বেশ্যাকন্যা

পর্ব ৪৭

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : এপ্রিল ১৯, ২০১৮

আমি বললাম, সমস্যা নেই, গলিতেই খাঁমচি দাও।
রাতিয়া হেসে উঠল, হা হা হা... ধুর মিয়া!
খদ্দের পাওনি?
পামু ক্যামনে? তখন থ্যাইকা তো প্যানপ্যান করতাছেন।
প্যানপ্যান তো করতে চাই না, তোমার সাথে বসতে চাই।
হা হা হা... বইবেন? আপনে বইবেন? আমার লগে?
হ্যাঁ, সমস্যা কোথায়? এখানেই তোমার সাথে আমার বসতে ইচ্ছে করছে।
ধুর মিয়া, হুদাই মসকরা করেন। আপনে যান গা...
চলে গেলেই কি বসা হবে?
হা হা হা... এত বসার খায়েস কেন?
তা তো জানি না। মনের চাহিদার উপর কি সব সময় নিয়ন্ত্রণ থাকে?
নিয়ন্ত্রণ না থাকলে এখানে আসেন কেন?

আমি বললাম, নিষিদ্ধ জিনিষের প্রতি মানুষের যেমন লোভ বেশি, তেমনি এখানকার মেয়েদের সবার তুলনায় তোমার প্রতি আমার লোভটা একটু বেশি।
রাতিয়া বলল, ইশ, মায়াকে নায়িকা বানাচ্ছেন আর আমার সাথে মজা লন?
মজা নিতে পারছি কোথায়? তোমার হৃদয়টা এত কঠিন, তার মধ্যে তো ঢুকতেই পারছি না।
ধ্যেত, এভাবে কথা বইলেন না তো।
কেন? মনটা গলছে?
হা হা হা...
যাক, তুমি হাসলে। তুমি হাসলে পেঁচার মতো লাগে।
কি? কি বললেন?
না না না, আমি বলিনি তো, সাগর বলে।
সাগরের সাথে কখন দেখা হলো?
এই তো কিছুক্ষণ আগে। আমি তাকে বললাম আমরা রাতিয়ার কাছে যাচ্ছি। সে বলল, পেঁচার কাছে যাচ্ছেন?
ও আমারে পেঁচা কয় কেন? সেই তো একটা পেঁচারে ঘরে নিয়ে তুলছে, আর আমারে কয় পেঁচা?
না না, সে ঠিক বলে নাই, তোমার মতো এরকম সুন্দরী মেয়েকে সে কিভাবে পেঁচা বলে?
ভাই, আমার কিন্তু মেজাজটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
আমি সেটাই ভাবছি। তোমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে না কেন? চলো, সাগরের বাসায় যাই।
ধুর, ওই ফালতু পোলার বাসায় আমি যাই না।
সাগরের মা নাকি তোমারে খুব পছন্দ করে?
আমি ভালো দেইখাই খালা আমারে পছন্দ করে।
তুমি কিন্তু হেবি হট।
আমি হট! কিভাবে বুঝলেন?
জ্বলন্ত চৌকার উপর রাখা কোনও খাবার দেখলেই বুঝার কথা, খাবারটি গরম নাকি ঠাণ্ডা। সেই খাবারে হাত দিয়ে কি দেখার দরকার আছে?
হা হা হা, আমি হট হলাম কিভাবে?
টমেটো সসের মতো, বোতলে ঠাণ্ডা, জিভেয় হট।
হা হা হা... যা বলেন না!
তুমি তো আমার নাটক করছো, নাকি?
না, আমি করতে পারব না।
কেন?
আমার ইচ্ছা নাই।
ইচ্ছা না করার কারণ কি?
আমার বাড়িওয়ালি করতে দিবে না।
তোমার বাড়িওয়ালির সমস্যা কি?
নাটক করে বেড়ালে আমার খাওয়া কে দিব? ঘর ভাড়া কে দিব?
আমি দিব।
তারপরও... আপনে আমার বাড়িওয়ালির সাথে কথা বলে নেন।
চলো, খালা কই? কথা বলে আসি।
ধুর, দিনটাই মাটি। আর খদ্দেরই জুটবে না কপালে।
কেন? আমি তো আছি। আমাকে খদ্দের বলে মনে হয় না?
মনে হইব না ক্যান? খুব মনে হয়। চলেন, ঘরে চলেন। গরম পিঠা খাওয়ামু।
হা হা হা... তুমি ওইটাকে গরম পিঠা বলো নাকি?
হা হা হা...

আমরা গলির মুখ থেকে এগিয়ে গিয়ে রাতিয়াদের বাড়ির দিকে যেতে থাকলাম। আমরা তার বাড়িতে ঢোকার মুখেই তার খালার সাথে দেখা হয়ে গেল। জিজ্ঞেস করলাম, খালা কেমন আছেন?
খালা বলল, হ্যাঁ বাবা, ভালোয় আছি। তুমি কেমন আছ?
জী খালা ভালো আছি। আমার বিষয়ে হয়তো রাতিয়া আপনাকে বলেছে...
হ্যাঁ বাবা। কথা হয়েছে। বোঝোয় তো, শরীরের টাকায় চলতে হয়।
না না খালা, আমি আপনাদের অবস্থা বুঝি। আমার নাটক ও ডকুমেন্টরির জন্য টানা সাত দিন সময় লাগবে। ওই সাত দিন রাতিয়া কোনও খদ্দের নিতে পারবে না। সে আমার সাথে থেকে শুটিং করবে। এই সাত দিনের তার যাবতীয় খরচ আমার। এখন কোনও সমস্যা আছে খালা?
বাবা, তোমার ব্যাপারে মর্জিনার কাছ থেকেই অনেক কথা শুনছি। তুমি আমাদের জন্যও ডকুমেন্টরি বানায়ে দিতাছো, কেউ তো বাবা এমন করে কাজ করে না। ঠিকাছে, তোমার যখন প্রয়োজন তখনই রাতিয়া তোমার সঙ্গে কাজ করবে।
ধন্যবাদ খালা, আমি জানতাম আপনি অনুমতি দিবেন। তাহলে আজকে আসি খালা।
বলো কি বাবা? গরিব বলে কি তোমাকে কিছু খাওয়াতে পারব না?
না না খালা, দরকার নেই।
আরে নাহ্, কি বলো? রাতিয়া? মেহেদীরে তোর ঘরে নিয়ে চা-পানি খেতে দে।
আমারা রাতিয়ার ঘরের দিকে পা বাড়ালাম।

চলবে