বেশ্যাকন্যা

পর্ব ৪৯

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : এপ্রিল ২১, ২০১৮

আমি হেসে উঠলাম, হা হা হা... তুমি পাগল হবে?
রাতিয়া বলল, এখন তো তাই হতে মনে চাচ্ছে।
হা হা হা...
আপনে হাসছেন?
হা হা হা... হাসছি কেন জানো?
কেন?
মায়া থেকে শুরু করে সব মেয়েরাই আমাকে বলেছিল, আমি তোমাকে আমার নাটকে অভিনয়ের জন্য নিতে পারব না। তুমি আমার সঙ্গে কাজ করবে না। আমি বলেছিলাম, তুমি আমার সঙ্গে কাজ করবে। আমি তো সেটা করতে পেরেছি। কি বলো?
পারবেন না কেন? আপনে এত সুন্দর করে কথা বলেন, কথাতেই তো সবাই পাগল।
তাই নাকি? সবাই তো আমারে গালি দেয়।
দিলে দিতে পারে। আমাদের কাছে আপনে অনেক ভালো মানুষ। সবাই আপনার প্রশংসা করে।
সেটা আমার সৌভাগ্য।

এইডস মানুষের জীবনে বড় একটি অভিশাপ। এটি একটি মরণব্যাধি। এইচআইভি পজেটিভ মানে নিশ্চিত মৃত্যু। সারা বিশ্বে এইডসের প্রাদুর্ভাব দিনকে দিন বাড়ছে। এ অবস্থায় আমাদের দেশে এর প্রভাব মুক্ত থাকবে, এমন কারণ নেই। যদিও সরকারিভাবে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, এরপরও দিনের পর দিন এই জীবাণুর বিস্তার এদেশে বাড়ছে ছাড়া কমছে না।

এ রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে, নারী-পুরুষের অনিয়ন্ত্রিত অনৈতিক দৈহিক মেলামেশা। এদেশের সকল যৌন পল্লীগুলো এইডস ছড়ানোর প্রধান জায়গা। তাই এখানকার আগত সকল মানুষকে এইডস প্রতিরোধের ব্যাপারে সচেতন হওয়া জরুরি। সেক্ষেত্রে দৈহিক মেলামেশা করার সময় বাধ্যতামূলকভাবে প্রটেকশন ব্যবহার জরুরি। এটা প্রচারের জন্য সমগ্র দেশের পাশাপাশি এসব পল্লীতেও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিও নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

রাতিয়া দৌলতদিয়া ঘাট নিষিদ্ধ পল্লীর নারীদের সংগঠন এমএমএস এর একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে। ওয়ান টু ওয়ান, গ্রুপিং আকারে এইডসের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে। সে ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে, যথেষ্ট সাংগঠনিক। সংগঠন থেকে নির্দিষ্ট পরিমানে মাসিক ভাতা পায় বলে তার খদ্দের ধরার ব্যাপারে সে যথেষ্ট খুতখুতে। যেহেতু আমার ডকুড্রামাটি হবে এইডসের উপর সচেতনতামূলক, সেহেতু তার চরিত্রটি আমার জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

এইডসের উপর কিছু জ্ঞান না থাকলে সে আমার সেই চরিত্রটি করতে অসুবিধায় পড়বে, তাই তাকে আমার পছন্দ এবং সিলেক্ট করার মূল কারণ। এইডস জীবননাশক রোগ হলেও এটি ছোঁয়াচে কোনও রোগ নয়। এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে এক বিছানায় ঘুমানো যাবে, কিন্তু দৈহিক মেলামেশা থেকে বিরত থাকতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত, মুখের লালা যে সমস্ত জিনিসে লাগে তা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। এইডস রোগে আক্রান্ত মা যদি তা সন্তানকে স্তন্য পান করায় সেক্ষেত্রে বাচ্চাও এইচআইভি জীবাণুতে আক্রান্ত হতে পারে। কোনও আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। যৌনপল্লীতে খদ্দের নেবার সময় খদ্দেরকে বাধ্যতামূলকভাবে প্রটেকশন নিতে হবে। এরকম নিয়ম থাকলেও কোনও কোনও খদ্দের অর্থের প্রলোভনে নারীদের প্রটেকশন ব্যবহার না করানোরও চেষ্টা করে থাকে। এইডসে সচেতন নারীরা কখনও প্রটেকশন ছাড়া খদ্দের নেয় না। সেক্ষেত্রে রক্ত টেস্টের ব্যবস্থাও রয়েছে এসব পল্লীতে।

এসব পল্লীর অসংখ্য যৌনকর্মী বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন নিষিদ্ধ পল্লীসহ ঢাকা শহরের আনাচে-কানাচে যাতায়াত করে থাকে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন হোটেল ও মেসেও রয়েছে তাদের যাতায়াত। তাই এইডস এখন শুধুই নিষিদ্ধ পল্লীতে অবস্থানকৃত নর-নারীর জন্য প্রযোজ্য নয়, এটি আমাদের সমগ্র সমাজের মানুষদের সচেতনতার বিষয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের শরীর থেকে রক্ত নেবার ব্যপারেও সচেতন থাকতে হবে। ভারতের কলকাতাতে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ব বৃহৎ সোনাগাছি নিষিদ্ধ পল্লী। সেদিক থেকে আমাদের সতর্ক না হওয়ারও কোনও কারণ নেই।

রাতিয়াকে রাজি করাতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে। আজ অনেকটা সময় রাতিয়ার সঙ্গে গল্প করলাম। এখন তার মুখে হাসির ফোয়ারা বইছে। কিছুদিন আগে সে আমার সাথে এতটা সুন্দরভাবে কথা বলার চেষ্টা করেনি। আজকে তার বাড়িঅয়ালির সাথে কথা বলার কারণে সে অনেকটাই সহজ।

আমি বললাম, যাক, আজকের দিনটি বেশ মনে থাকবে।
রাতিয়া বলল, কেন? পিঠা খাওয়ালাম না, তারপরও?

চলবে