
বেশ্যাকন্যা
পর্ব ৪৪
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : এপ্রিল ১৬, ২০১৮
আমি ও রশিদ ভাই যাচ্ছি শিউলির বাড়ির উদ্দেশ্যে। সাগরদের বাড়ি থেকে কয়েকটি বাড়ির গলি পেরুতেই চোখে পড়ল, দুজন মধ্যবয়সী পুরুষকে। তারা সম্ভবত নতুন এসেছে এই পল্লীতে। তাদের চেহারায় আনন্দের উচ্ছ্বাস। আকাশে দমকা হাওয়ার দুর্বার ঝড় থেমে যাবার পর প্রকৃতিতে যেমন স্নিগ্ধ নির্মল বাতাস বইতে থাকে, তেমনি নতুন আসা দুই অতিথির চোখমুখে প্রশান্তির হাসি। জীবনের এই মুহূর্তে এসে তারা বাঁধভাঙা খুশিতে হারিয়ে ফেলেছে পল্লী থেকে বের হবার রাস্তা। তারা দুজনে বেশ কিছুটা সময় ধরে খুঁজে চলেছে পল্লী থেকে বের হবার রাস্তা। কিন্তু বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ নিষিদ্ধ পল্লীতে এসে তরীর বৈঠা হারিয়ে তারা দিশাহারা, যাবে কোন দিকে? সব দিকেই তো গলি আর গলি। গলিজুড়েই নারী অঙ্গের ঝলকানি। তারা বেরুতে চাইলেও অসংখ্য ভালো লাগার হাতছানি তাদের পিছু ছাড়ছে না। দু’তিনটি মেয়ের সাথে তাদের হাত ধরে টানাটানি চলছে। মেয়েগুলো চাচ্ছে ছেলেগুলোকে তাদের নিজেদের ঘরে নিয়ে যাবার জন্য। কিন্তু ছেলেগুলো পল্লী থেকে বের হয়ে যাবার জন্য চেষ্টা করছে। এটা নিয়েই যতসব টানাটানি ও হৈচৈ। আমরা পৌঁছে গেলাম তাদের কাছে। রশিদ ভাই এবার কিছুটা ধমকের সুরে মেয়েগুলোকে তাদেরকে ছেড়ে দিতে বলল। তারা ছেড়ে দিল এবং বিভিন্ন ধরনের কথার ফুলঝুড়ি নিক্ষেপ করতে শুরু করল। রশিদ ভাই তাদেরকে মেইন গলির রাস্তাটি চিনিয়ে দিল। তারা চলে যাবার জন্য পা বাড়ালো, আমরাও হাসতে শুরু করলাম ছেলেগুলোর বিক্ষিপ্ত কার্যকলাপ দেখে। যাই হোক, আমরা সইদিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে শিউলির বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। বেশ কয়েকদিন হচ্ছে আমি শিউলির বাড়ির দিকে যাবার সময় পাইনি। তাই আজকে বিকেলের সূর্য ডোবার আগেই তার সাথে দেখা করে ঢাকা ফিরতে চাই। আমরা কথা বলতে বলতে শিউলির বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। শিউলির ঘরে তালা দেয়া। সে সম্ভবত বাইরে গিয়েছে। কিছুক্ষণ আগে তার সাথ আমার মোবাইলে একবার কথাও হয়েছে। তার বাড়িতেই থাকার কথা। আমরা বাসা থেকে বের হবো এমন সময় দেখা হলো পাশের বাড়ির একটি ছোট মেয়ে শিশুর সাথে। শিশুটির বয়স ৯-১০ বছর হবে। সে বেশির ভাগ সময় শিউলীর সঙ্গেই থাকে। সে বয়সের তুলনায় বেশ মোটা। সারাক্ষণ খালি-গায়ে ঢিং-ঢিং করে সব জায়গায় নেচে বেড়ায়। বয়সটাও তেমনই। তাকে তার মা সবসময়ে কাছে রাখে না। কেননা সে বড় হচ্ছে। দুষ্টু খদ্দেরের দৃষ্টি তার ওপর পড়ছে। অনেক সময়ই বিভিন্ন খদ্দেররা তার হাত ধরে টানাটানি করে। তাই কিছুটা হলেও তার মা তাকে এই পেশা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে।
আমরা শিউলির খোঁজে বাড়ির বাইরে বের হলাম। কয়েকটা গলি পেরিয়ে কয়েক জনের মুখে তার অবস্থান জেনে চলে গেলাম বেশ খানিকটা দূরে তার দূর-সম্পর্কের এক খালার বাড়িতে। সে বাড়ির উঠানে শিউলী বসে আছে। আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসছে।
জিজ্ঞেস কললাম, কী বন্ধু, আমাকে দেখে হাসছো কেন?
সে বলল, হা হা হা... কোথায় হাসলাম?
কেন? দাঁত কেলায়ে হাসতেছো আবার বলছো কোথায় হাসলাম?
হা হা হা... তোমার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া মুশকিল। আমি তো মনে করেছি তুমি বন্ধু চলে গেছ।
তোমার কি মনে হয়? তোমার সাথে দেখা না করে আমি ঢাকা ফিরবো?
হা হা হা... ওরে বন্ধু, এই জন্যই তো তোমার ভয়ে এখানে পালায়ে চুপ করে বসে আছি।
তা, মেম্বার কি ১৫ দিনেই কাম সাইরা ফেলছে?
হা হা হা... কি যে কও না তুমি!
ওরে বাবা! তুমি কোলে নিয়ে বসে আছো তাতে সমস্যা হলো না, আর আমি বললেই সমস্যা? জিনিসটা কার? দেখতে খুব সুন্দর।
আমার।
তোমার?
হ্যাঁ, সমস্যা কি?
তোমারে দেখে তো মনে হয় না। তোমারে দেখে মনে হচ্ছে আজকেও মেম্বার আইসা বইসা গেছে।
হা হা হা... আমারে দেইখা কি তাই মনে হয়?
চলবে