বেশ্যাকন্যা

পর্ব ৫৯

সরদার মেহেদী হাসান

প্রকাশিত : মে ০১, ২০১৮

ঝর্ণা বলল, বিয়ে? আমার বিয়ে?
আমি বললাম, হ্যাঁ, তোমার বিয়ে। তোমার বিয়ে হয়েছিল?
হু।
তোমার জামায় কোথায়?
আমার কোনো জামায় নেই।
মানে! তুমিই না বললে, তুমি বিয়ে করেছো। তাহলে তোমার জামায় কোথায়?
আমি বিয়ে করেছি তা তো অস্বীকার করছি না। তবে জামায় কোথায়, তা আমি কী করে বলব?
তোমার জামায় কোথায় তুমি না জানলে কি আমি জানব?
আরে বাবা জামায় ছিল, এখন নেই। মানে আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে।
বলো কি! ডিভোর্স হলো কেন?
ডিভোর্স হবে না কেন?
প্রশ্নটা আমি তোমাকে করেছি, তুমি কেন আমাকে উল্টো প্রশ্ন করছো?
এই যে আপনে আমারে উল্টা-পাল্টা প্রশ্ন জিগাইতাছেন।
ও সরি। আচ্ছা, তোমার মাসিক কত বছর বয়সে শুরু হয়েছিল?
ওই মিয়া, এইটা কোনও প্রশ্ন হইল?
তাহলে এইটা কি হইল?
যত্তসব ফালতু প্রশ্ন। কবে মাসিক হইছে ওইটা কি বলতে হবে?
আচ্ছা, বলার দরকার নেই। তোমার ডিভোর্স হলো কেন সেইটা বলো?
আবার ওই প্রশ্ন?
আচ্ছা, আমি শুনেছি তোমার স্বামী নাকি তার দশজন বন্ধু মিলে তোমাকে গণধর্ষণ করেছে বলে তুমি তাকে ডিভোর্স দিয়েছো।
এসব ফালতু কথা কই পান?
তাহলে সত্য কোনটা?
আমাদের এমনি এমনিতেই ডিভোর্স হয়েছে।
মানুষের কি এমনি এমনি ডিভোর্স হয়? নিশ্চয় কোনও কারণ থাকে, সেইটা কি?
আমি যখন ফিল্মে কাজ করতাম তখন আমার স্বামীর সাথে পরিচয় হয়। সে ও আমি ছবির বিভিন্ন গানের সাথে গ্রুপ ডান্সে অংশ নিতাম। নিতে নিতেই পরিচয়। তারপর একদিন আমরা বিয়ে করলাম।
তারপর?
তারপর আবার কি? প্রথম প্রথম আমাদের সংসার ভালোয় চলছিল। আমি নিজেকে অনেকটা সংযত রেখে সংসার করে যাচ্ছিলাম। সে প্রচুর নেশা করতো। আমরা থাকতাম মগবাজার একটা বস্তিতে। একটা রুম ভাড়া নিয়ে কোনোমতে সংসার গোছাচ্ছিলাম। সে ফিল্মে কাজ করার পাশাপাশি নেশার ব্যবসার সাথে যুক্ত হয়ে গেল। নারীদের প্রতি আসক্তিও ছিল প্রচুর। আমাকে রাতে সময় দিত না। রাতারাত কোথায় না কোথায় যেন থাকত, জানতে চাইলে প্রচুর মারধর করতো। প্রতিদিন মারধর খেতে খেতে আমি অতিষ্ঠ হয়ে উঠলাম। আমার মাথাডা বিগড়ায়ে গেল। আমিও খারাপ ধান্দায় জড়ায়ে পড়লাম। বস্তির কিছু মাস্তান পোলার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুললাম। বিনিময়ে তাদের সাথে দৈহিক সম্পর্কও গড়ে উঠল। এখন স্বামী আমাকে মারধর করতে পারে না। এভাবেই একদিন আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেল। আমি আরো বেশভাবে খারাপ পেশায় জড়ায়ে গেলাম। সেই ছেলেগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন হোটেলে আসা-যাওয়া শুরু হলো। আমার নেটওয়ার্ক বাড়তে থাকল। এর মধ্যে এলাকার কিছু মাস্তান আমাকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করা শুরু করেছিল। তখন আমি তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য এখানে চলে আসি। এখানে খদ্দের দ্বারা নির্যাতিত হবার ভয় কম। এখানে এসে খারাপের ভালো আছি।
খারাপের ভালো মানে?
ওইখানেও খারাপ কাজ করছি, এখানেও খারাপ কাজ করছি। ওইখানে প্রতিদিন পুলিশের ভয় করতে হতো। মাস্তানদের ভয় করতে হতো। হোটেল ম্যানেজারদের খুশি করতে হতো। দালালদের টাকা দিতে হতো... আরও কত ঝামেলা! এখানে অত ঝামেলা নেই। যত ঝামেলা হোক নেত্রী সামলাবে। এখানে খারাপের মধ্যেও অনেকটাই ভালো আছি।
এইটাকে ভালো থাকা বলে? জীবনটাকে কি আরও সুন্দর করা যেত না?
যেত হয়তো, কিন্তু এখন এই সময়ে এসে কিভাবে জীবনটাকে সুন্দর করব? সুন্দরের পথটা তো অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছি।
পথ হারানোর দোষটা কার?
কাকে আবার দোষ দিব, দোষ তো আমার। আমি নিজের দোষেই এখানে এসেছি, বাবা-মা`র কথা কোনোদিন শুনিনি। সারাদিন নায়িকা হবার স্বপ্ন দেখেছি। পড়ালেখা ঠিকমতো করিনি। স্কুলে ঠিকমতো না যেয়ে ছেলে বন্ধুদের সাথে অবাধে মেলামেশা করেছি। ছোটবেলা থেকেই কেন জানি আমি বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলাম। আমার জীবনটা আমি নিজেই ধ্বংস করেছি।
তোমার বাবা-মা`র সাথে যোগাযোগ আছে?

চলবে