বেশ্যাকন্যা

পর্ব ৩৫

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : এপ্রিল ০১, ২০১৮

আলেয়া আপার বাসায় গেলেই তার অস্থিরতা যেন বেড়ে যায়। কী করবে না করবে, বুঝে উঠতে পারে না। মেয়েকে বলে, যা তো তোর মামাকে ঘরে বসতে বল। সঙ্গে সঙ্গে ভাইকে ফোন দিয়ে বলবে, তুমি কই? ভাই আইছে। কিছু খাবার নিয়ে আসো। আমি বারবার থামাতে চেষ্টা করি। বলি, আমি তোমাদেরই একজন। আমার জন্য এত উতলা হওয়ার দরকার নেই। কিন্তু কে শোনে কার কথা!

আপার সাথে প্রথম পরিচয়ের সময় তার ঘরে বসে কথা বলছিলাম। আপা কোনও কথা বলতে চাচ্ছিলেন না। এক সময় বুঝলাম, তার ধারণা আমার কাছে কোনও টেপ রেকর্ডার রয়েছে। আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম। আমাদের মধ্যেকার কোনও কথোপকথন আমি রেকর্ড করছি না। যাই হোক, উনি আমার কথায় আশ্বস্ত হয়ে গল্প করতে শুরু করলেন। আপার বাসায় যতবার গিয়েছি ততবার খাবারের জন্য অনুরোধ করেছেন। ভাই, তুমি তো মাছ খাও না। গরুর গোস্ত রান্না করি?
আমি মানা করি, না-না, আমি ভাত খাব না।
এ কী কথা! আপার বাসায় আসবা আর খাবা না, তা কি হয়?
না আপা, কষ্ট কইরেন না। আমি রশিদ ভাইকে নিয়ে হোটেলে খেয়ে নেব।
একি বলো? বোনের বাড়ি থাকতে হোটেল কেন?

অনেক অনুরোধ-বিনয় করে তার হাত থেকে রক্ষা পেতে হতো আমাকে। আমি তার বাসায় খাই না দেখে, তিনি আগে থেকেই বলে রেখেছে শুটিংয়ের সময় আমার ইউনিট নিয়ে তার বাসায় খেতে হবে। আমি রাজি হয়েছি।

ভ্রমণপিপাসু লোকজন ছুটে যায় কক্সবাজার কিংবা পৃথিবীর সুন্দরতম সৃষ্টির পিছনে। কেউবা ছুটে চলে সুন্দর থেকে সুন্দরতম সৌন্দর্যের খোঁজে। খুঁজে নেয় নিজের কাঙ্ক্ষিত মনের অপার সৌন্দর্যের নীলাভূমি। দুচোখ ভরে দ্যাখে সৃষ্টির নতুনত্ব। পিপাসিত মন ছুটে চলে বারবার অনাঙ্ক্ষিত নিষিদ্ধ ভুবনে। ছুটে চলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের নিষিদ্ধ পল্লীর দুয়ারে দুয়ারে। অপার শান্তির পরশ খোঁজে একবিন্দু জলের প্রবাহে। সমুদ্রের বিশালতার সামনে দাঁড়িয়ে আমরা খুঁজি জীবনের ক্ষুদ্রতম মুহূর্তের চলমান স্মৃতি। আবার কোনও এক নিষিদ্ধ পল্লীর সামনে দাঁড়িয়ে দেখি, জীবনের করুণ আর্তনাদের কাহিনি।

আপার বাসা থেকে বের হয়ে মেইন গলির পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। অসংখ্য নার-পুরুষদের গাদাগাদি সারাক্ষণ লেগেই আছে। কোনও স্থিরতা নেই এই প্রধান গলির। দাঁড়িয়ে আছি আমি ও রশিদ ভাই। রশিদ ভাই তার সংগঠনের এক নারী কর্মীর সাথে কথা বলছে। আমি দাঁড়িয়ে থেকে গলির প্রতি মুহূর্তের সময় ক্ষেপণের দৃশ্যগুলি দেখে চলেছি। কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসল একটি মেয়ে আমার শরীরের ওপর। একটি ১৭-১৮ বছরের মেয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি বললাম, কী ব্যাপার সুন্দরী? আমাকে জড়িয়ে ধরলে কেন?
সে বলল, এমনিতেই।
এমনি এমনি জড়িয়ে ধরে লাভ কি? তুমি তো কোনও টাকা পাবে না।
ডার্লিং, টাকা দিলেই কি সব পাওয়া যায়?
হা হা হা... তাহলে আমাকে ছড়িয়ে ধরলে কেন?
তোমাকে অনেকদিন ধরেই আমাদের এখানে দেখছি। চিন্তা করলাম, কাছের মানুষ, একটু জড়ায়ে ধরি।
জড়ায়ে ধরেছো ভালো কথা, এখন আমাকে ছেড়ে দাও। প্রতি মিনিটেই কিন্তু তোমার লস হচ্ছে।
কোনও লস হচ্ছে না।
কেন? তোমাদের সঙ্গে এক ঘণ্টা কথা বললেও টাকা দিতে হয়, সেখানে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে আছো?
খদ্দেরের সাথে হিসাব আলাদা এবং তোমার হিসাব আলাদা।
সেটা কিভাবে? মজা তো আমি পাচ্ছি।
মজা তুমি পাচ্ছো, টাকা আমি পাচ্ছি?
মানে?
তুমি তো ভালো মানুষ। তুমি আমাদেরকে জড়ায়ে ধরবা না। ঝুমু আমাকে বলেছে, তোমাকে যতক্ষন ধরে জড়ায়ে ধরে রাখতে পারব, ততক্ষণের টাকা সে আমাকে দেবে।
হা হা হা... তোমাদের লেনদেনের হিসাব তো জটিল।
জটিল নয় ডার্লিং, এই তোমাকে ছেড়ে দিলাম। এখন আমি তার কাছ থেকে টাকা নেব।

আমাদের কাছ থেকে অনেকটা দূরে একটি পানের দোকানের আড়ালে ঝুমু দাঁড়িয়ে থেকে মিটমিট হাসছে।

চলবে...