ভণ্ড নাস্তিকেরা কোনো দিকেরই নয়

মো. শরিফুল আলম

প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ০৫, ২০২১

একজনের আদর্শ ও বিশ্বাস আরেকজনের সাথে মিলবে না, এটাই স্বাভাবিক। যারা সত্যিকারের মানবিক জ্ঞানসম্পন্ন মানুষ তারা অন্যের বিশ্বাস বা আদর্শকে পছন্দ না করলেও মানুষ হিসেবে মানুষের প্রতি শ্রদ্ধার জায়গাটা ঠিকই রাখবে। আমাদের সমাজে যাদেরকে নাস্তিক বলি তারা কি আসলেই নাস্তিক? নাস্তিক কাদের বলে?

নাস্তিকের সংজ্ঞা হচ্ছে, যে সৃষ্টিকর্তাই বিশ্বাস করে না। কোনো মানুষ যদি বিশ্বাস করে একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন, সে কোনো ধর্ম পালন করুক বা কোনো ধর্ম পালন না করুক, তাকে নাস্তিক বলা যাবে না। কাউকে নাস্তিক বা আস্তিক ঘোষণা করার অধিকার বা এখতিয়ার কোনো মানুষ বা প্রতিষ্ঠানের নেই।

একইভাবে কোনো নাস্তিকেরও অধিকার নেই কারও ধর্মবিশ্বাসে আঘাত করা। পৃথিবীতে প্রায় চার হাজার দুশোটা ধর্ম আছে। এর মধ্যে শুধু ইসলামের নিয়ম বা মুসলিমদের বিশ্বাসের প্রতি আঘাতই প্রমাণ করে যে, এরা মূলত নাস্তিক নয়। এরা ইসলাম বিদ্বেষী। আরে ভাই, কোনো ধর্ম যদি ভালো না লাগে, তাহলে সেই বিশ্বাস নিয়ে তুমি থাকো। কিন্তু সেটা আবার তোমার লেখা বা কথার মাধ্যমে ছড়িয়ে তুমি কি বিশ্বাসীদের উস্কে দিচ্ছ না?

আর তুমি যদি এত বড় মহারথি আর পণ্ডিতই হও তাহলে নিজেই তোমার আদর্শ আর বিশ্বাস দিয়ে নতুন একটা ভালো ধর্ম তৈরি করো। যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করো যে, তোমারটাই শ্রেষ্ঠ। যত দিন তা না করতে পার, ততদিন চুপ করে থাকাটাই সকলের জন্য মঙ্গলজনক।

ধর্ম বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের কারণে কাউকে হত্যা বা কতল করার আইনি, ধর্মীয় কিংবা নৈতিক অধিকার কারো নেই। আমার ঘৃণা হচ্ছে, নাস্তিকদের আশপাশের আবালগুলোর জন্যে। তোমরা যারা বলো, একজন মানুষের যদি আস্তিক হবার অধিকার থাকে, তবে নাস্তিক হবার অধিকারও নিশ্চয় আছে। অবশ্যই আছে, প্রতিটি মানুষেরই আছে নিজের বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকার। তার চারপাশের মানুষ হিসাবে আমাদেরও উচিত তার বিশ্বাস বা আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। কিন্তু এই নাস্তিক মানুষটার মৃত্যুর পর যখন কোনো ধর্মীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়, তার অর্থ কি এই দাঁড়ায় না যে, আমরা তার বিশ্বাসের মূল্যায়ন করতে পারলাম না?

যে মানুষ তার জীবদ্দশায় ধর্মের প্রতি এত তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করে, সেই মানুষকে কেনই বা আবার ধর্মের নিয়ম মেনে মাটির নিচে যেতে হবে? আর কেনই বা এসব অবিশ্বাসীরা জীবদ্দশায় তাদের অনুসারীদের কাছে নির্দেশনা দিয়ে যায় না যে, তাদের মৃত্যুর পর যেন কোনো ধর্মীয় অনুশাসন না মেনে দেহটা শুধু মাটির নিচে পুতে দেয়া বা অন্য কোনো প্রক্রিয়া অবলম্বন করে যেন সম্পন্ন করা হয়।

আবার, ব্যক্তির নামকরণও এক্ষেত্রে বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রতিটি ধর্মেই তার অনুসারীদের নামকরণের একটা বিশেষ ধারা আছে। যে নাম শুনে বোঝা যায়, মানুষটা ওই ধর্মের। নাস্তিকরা কেন তাদের নামে ধর্মীয় পরিচয় বহন করে? এটাও তো তাদের এক ধরনের ভণ্ডামি।

ভণ্ড নাস্তিকরাই সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর সমাজ জীবনে। কেননা এরা কোনো দিকেরই নয়। না আস্তিক হতে পারে, না পারে ধার্মিক হতে। নাস্তিক হতে হলে, নাস্তিকের মতোই নাস্তিক হওয়া উচিত। নয়তো ভণ্ডামি ছেড়ে দেয়া উচিত।