
বেশ্যাকন্যা
পর্ব ৬৩
সরদার মেহেদী হাসানপ্রকাশিত : মে ০৮, ২০১৮
সেদিনের পর থেকে স্ক্রিপ্টের পরিবর্তন হতেই থাকছে। পল্লীর আকাশে মেঘের চোর-পুলিশ খেলার মতো আমার কাজের মধ্যেও কর্ম-বিন্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে। শিল্পীর বাড়িতে মায়ার টাইটেল দৃশ্যের শুটিং করছি। শাড়ির কুচি দেয়া থেকে শুরু করে পায়ে আলতা দেয়ার দৃশ্য ধারণ হচ্ছে ক্যামেরায়। মায়া তার ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা হেঁটে বাড়ির মেইন গেট পেরিয়ে খদ্দের ধরার জন্য মেইন গলিতে যাবে। এ দৃশ্যটি ধারণ করার জন্য ট্রলি বসানো হয়েছে। এখানে সার্কেল ট্রলির কাজও করতে হবে। আমরা প্রস্তুত। ক্যামেরা অন। মায়া হেটে যাচ্ছে... সঙ্গে ট্রলিতে ক্যামেরা চলছে...
কাট।
কোথায় যেন চোখে ঝাকি খেল। আবার টেক নিতে হবে। টেক শুরু হলো... আবার কাট। মায়া জিজ্ঞেস করল, কি সমস্যা? আমি তো ঠিকমতোই হেঁটে যাচ্ছি!
মামুন বলল, ভাই কি সমস্যা? ক্যামেরায় কোনও সমস্যা?
আমি বললাম, না, ক্যামেরায় কোনও সমস্যা নেই। শটে সমস্যা, চারদিকে প্রচুর লোক আমার বাঁধের উপর চড়ে বসে আছে, কি বলব? বুঝতেছি না। মায়াকে কাছে ডেকে বললাম, ঘরে গিয়ে শরীরটা বেঁধে আসো।
বুঝলাম না কিছু। বলল মায়া।
আরে বাবা, এত মানুষের সামনে তো কিছু বলা যায় না। তুমি তোমার শরীরে কোনও একটা ড্রেস পরোনি। তাতে তোমার শরীরটা হাঁটার দুলনিতে বেশ ভালগার লাগছে।
এবার মনে হয় ব্যাপারটা সে বুঝতে পেরেছে। কিছুটা লজ্জা পেয়ে ঘরের দিকে দৌড়ে গেল। এটি বুঝাতে এবং তা পরে এসে পুনরায় শুটিং শুরু করতে অনেকটা সময় নষ্ট হয়ে গেল। শুটিং শেষে সে আমাকে বলল, বন্ধু, তখন আমার জিনিসটা দেখতে কি খুব খারাপ লাগছিল?
কোন জিনিসটা?
আরে বাবা, ব্রা ছাড়া শুধুই ব্লাউজ পরে প্রথমে যে দুটা শট দিয়েছিলাম?
বলো কি? ঐ শট ব্যবহার করলে আমার দর্শকরা বেশ অসুস্থি অনুভব করতো। এতে অভিনয় শিল্পী হিসেবে তুমি হিট হবার পাশাপাশি আমার দর্শকরাও হিট হয়ে যেত।
আজকালকার অনেক পরিচালক তো এ ধরনের শটই তো চায়, সমস্যা কি? দর্শক হিট হলে ছবি হিট... হা হা হা।
ছবির স্ক্রিপ্টের প্রয়োজন অনুপাতে কখন কখন তা করা যেতে পারে। কিন্তু তা অবশ্যই স্থান/কালের সাথে সংগতিপূর্ণ হতে হবে। হুদাই কাটপিস দেখালেই হবে না।
যাই হোক, অনেক মজার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি খারাপ অভিজ্ঞতাও এখানে হচ্ছে। শুটিং এর ২য় দিন না যেতেই ক্যামেরা পার্সন মামুন আমাকে বলল, মেহেদী ভাই, রফিক ভাই ( মাইক্রোর ড্রাইভার) আজকেই চলে যেতে চাচ্ছে।
বলো কি? এখনই কেন? আরও পাঁচদিন তো থাকতে হবে।
হা হা হা...ভাই, তার অনেক সমস্যা। বাড়িতে যেতে হবে।
তুমি হাসছো কেন? কোনও সমস্যা?
হা হা হা.. সমস্যা মানে... রফিক ভাই এখানকার এক মেয়ের কাছে দুদিন যেয়েই তার সব টাকা/ঘড়ি দিয়ে আসছে। তার হাতে কোনও টাকা নাই, এজন্য সে চলে যেতে চাচ্ছে।
সে মেয়েটির ওইখানে গিয়েছে কেন?
ভাই... তার নাকি মাথায় খারাপ হয়ে গেছে। এখানে থাকলে নাকি তার মাইক্রোই বিক্রি করে ফেলতে হবে।
হা হা হা... ওই পাগলডা আমাদের সাথে আসল কেন? অরে তো এখন থাপরানো উচিৎ, সে এখন কোথায়?
সে এখন মাইক্রোতে বসে আসে, কিছু টাকা দিলে সে চলে যাবে।
কতই না পাগল রয়েছে দুনিয়াতে। কেউ পড়ায় পাগল। কেউ গানে পাগল। কেউ খাওয়াতে পাগল। কেউ টাকাতে পাগল। কেউ বউয়ে পাগল। কেউ প্রেমিকার পাগল। কেউ নারীতে পাগল।
এরকম অসংখ্য ঘটনা/দুর্ঘটনার মধ্যে দিয়ে আমার শুটিং এর সাত দিন পার করলাম। এরপর ঢাকায় ফিরে পোস্ট-প্রোডাকশনে চলে গেলাম। এরই মধ্যে দেশের বেশ কিছু জাতীয় দৈনিকে আমার কাজের উপর ফিচার/নিউজ প্রকাশিত হয়েছে। আমার আরও কিছু দৃশ্য ধারণ বাকি থাকায় আমার কাজে কিছু বিঘ্নিত হয়েছে। তারপরও আমি খুশি। এর মধ্যে ২০০৮ এর ২৯ জুলাই আমি বিয়ে করি। আমার বাসায় তখন থেকেই ফুল প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং প্যানেল ছিল, আমার গিন্নী আমার সকল এডিটিংয়ের কাজে প্রত্যক্ষ সহযোগী। বিয়ের পর থেকেই সে দেখে আসছে, আমি যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করছি, তখন আমার প্যানেলে আমার পরিচালিত একটা ধারাবাহিক নাটকের কাজও চলছিল, আমার ডকুড্রামাটির এডিটিং সম্পন্ন হলে আমার সহধর্মিণীর আর্থিক সহযোগিতায় ২০১১তে ঢাকা পাবলিক লাইব্রেরিতে টানা দুদিন ডকুড্রামা ‘স্বপ্নাতীত স্বপ্ন’ প্রদর্শিত হয়েছিল। গিন্নী নিজে উপস্থিত থেকে আমার সেই ইভেন্টটি সুন্দরভাবে শেষ করতে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছিল। ওই প্রদর্শনের পরই মূলত দেশের সকল প্রিন্ট ও ভিজ্যুয়াল মিডিয়া প্রচার করেছিল যে, যৌনকর্মীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে নির্মীত দেশের সর্বপ্রথম ডকুড্রামা, স্বপ্নাতীত স্বপ্ন।
চলবে