
বেশ্যাকন্যা
পর্ব ৩০
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : মার্চ ২৭, ২০১৮
মায়ার ঘরে আসার পথে আজকে বেশ কিছু জিনিস পর্যবেক্ষণ করলাম। এ পল্লীতে জন্ম নেয়া মেয়ে শিশুরা জন্মের অন্ধ নিয়তি হিসেবে ভবিষ্যতের যৌনকর্মী হিসেবে বেড়ে উঠবে, সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু ছেলে শিশুরা কী হিসেবে বেড়ে উঠবে? আমরা আমাদের সন্তানদের চোখের দু’ফোটা পানি মাটিতে ঝরার আগেই কোলে তুলে নিয়ে আদরের বন্যায় ভাসিয়ে দেই। চেষ্টা করি সন্তানকে বুকের মাঝে অতি আদরে লুকিয়ে রাখতে। এ পল্লীর নারীরা, যাদের দুধের বাচ্চা কিংবা ২/৪ বছরের ছোট্ট শিশু রয়েছে, তাদের ঘরে খদ্দের এলে তারা তখন কি করবে?
এখানে মানবিকতার মূল্য কম। পেটের ক্ষুধা বেশি। জীবন মানেই দেহ-বিলাস। দুঃস্বপ্নের ভবিষ্যৎ। বন্ধনহীন পরিবার। লজ্জানত পৃথিবী। দেশের সকল পল্লীতেই বহু বছর আগে থেকেই একটি মর্মাহত ঘটনার প্রচলন ছিল, যদিও এমন দৃশ্য বর্তমানের কোনও নিষিদ্ধ পল্লীতে লক্ষ্য করা যায় না। আগে এসব পল্লীর প্রায় প্রতিটি ঘরের সামনে কিংবা নির্দিষ্ট একটি ঘরে ছোট ছোট শিশুদের পায়ে লোহার শিকল পরিয়ে বেঁধে রাখা হতো। যাতে মায়েরা নিশ্চিন্তে ঘরে খদ্দের নিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারে। পায়ে লোহার চেন পরা কোনও শিশুর কান্নায় ঘরের মধ্যে অবস্থানরত মা কিংবা খদ্দেরকে কখনও বিচলিত করতো না। কারণ একজনের থাকে নিজ কিংবা সন্তানের ক্ষুধা মেটানোর চিন্তা আর অন্যদিকে নিজের দেহের কু-বাসনা চরিতার্থ করার গোপন নেশা। ভারতের সোনাগাছিতে এ চিত্র অল্পকিছু দেখা গেলেও আমাদের দেশের পল্লীতে তা দেখা যায় না। এখানে বাঁশের বেড়া দেয়া ছোট্ট একটা ঘরে মায়েরা তাদের সন্তানকে রেখে খদ্দের নেয়। বিষয়টি হৃদয়বিদারক হলেও এসব পল্লীর মায়েদের কাছে এটিই বাস্তবতা।
মায়া এসে ঢুকল ঘরে। বলল, না, জুশ না। আমাদের ঘরের নোংরা গ্লাসেই খেতে দিলাম।
নোংরা বলছো কেন?
কেন? নোংরা লাগছে না গ্লাসটা?
না, লাগছে না।
ঘৃণা করছে না?
না, করছে না।
আচ্ছা, খাও। আর কিছু?
ধন্যবাদ। আচ্ছা, তুমি তোমার ঠোঁটে চুমু দিতে দাও?
কাকে?
খদ্দেরকে।
উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করো কেন?
এটা কি তোমার কাছে উল্টাপাল্টা মনে হলো?
উল্টাপাল্টা নয় তো কি? তুমি চুমু খাবা?
এর মধ্যে আমাকে টানছো কেন?
টানি নাই তো। তোমার ইচ্ছা হচ্ছে কীনা জানতে চাচ্ছি।
আমি লিপিস্টিক দেয়া ঠোঁট পছন্দ করি না।
ঠিক আছে, লিপিস্টিক ধুয়ে আসি।
হা হা হা... চুমুটা কি তুমি আমাকে দেবে, নাকি আমি তোমাকে দেব? ঠিক বুঝলাম না।
হা হা হা... আমার ঠোঁট কি সুন্দর?
নারীদের ঠোঁট তো সুন্দরই হয়।
আমার ঠোঁটের কথা বলো, সুন্দর?
তোমার খদ্দেররা কি বলে?
ওদের কথা বাদ দাও, তোমার কথা বলো।
কোনও খদ্দের কি বলেছে, তোমার ঠোঁট সুন্দর নয়?
খদ্দের তো সুন্দর বলে, তুমি কি বলবে?
বলতে চাই না। দেখতে চাই।
বুঝলাম না।
উপরের সৃষ্টি কি খারাপ হতে পারে? তিনি তো বুঝেই করেন।
তা ঠিক। তোমার কথা কিন্তু বললে না।
আজকেই যদি সব বলে দেই, অন্যদিন কি বলব?
আমার ভিতরে কেমন জানি করছে...
মনের দুয়ার কি খুলছে?
তা জানি না, তবে ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে।
আমাকে?
না।
অন্য কাউকে?
না।
বিশ্বাস রাখতে পারছো না?
বিশ্বাস! সেটাতো অনেক আগেই হারিয়েছি।
খোঁজার চেষ্টা করো না?
করতে চাই, কিন্তু ভরসা পাই না।
ভাবনার আকাশ অনেক বড়। খুঁজতে থাকো, পেয়ে যাবে।
সত্যি?
আমার তো তাই মনে হয়।
আমি কি একটু কাঁদবো?
কেন?
বহুদিন কাঁদি না। কাঁদতে ইচ্ছে করছে।
কাঁদতে পার, কাঁদলে তোমার আকাশের কালো মেঘ কিছুটা হলেও দুরে সরে যাবে।
মায়ার চোখ অশ্রু, আর তার বুক চিৎকার করার সব শক্তি যেন হারিয়ে ফেলেছে। আছে শুধু মরুর বুকের চিকচিক বালুকার বুক ভেদ করে উৎক্ষিপ্ত গরম শিখা। আমি বললা, চলো, বাইরে গিয়ে হেঁটে আসি
কোথায় হাঁটবে?
তুমি বলো। কোথায় হাঁটতে ইচ্ছা করছে?
দয়া করে আমাকে ভালো স্বপ্ন দেখিও না। আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারব না।
স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। ভালো স্বপ্ন দেখলে ভালো হবার ইচ্ছা জাগবে। ইচ্ছা থেকেই হয়তো মুক্তি।
মুক্তি? কিসের মুক্তি?
খারাপ থেকে ভালোর।
আমরা কি জন্ম থেকেই খারাপ?
চলবে...