
বেশ্যাকন্যা
পর্ব ৩৬
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : এপ্রিল ০২, ২০১৮
আমি হেসে উঠলাম, হা হা হা... কী ঝুমু, মজা নিলে আমার সাথে?
আমার দিকে এগিয়ে এসে ঝুমু বলল, নিজে তো মজা নিতে পারব না, তাই ওরে দিয়ে মজা নিলাম। হা হা হা...
দুধের স্বাদ কি ঘোলে মেটে?
অনেক সময় তাই মিটাতে হয়। কি খবর? মায়াকে নায়িকা হিসেবে নিয়েছো?
হ্যাঁ। কেন, তুমি হবে?
না বাবা, নায়িকা হবার ইচ্ছা নাই। মায়াকেই মানাবে বেশি। তবে তোমার হলে ক্ষতি নেই।
মানে?
মানে, তোমার নায়িকা হতে পারলে হতাম।
হা হা হা... নায়িকা তো হয়েই আছো।
মজা ন্যাও?
ছি ছি, মজা নেব কেন?
কখন আইছো তুমি?
এই তো, বেশ খানিকক্ষণ আগে।
ও। আচ্ছা, চলো আজকে সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখে আসি।
ছবি? হলে গিয়ে?
কেন? কি হয়েছে?
দিনের আলোতেই তোমার সাথে দুষ্টুমি করতে ইচ্ছা করে। আর কিনা বলছো হলের মধ্যে অন্ধকারাচ্ছন্ন আলোতে একসাথে বসে থেকে ছবি দেখবো?
হা হা হা... ছবি দেখবা, দুষ্টুমি করবা না, তাই কি হয়?
আমি যেতে পারব না। তুমি তোমার কোনও খদ্দেরকে নিয়ে যাও।
চুত... মতো কথা কও ক্যা? খদ্দেরের সাথে ছবি দেখতে ঢুকলে কি সে ছবি দেখতে দেবে?
কেন? সমস্যা কি?
সমস্যা কি মানে? চো...পুতেরা... হলে ঢুইকায় টিকেটের দাম তুলতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ছবি দেখবো কখন?
হা হা হা...
হাসতাছো? ঘরেও বেশ্যাগিরি করি, সিনেমা হলেও বেশ্যাগিরি করি। কোথাও শান্তি নাই। তাই মনে করলাম, তোমাকে নিয়ে ছবি দেখলে শান্তিতে ছবিটা দেখতে পারব।
সরি বন্ধু, আমার ছবি দেখার মতো সময় নেই, অন্য কিছু করলে বলো।
অন্য কিছু করলে মানে?
হা হা হা... সরি, করার যে কত অর্থ, আমি বুঝতেই পারিনি।
হা হা হা... মজা পাইছো?
কিসের জন্য?
ধরার জন্য।
ধরার জন্য!
হ্যাঁ। মেয়েটিকে জড়ায়ে ধরার জন্য।
আমি তো জড়িয়ে ধরিনি।
আমি জানি, তুমি জড়ায়ে ধরবে না। তাই তো তাকে দিয়ে জড়ায়ে ধরালাম।
তাতে তোমার লাভ কি?
বন্ধু, একটু ইনজয় করলাম।
হা হা হা... সে ধরল, আর তুমি মজা পেলে?
ছবিতে দেখি না, একজন বসে অন্যজন তাকায়ে থাকে।
হা হা হা... কোথায় পাও এসব? তুমি ছবি দেখ কোথায়?
টিভিতে।
টিভিতে? তোমাদের এখানকার অধিকাংশ মেয়েদের ঘরেই ডিসের লাইন নেই।
ডিসের লাইন নেই তো কি হয়েছে? ডিভিডি প্লেয়ার আছে।
ঘরে ডিসের লাইন নিচ্ছ না কেন?
ডিসের লাইন কে দেখবে? টিভি দেখার সময়ই বা কোথায়? খদ্দেররা যখন ঘরে থাকে তখন তো তারা ডিভিডিতে নষ্ট ছবি দেখতেই বেশি পছন্দ করে। ভালো ছবি দেখার অবস্থাও কপালে ঠিকমতো জোটে না।
দারুণ অভিজ্ঞতা তোমার।
তোমার অভিজ্ঞতা হয়নি?
বেশ অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার তোমাদের পল্লীর মানুষদের নিয়ে।
চা খাবে?
খাওয়া যেতে পারে।
আমরা গলির মুখ থেকে একটু এগিয়ে একটা চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দোকানটি বেশ ঘিঞ্জি। চায়ের পাশাপাশি এখানে ভাত খাবারও ব্যবস্থা আছে। দোকানটি নারী-পুরুষের কলকাকলিতে মুখর। ভেতরের জায়গাটুকুও অবশিষ্ট নেয়। দুটো ছোট ছেলে কাস্টমারকে সার্ভিস দিতেই ব্যস্ত। একজন কর্মচারী দোকানের মুখের সামনে জ্বলন্ত চুলার ওপর বড় লোহার তাওয়ার ওপর আটার রুটি ভাজছে। আগুনের চৌকার ঠিক নিচেই বসে রয়েছে দুটি কালো রঙের কুকুর। কুকুর দুটি অতি আয়েসে শুয়ে থেকে কাস্টমারদের ছুড়ে দেয়া বিভিন্ন খাবারের উচ্ছিষ্ট খাচ্ছে। কুকুরদুটি গলির কিছুটা অংশ দখন করে বসে থাকলেও তা এখানকার মানুষদের যাতায়াতের উপর তেমন কোনও প্রভাব ফেলছে না। সমস্ত মানুষ একটু কুকুর দুটিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে চলছে। এখানে কুকুর ও মানুষদের মধ্যে ভেদাভেদের চিহ্নিত করা কষ্টকর। ধনীদের ঘরের পোষা কুকুরটিও থাকে এ পল্লীর মানুষদের চেয়েও বেশি আদরে। এ জগতের মানুষদের সকল ভালোবাসা যেন হরণ করে নিয়েছে সভ্য জগতের সকল কুকুর।
চলবে