
বেশ্যাকন্যা
পর্ব ৫৮
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : এপ্রিল ৩০, ২০১৮
ঝর্ণা বলল, এখানে কি করে এলাম? তার আগে বলেন, আমাকে না নিয়ে মায়াকে নায়িকা বানালেন কেন? আমাকে নিলে ভালো করতেন না?
আমি বললাম, তোমাকে নিলে ভালো করতাম? কিভাবে?
মায়া তো অভিনয় জানে না। এছাড়া তার গরম শর্ট দেয়ার অভিজ্ঞতা নেই।
হা হা হা... গরম শর্ট? গরম শর্ট দিয়ে আমি কি করব?
কী করবেন মানে? আপনার নাটকে গরম শর্ট লাগবে না? আমাকে নিলে আমি সব ধরনের গরম শর্ট দিতে পারব। কিন্তু মায়া দিতে পারবে না।
হা হা হা... আমার নাটকে কোনও অশ্লীল গরম শর্ট থাকবে না। যা থাকবে তা মায়া করতে পারবে। তাছাড়া সে অনেক দিন ধরেই নাটকের রিহার্সেল করছে।
ধুর, সে পারবে না।
কী করে বুঝলে?
সে তো এখন অসুস্থ। তার শরীর অনেক রোগ। তার কাছে তো কোনো খদ্দেরই যেতে চায় না। আপনে যান ক্যামনে?
অন্যরা যায় না বলেই তো আমি তার কাছে যাই।
আপনে জানেন, তার শরীরে রোগ আছে?
হ্যাঁ জানি। তার শরীরে এইডস রোগের জীবাণু আছে।
আরে ধুর, ওর এইডস হবে কেন?
তুমিই তো বললে...
আরে, আমি কী বললাম? তার এইডস হইছে...
তাহলে?
না না, তার শরীরে তেমন কোনও কঠিন রোগ নেই। তার শরীরে চুলকানি আছে।
হা হা হা... চুলকানি? তোমার শরীরে চুলকানি নেই?
না নেই।
বলো কি? ঝুমুর তো বলেছিল তোমার শরীরেও চুলকানি আছে।
ধুর, সে মিথ্যা কথা বলে। বরং তারই চুলকানি আছে।
ঠিক বুঝলাম না। আচ্ছা, যাদের চুলকানি থাকে তাদের কি খদ্দের বেশি হয় নাকি?
ধুর, এসব কথা কই পান?
পাবো আবার কোথায়? সেদিন ঝুমুরের সাথে দেখা করতে গেলাম। তার ঘরের সামনে দাঁড়াতেই দেখলাম, আমার সামনে চার-পাঁচজন দাঁড়িয়ে আছে। তারা তার রুমে ঢুকবে। আমি আর সময় পাবো না দেখে চলে এসেছি। এখন বলো, তার চুলকানি থাকলে এত খদ্দের পাইত?
মাগির দেমাগ আছে! ওই দেমাগেই খদ্দের পায়।
তোমার দেমাগ নেই?
না, আমার কোনও দেমাগ নেই। আপনে যাদের পিছনে দৌড়াচ্ছেন তাদেরই দেমাগ বেশি। মায়াকে বাদ দিয়ে আমাকে নিলে আপনে ভালো করতেন।
মায়া ও ঝর্ণা দুজনই যৌনকর্মী। অর্থ দিলে দুজনকেই কাছে পাওয়া যায়। আমি আমার নাটকের জন্য মায়াকে রাজি করানোর জন্য কয়েক মাস ধরে ঘুরেছি। ঝর্ণা আমার নাটক করার জন্য আমার পিছনে ঘুরছে। মায়ার রয়েছে অভিনয় করার প্রতি অনিচ্ছা, অন্যদিকে ঝর্ণার রয়েছে প্রচুর ইচ্ছা... কিন্তু দুজনই যৌনকর্মী। মায়ার উপর কাজের জন্য আস্থা রাখা যায়। ঝর্ণার উপর কোনও আস্থা রাখা যায় না। সে প্রচুর মিথ্যা কথা বলে। সে তার দেহ দিয়েই সব কিছু পেতে চায়। তার ফলে আজকে সে এই নিষিদ্ধ পল্লীর যৌনকর্মী। তাকে বন্ধু ভাবার কোনও কারণ নেই। তার কাছে বন্ধুত্বের অর্থই হচ্ছে শরীর।
ঝর্ণার মতো অসংখ্য নারী জীবনে নায়িকা হবার স্বপ্ন দেখে ছুটে এসেছে দেশের বড় শহরে। দৌড় দিচ্ছে নাম না জানা অনেক অসৎ পরিচালকের পিছনে। হারিয়ে ফেলছে নিজের জীবনের সুন্দর ভবিষ্যৎ। পতিত হচ্ছে পতিতাপল্লীতে। আমাদের সমাজে অজস্র অসৎ, নোংরা চরিত্রের মানুষ রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত ভালো মুখোশের আড়ালে দেশের বিভিন্ন স্থানের সহজসরল নারীদের নায়িকা হবার স্বপ্ন দেখিয়ে রাতের অন্ধকারে বিপথের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। জন্ম দিচ্ছে নতুন নতুন যৌনকর্মীর। ঝর্ণার মতো অসংখ্য নারী রয়েছে যারা রঙিন ছবির মায়াবি স্বপ্নে বিভোর থেকে প্রতিনিয়ত হারিয়ে ফেলছে তাদের জীবনের অমূল্য সম্পদ। বিভিন্ন পত্রিকায় ‘নায়িকা চাই’ সংবাদ দেখেই নারীরা ছুটছে দিক্বিদিক হয়ে। হারিয়ে ফেলছে বিবেক বুদ্ধি। জড়িয়ে পড়ছে খারাপ পথে। ধাবিত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানের যৌনপল্লীতে।
ঝর্ণাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কিভাবে এখানে আসলে?
ঝর্ণা বলল, আমি যে স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা শহরে এসেছিলাম, তা মানুষের প্রতারণার জলে ভেসে গেছে। আমি নায়িকা হবার স্বপ্ন দেখেছিলাম, আমি যদি ভালো মানুষের হাতে পড়তাম তাহলে নায়িকা না হলেও একজন ভালো পার্শ্ব অভিনেত্রী হতে পারতাম। কিন্তু এলাকার মানুষরূপী পশুতুল্য বড় ভাই আমাকে ঢাকায় এনে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। বর্তমানে ছবির অবস্থা ভালো নয়। ছবির হলে আগেকার মতো এখন আর কার্টপিচ তেমন চলে না। ছবির দু’একটা দৃশ্যে অভিনয় করে যা পাই, তা দিয়ে তো পেটের ক্ষুধাই মেটে না। আমি ঢাকা শহরের কয়েকটি আবাসিক হোটেলে শরীর বিক্রির জন্য যেতাম। সেখানকার একজনের সাথে পরিচয়ের সূত্র ধরে এখানে চলে আসি।
তুমি বিয়ে করেছো?
চলবে