বেশ্যাকন্যা

পর্ব ৫৬

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : এপ্রিল ২৮, ২০১৮

সিমলা বলল, তারা গেট করবে কেন?
আমি বললাম, তারা যে সেজেগুজে রাস্তায় দাঁড়ায়ে আছে।
তারা এমনিতেই দাঁড়ায়ে আছে।

এখানকার কিছু অতিলোভি বাড়িওয়ালি আছে, যারা ছোট ছোট মেয়েদের দিয়ে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে খদ্দের ধরে। আমাদের সমাজে এমন কিছু খদ্দের আছে যারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বাড়িওয়ালির সাথে মোবাইলে যোগাযোগ রাখে যাতে তাদের হাতে চুরি করা কিংবা এখানে বেড়ে ওঠা ছোট ছোট মেয়েদের প্রচুর অর্থের বিনিময়ে প্রথম মেলামেশা করার সুযোগ পায়। পল্লীর ভাষায় এটিকে নারিকেল ভাঙা বলা হয়। নারিকেল ভাঙার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানের অসংখ্য মানুষ নিজের কুবাসনা চরিতার্থ করতে ছুটে যায় নিষিদ্ধ পল্লীতে।

আমি বললাম, বন্ধু, আজকে চলি।
সিমলা বলল, চলি মানে? আমার রুমে এসেছো, না খেলেই চলে যাবে?
না, আজকে খেলব না।
না খেললে তো আমি তোমাকে যেতে দিব না।
হা হা হা... তুমি কি আমাকে জোর করে খেলাবা?
ওরে যাদু, কেন ঢং করো? তুমি খেলতে পছন্দ করো, কেন খেলবে না?
আজকে সময় নেই।
তোমার সময়ের গুল্লি মারি। আজকে না খেললে কিন্তু রাগ করব।
তুমি কি আমাকে ব্লাকমেইল করতে চাচ্ছো?
না খেললে তাই করতে হবে আমাকে।
হা হা হা... দুজনেই খেলব?
কোনও সমস্যা নেই। আমি আরও দুজনকে ডেকে নিচ্ছি।
না না, দুজনকে ডাকার প্রয়োজন নেই। একজনকে ডাকো।
তিনজনে খেলতে সমস্যা।
সমস্যা নেই, রশিদ ভাই আছে। পারলে তোমার কোনও বান্ধবীরে ডেকে নাও।
মায়াকে ডাকব?
মায়াকে কোথায় পাবে? তাকে খুঁজতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তুমি বরং তোমার পাশের রুমের কাউকে ডেকে নাও। তবে বেশিক্ষণ খেলতে পারব না।
ঠিকাছে বাবা। দুই দান অন্তত খেলো, খেলবা?
২৯ অথবা ব্রীজ, কার্ড কোথায়?
না না, ব্রীজ খেলব না, টুইন্টি নাইন খেলব।

এই নিষিদ্ধ পল্লীতে এসে যতবার সিমলার রুমে গিয়েছি ততবার তার রুমে কার্ড খেলেছি। আমি ব্রীজ খেলাটি অতটা বুঝি না কিন্তু টুইন্টি নাইনটা বেশ ভালোয় খেলতে পারি। ‍সিমলা বেশ ভালো খেলে। মাঝে মধ্যে হাত চুরির দক্ষতাও রয়েছে তার প্রচুর। একটু দুচোখ এদিক সেদিক করলেই দান চুরি। নিমেষেই খেলা তার দখলে। এতে হৈচৈও কম হয় না। হা হা হা, হি হি হি তো আছেই। আজকে কয়েক দান কার্ড খেলেই সিমলার ঘর থেকে বের হয়ে যাবার জন্য পা বাড়ালাম। সে মুচকি মুচকি হাসছে...

হাসছো কেন?
তোমার কোনও সমস্যা আছে?
সমস্যা নেই, কিন্তু হাসছো কেন?
হা হা হা... তুমি খেলতে রাজি হচ্ছিলে না। এখন ঠিকই খেলে রুম থেকে বের হয়ে গেলে... হা হা হা...
হা হা হা... তোমার মতো ছ্যাচড়া বন্ধু থাকলে না খেলে পারা যায়?
হা হা হা... আমাকে ছ্যাচড়া বললে?
না তো। তোমাকে বলব কেন? তুমি কি ছ্যাচড়া?
না, আমি ছাছড়া নয়। কিন্তু তোমার সাথে একটু ছ্যাচড়ামি করতে ইচ্ছে করে।

আমি রশিদ ভাইকে নিয়ে সিমলার ঘর ছেড়ে অন্য পথে পা বাড়ালাম। পা বাড়াব কোথায়? পায়ে হাঁটা সকল রাস্তায় নোংরা কাদা। হাঁটার সময় একটু অসতর্কতায় আপনার পা নোংরা নালার দুর্গন্ধ কাদার মধ্যে তলিয়ে যেতে পারে। এখানে কি মানুষ থাকে!

ঘরের বারান্দার দখিনা বাতাসের মনোমুগ্ধকর অনুভূতির স্পর্শ পেতে কার না ইচ্ছা করে? এখানে ঘরের সাথে ঘর, গলির সাথে গলি, নদীমাতৃক দেশে যেন গলিবিস্তৃত ঘর। সকল কপাল পোড়া নারীকুলের আবাসস্থল। আমরা হেঁটে যাচ্ছি গলি পথ ধরে, আমার চা খাবারের প্রতি রয়েছে যথেষ্ট দুর্বলতা। এখানে বেশ কিছু দোকানে গরুর খাটি দুধের স্পেশাল চা পাওয়া যেত। আমরা আমাদের পল্লীর সকল প্রান্তের কাজকর্ম শেষে আমি ও রশিদ ভাই সেই নির্দিষ্ট চায়ের দোকানে বসে চা খেয়ে তবেই বের হতাম পল্লী থেকে। আজকে রশিদ ভাই ধরেছে তার বাসার দিকে যেতে হবে। তিনি তার বাসার সামনের এক মিষ্টির দোকান থেকে খাঁটি দুধের ছানা খাওয়াবেন। আমি আজকে রশিদ ভাইয়ের বাসার দিকেই রওনা দিলাম। যদিও আজকে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল মজার চরিত্রের এক মেয়ের সাথে দেখা করার জন্য। আজকে যেহেতু সময় হলো না, পরে কোনো একদিন যাব বলেই গন্তব্যের পথে হেঁটেই চললাম।

চলবে