোমরা ভালো হয়ে যাও!
তোমরা কি চাও না, আমরা ভালো হয়ে যাই?
তোমরা ভালো হবে কেন? তোমরা ভালো হয়ে গেলে আমরা যাব কোথায়?
আসলেই। তোমাদের কোনও দোষ নেই। দোষ হচ্ছে তোমাদের রক্তের।

চলবে...