
বেশ্যাকন্যা
পর্ব ৫৪
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : এপ্রিল ২৬, ২০১৮
সিমলার সাথে হাজারো কথা চলে। ভালো-মন্দের খই ফোটে তার চোখ-মুখে। সিমলার কেন জানি মুড রয়েছে। সে সব সময় ছেলেদের শার্ট পরে। নিচের দিকে কখনও প্যান্ট কখনও পেটিকোট পরে। এতে তার সৌন্দর্যের প্রকাশসীমা অনেকটা অসাদৃশ্য মনে হলেও মাঝে মাঝে তাকে এত বেশি সুন্দর দেখায় তাতে তার সামনে পতিত সকল পুরুষ আড়িচোখের কুদৃষ্টি তার উপর ফেলাতে বাধ্য। শার্টের নিচে পেটিকোট পরিধান... অসাধারণ সম্মিলন। আজকে সিমলা শার্ট ও পেটিকোট পরে আছে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা দোস্ত, এমন ড্রেস পরো কেন?
সিমলা একটু হেসেব জবাব দিল, সুবিধা হয়।
কিসের?
কামের।
কামের? না কাজের?
যেটা তোমাদের বুঝতে সুবিধা হয়।
বুঝা উচিৎ কাজ। কিন্তু মন তো চাইবে কামের অর্থ।
সেটা তোমার মনের সমস্যা।
সমস্যা কি আমার একার? না তোমারও?
কেন? আমার হবে কেন?
কেন হবে না? তুমি কালো রঙের পেটিকোট, সাদা রঙের শার্ট আর তার নিচে বিছিয়ে রেখেছো লাল রঙের বিদঘুটে জাল। তাতে কি শালীন দেখায়?
দেখ কেন?
কেন দেখব না? নারী হয়ে জন্মেছো কেন?
সেটা তো আমার দোষ নয়, উপরের...
উপরওয়ালা তোমাকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছে বলেই কি তোমার সৌন্দর্যের অহমিকা?
আরে বাবা, আমি তো ড্রেস পরে আছি, নাকি? নেংটা তো হয়ে নেই।
তোমরা সবাই এমনই বলো। আমরা যেমন পোশাক পরি। পরি না কেন? তোমরা চোখ না দিলেই পারো।
হ্যাঁ ঠিকই। তাকাও কেন? তোমাদের চোখের পর্দা ফেলে রাখো না কেন?
বাহ মজার তো, তোমরা নাংটা হয়ে থাকবে আর আমরা চোখে পর্দা দিয়ে রাখবো? দারুণ কথা, কোথায় পাও এমন কথা?
ধুর, তোমার সাথে কথা বলা যাবে না। তুমি হুদাই প্যাঁচাও। আমি জুস আনতে গেলাম।
দাঁড়িয়ে আছো কেন?
মানে?
মানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
বোঝো না?
ওহ, সরি বন্ধু, নাও টাকা নাও।
সিমলা এমনই। যখন কাছে পর্যাপ্ত টাকা থাকে তখন জোর করে কিনে এনে খাওয়াবে। যখন কাছে টাকা থাকে না তখন সামনে দাঁড়িয়ে ভেংচি কাটে। একেবারেই বাচ্চা শিশুর মতো। মুখের সামনে অজস্র খাবার... একটা চাইলে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু হাতে একটা খাবার থাকলে তা নেয়া বেশ কষ্টকর। শিশুরা এমনই হয়।
সিমলার ঘরে বেশ লম্বা সময় ধরে বসে থাকলে দম আটকে যায়। তার শরীরের মাদকতার পাশাশাশি রুমজুড়ে বিভিন্ন নেশাদ্রব্যের বিষাক্ত ঘ্রাণ।
একটি ঘটনা, আমি তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। স্কুলের টেস্ট পরীক্ষা শেষ। স্কুলে মিলাদ হবে। আয়োজক এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। প্রচুর মজা ও টেনশন মনের মধ্যে কাজ করছে। স্কুল বাউন্ডারির ভিতরে খাসির মাংস ও পোলাও রান্না হচ্ছে। মিলাতে আগত অবিভাবকদের পেটের ক্ষুধার চেয়ে আমার পেটের ক্ষুধায় যেন বেশি। আহা, কী পোলার ঘ্রাণ! যাই হোক, মিলাদ শেষে অভিভাবক পর্বের পর আমরা পোলাও খেতে শুরু করলাম। ছেলেমেয়ে সকল বন্ধু-বান্ধবীসহ সবাই বেশ আনন্দভরে খাচ্ছি। খাওয়া শেষে পানি খাবারে হিড়িক পড়ে গেল। আমাদের স্কুলে কেয়ারটেকার মুরব্বি চাচা বালতিতে পানি নিয়ে আমাদেরকে কয়েকটি গ্লাসে করে পানি সার্ভ করছে। আমার যথেষ্ট পানির পিপাসা পেয়েছে। আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক বান্ধবীর হাত থেকে অর্ধেক পানি থাকা গ্লাসটি নিয়ে আমি পানি পান করতেই, আমাদের ক্লাসের চতুর বন্ধুটি বলে উঠল, ছি ছি, তুই ওর মুখ লাগানো পানি খেয়ে ফেললি!
তার কথা শুনে মুরব্বি চাচা তাকে বললেন, বাবারে, তোমরা অনেক ছোট। সে মেয়েটির গ্লাসের অ্যাটা পানি খেল বলে তুমি ঘৃণা করছো? বড় হও বুঝবা, তখন প্রেমিকা কিংবা বউ মুখের থুতাও তোমার কাছে মিষ্টি লাগবে।
এ কথা শুনে আমরা তখন সবাই মিলে উচ্চস্বরে হেসেছিলাম। আজও মনে হলে মুচকি মুচকি হাসি পায়। বাস্তবতার গুরত্ব কতই না মধুর! হা হা হা...
সিমলা জিজ্ঞেস করল, হাসছো কেন?
চলবে