
বেশ্যাকন্যা
পর্ব ৫৩
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : এপ্রিল ২৫, ২০১৮
পরদিন গেলাম সিমলার ঘরে। দরজা ভেজানো ছিল। যখন ঢুকছিলাম দেখলাম, পাশের ঘরের মেয়েটি কী রকম চোখে যেন আমার দিকে চেয়ে আছে। দরজায় নক করলাম। ঘুমজড়ানো চোখে সিমলা দরজা খুলে দিল। আমাকে দেখে একটু যেন হাসি ফুটল ওর চোখমুখে। বলল, আসেন মেহেদী ভাই। চলছে কেমন আপনার?
আমি ভেতরে ঢুকে চৌকির ওপর বসতে বসতে বললাম, এই তো আছি। তোমার খবর কি?
আর কী! চলছে...
তোমার ঘরে ঢোকার সময় একটা মেয়েকে দেখলাম আমার দিকে অবাক চোখে চেয়ে আছে। রহস্য কি?
কে?
জানি না। মনে তো হয় তোমার পাশের ঘরে থাকে।
ও আচ্ছা। আমি তাকে বলেছিলাম, আমি ঘুমাচ্ছি। কেউ যাতে আমার ঘরে না ঢোকে। তাই সে তোমাকে ঘরে ঢুকতে নিষেধ করেছিল।
ও। তা এখন কী খাওয়াবে?
খাও।
কি খাবো?
যা খেতে চাচ্ছো।
হা হা হা... মশকরা চো...? চা? না জুস খাওয়াবা?
হা হা হা... ও আচ্ছা, তুমি জুস খাবা?
হলে তো ভালোই হয়।
শুধু জুসেই তোমার মন ভরবে?
মন না ভরুক, পেট তো ভরবে।
তুমি আছো পেটের চিন্তায়, আর আমি আছি...
ইস, এত খারাপ কথা বলো কিভাবে?
খারাপ মানুষের পেট থেকে খারাপ কথাই বেরুবে, নাকি?
গোবরে নাকি পদ্মফুল ফোটে। সেক্ষেত্রে বেশ্যাপল্লীতে জন্মে বিউটিফুল, মেরি কিংবা মৌসুমির মতো শিশুরা এখানেই জন্ম নেয়। নাকি?
মৌসুমি ও মেরির মতো অসংখ্য শিশু আমাদের এখানে আছে। কিন্তু থেকে লাভ কি? তারা তো সুন্দর জীবনের আশাই করতে পারে না। জন্ম থেকে দেখে আসছে, আমাদের নারী-পুরুষের অবাদ মেলামেশা। সঙ্গত কারণেই সে শিশুটিও সে কাজটিই করে যা তার মা করে। তাদেরকে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাবে কে? মা সারাদিন দুমুঠো ভাতের জন্য খদ্দের ধরতেই ব্যস্ত। শিশুদের দেখবে কে?
জানি না।
তবে জানার চেষ্টা করছি।
আমি পারব না।
সবাই যদি চেষ্টা করে তবে মনে হয় সম্ভব।
কারা আসছে বা আছে এখানে? কয়েক পুরুষ ধরে এখানে জন্মগ্রহনকারী শিশু। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত নারীদের অবৈধ পন্থায় সন্তান প্রসবের পর তা বিক্রি করে দিয়ে চলে যাওয়া। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চুরি যাওয়া শিশু এসব পল্লীতে স্থানান্তর। প্রেমে প্রতারিত হয়ে ভুল করে আগত নারী। কিছু অতি উৎসাহী নারী যারা তাদের অতি জৈবিকতা নিবারণের জন্যও এখানে আসে। কিছু নারী আধুনিকতার মায়াজালে পড়ে অতি আধুনিকভাবে চলতে গিয়ে অর্থসংকট নিবারণের জন্যও এখানে আসে। এখানে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের বাধ্যতামূলকভাবে সরকারি খরচে হোমে রেখে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে। বাইরের কোনও নারীর অবৈধ মেলামেশার ফসল কোনোভাবেই যাতে এসব পল্লীতে না ঢুকতে পারে, সেদিকে প্রশাসনের নজরদারি দিতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে চুরি যাওয়া শিশু যাতে কোনোভাবেই এসব পল্লীতে ঢুকতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে। কম বয়সী মেয়েরা যাতে প্রেমে প্রতারিত হয়ে কিংবা পরিবারের কোনও সদস্য কর্তৃক এখানে ঢুকতে না পারে তার দিকে নজর রাখার পাশাপাশি এসব পল্লীতে নিয়মিতভাবে পুলিশ অভিযান চালাতে হবে। শক্ত হাতে ও প্রশাসনিকভাবে এসব পল্লীর দালালদের ধরতে হবে। এ পল্লী থেকে যে সমস্ত নারীরা স্বেচ্ছায় সভ্য সমাজে বের হয়ে আসতে চায়, তাদেরকে সরকারিভাবে সঠিকভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। যেসব নারীরা যৌনকর্মী হিসেবেই থাকতে চায়, তাদেরকে প্রাপ্তবয়স্কের ভিত্তিতে আইডি কার্ড দিতে হবে। যাতে সরকারের কাছে তাদের ব্যাপারে একটি সঠিক ধারণা থাকতে পারে। নিষিদ্ধ পল্লীগুলো থেকে বাড়িওয়ালা কিংবা সর্দারনি প্রথার বিলুপ্তি সাধন করতে হবে। নিষিদ্ধ পল্লী থেকে আগত সকল নারীদের নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। কার্ডপ্রাপ্ত যৌনকর্মীরা কোনও অবস্থাতেই পল্লীতে অবস্থানকালীন সন্তান প্রসব করতে পারবে না।
প্রতিটি কার্ডধারী যৌনকর্মীদের বৃদ্ধা বয়সে সরকারিভাবে আমৃত্যু বয়স্ক ভাতা চালু করা যেতে পারে। যাতে তারা ভবিষ্যতের জীবিকার জন্য সন্তান প্রসব কিংবা বাইরে থেকে বাচ্চা চুরি করে নিয়ে তাকে সন্তান হিসেবে বড় করে তুলে এ পেশাতে যুক্ত করতে না পারে। এখানকার নারীদের গর্ভে সন্তান ধারণকারী বাবুদের ওই সন্তানসহ মায়ের দায়িত্ব নিতে হবে এবং তার জন্য আইন প্রয়োগ করতে হবে। এইডস প্রতিরোধে এখানে প্রটেকশন ব্যবহার বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এসব ব্যবসা কেন্দ্রিক সকল বাহুবল সরকারি পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে বিনাশ করতে হবে। যারা স্বেচ্ছায় এ পেশা বেছে নিচ্ছে, তাদেরকে বিভিন্ন উপায়ে এ পেশার খারাপ দিকগুলোর বিষয়ে ধারণা দিতে হবে যাতে তারা এ পেশা থেকে বের হবার জন্য উৎসাহিত হয়। কোনোভাবেই তাদের উপর শক্তি প্রয়োগ করা ঠিক হবে না। উপরোক্ত উপায়ে দিনের পর দিন কিংবা যুগের ধারাবাহিকতায় একদিন এই পেশার পরিসমাপ্তি ঘটলে, ঘটতেও পারে।
চলবে