
বেশ্যাকন্যা
পর্ব ৬০
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : মে ০২, ২০১৮
ঝর্ণা বলল, বাবা-মা`র সাথে?
আমি বললাম, হ্যাঁ।
বাবা তো আমার নামই শুনতে পারে না। কতদিন বাবাকে দেখিনি। বাবা আমাকে তার জীবনের চেয়েও বেশি আদর করতো। কিন্তু এখন আমাকে জীবনের সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে। বাবার কোনও দোষ নেই। সব দোষ আমার। আমি বাবার ভালোবাসার দাম দিতে পারিনি। আর তাই এই নরকে বসবাস করতে হচ্ছে। আগে যদি বাবা-মার কথার গুরুত্ব দিতাম, তাহলে এ নরকে আসতে হতো না।
তোমার মা? তিনিও কি তোমাকে ঘৃণা করেন?
না। মা আমাকে ঘৃণা করে না। কিন্তু তিনি আমাকে দেখলেই কাঁদে।
মা তো।
নাড়িছেঁড়া ধন আমি।
সহজেই কি ঘৃণা করতে পারে? দশটা মাস পেটে রাখছে, সহজে কি সেই কষ্ট ভুলে যেতে পারে?
আমি পাপী।
আমি বাবা-মাকে কষ্ট দিয়ে পাপ করেছি।
তাদেরকে কষ্ট দেবার পরিণামই বুঝি এই অভিশপ্ত জীবন।
মার সাথে দেখা হয়?
বাবাকে মা প্রচণ্ড ভয় পায়।
তোমার বাবা কি মাকে মারধর করে?
না না না। বাবা কোনও দিন মার শরীরে হাত তোলেনি। বাবা মাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে।
তাহলে ভয় পায় কেন?
ভালোবাসার ভয়। যদি কোনও ছোট্ট কারণে তার এই ভালোবাসার মানুষটি হারিয়ে যায়, সে ভয়। ভালো স্বামী একজন নারীর জীবনে অমূল্য সম্পদ। তা কি কোনও স্ত্রী তার সামান্য পরিমান ভুলের কারণে হারাতে চাইবে?
তাহলে তোমার সাথে তোমার মার কোনও দেখা হয় না?
হয়। খুব কম। বাবার চোখ এড়িয়ে। বাবা যখন বাড়িতে থাকেন না, তখন লুকিয়ে মার সাথে দেখা করে আসি।
মা কি বলে?
মা আর কি বলবে? যা হবার তা তো হয়েই গেছে। এখন শুধুই হা পিত্তেস।
এখন কি তোমার অনুশোচনা হয়?
হয়। খুবই হয়। যখন অসুখ-বিসুখ হয় তখন খুবই মনের দিক দিয়ে ভেঙে পড়ি। পাশে দাঁড়ানোর মতো কোনও লোক থাকে না। সবাই যে যার জন্য ব্যস্ত। আমি একাই বিছানায় শুয়ে থাকি আর ভাবি, আহা, মা যদি পাশে থাকত! তখন প্রচুর কাঁদি। তখন চিৎকার করে মাকে ডাকতে ইচ্ছা হয়। তখন কান্না ছাড়া কেউ পাশে এসে দাঁড়ায় না। কান্নাই তখন জীবনের সব।
তোমার দেশের বাড়ি কোথায়?
খুলনা।
খুলনা কোথায়?
বলা যাবে না।
খুলনার মেয়েরা নাকি জন্মের পর থেকেই স্বপ্ন দেখে নায়িকা হবার?
কে বলে এসব কথা?
কথা কি সত্য?
হা হা হা... সত্য কিনা জানি না, তবে বাংলাদেশের সব বড় বড় স্টার নায়িকারা কিন্তু খুলনার। সেদিক থেকে হয়তো সবাই ভাবে এমন। আমাদের গ্রামেরও একজন বড় নায়িকা আছে।
তোমার গ্রামের নাম কি?
বলা যাবে না।
তোমার নাম বেশ সুন্দর, কে রেখেছে?
আমার বাবা। আমি ছোটবেলায় পরির মতো সুন্দর ছিলাম। পরিরা নাকি সব সময় ঝর্ণাতে গোসল করে। আমি যেহেতু পরির মতো সুন্দর ছিলাম সেহেতু বাবা আমার নাম রেখেছে ঝর্ণা। ঝর্ণা নাকি দেখতে পরির মতো সুন্দর।
তুমি ঝর্ণা দেখেছো?
দেখেছি।
কোথায় গিয়ে দেখেছো?
ছবিতে।
মানে!
হা হা হা... কিভাবে দেখবো? বাবা গরিব। কে নিয়ে যাবে আমাকে ঝর্ণা দেখাতে? কাগজের ছবিতে দেখেছি ঝর্ণা খুব সুন্দর। কাগজেই যেটি দেখতে সুন্দর সেটি বাস্তবে দেখতে কতই না সুন্দর হবে... তা ভাবতেই মন ভরে যায়। আপনে কি ঝর্ণার পানিতে ভিজেছেন?
না।
ভিজবেন?
কিভাবে?
কিভাবে মানে... ঝর্ণাতে।
এখানে ঝর্ণার পানি পাব কোথায়?
কেন? চোখে দেখেন না?
দেখি তো।
তাহলে?
তাহলে কি?
আমার মতো জলজান্ত ঝর্ণা দেখেও বোঝেন না?
হা হা হা... তোমার কথা বলছো? তবে এ ঝর্ণাতে ডুব দিব কিভাবে?
কত মানুষ ডুব দিয়ে গেল... আপনে বলছেন, কিভাবে ডুব দেব?
হা হা হা... তুমি কি আমাকে ঝর্ণার জলের ফাঁদে ফেলতে চাও?
হা হা হা... ফাঁদে ফেলতে যাব কেন? ঝর্ণার জলে নামানোর জন্য কি কাউকে ফাঁদে ফেলতে হয়? সবাই তো এমনিতেই জলে নেমে আসে।
হা হা হা... ঝর্ণার সৌন্দর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে কখনও কখনও মানুষ দিক্বিদিক হয়ে জলে নেমে যায়। কিন্তু জলে নামার আগে ভেবে দেখা উচিৎ নয়? তাতে আমাদের পা পানিতে স্লিপ কাটবে কিনা?
পা চিপে চিপে নামলেই হয়।
ঝর্ণার সৌন্দর্য দেখেই তো আমাদের মাথা নষ্ট হয়ে যায়। পা চিপে চিপে নামার চিন্তা কি মাথায় আসবে? এর চেয়ে বরং ঝর্ণার সৌন্দর্য তাকিয়ে থেকে উপভোগ করাই ভালো।
তাতে কি মনের ক্ষুধা মিটবে?
যতদিন মনে ক্ষুধা থাকবে, ততদিন মনে ঝর্ণার সৌন্দর্যের চাহিদা থাকবে। ক্ষুধা শেষ, চাহিদাও শেষ। আমি চাই না, আমার মন থেকে ঝর্ণার সৌন্দর্য কোনোভাবেই বিনষ্ট হোক। ঝর্ণার চলার পথের কি কোনও থামার লক্ষণ আছে?
থেমে কি লাভ? থেমে গেলেই কি পেট ভরবে?
থামার দরকার নেই। তোমার চলার গতিপথটা কি একটু ঘুরিয়ে সভ্য সমাজের দিকে প্রবাহিত করা যায় না? আমাদের সভ্য সমাজে ফিরতে কি তোমার ইচ্ছে করে?
চলবে