ভাষারহস্যে আবৃত প্রহেলিকা ‘কালকেতু ও ফুল্লরা’

সৈয়দ তারিক

প্রকাশিত : জুলাই ২১, ২০২০

আমাদের বন্ধু পুণ্যাত্মা সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ যেমন কবিতা রচনায় সম্রাট তেমনি গদ্যেও মহারাজ। কী গল্প-উপন্যাস, কী প্রবন্ধ— সবেতেই তার অধিকার ঐশ্বর্যময়।

`কালকেতু ও ফুল্লরা` একটি অপরূপকথা। এই পুস্তক অবিশ্বাস্য রকম উদ্ভট ও অসম্ভব বিষয়ে পরিপূর্ণ, যা আসলে একটি জাদুর আয়নায় প্রতিফলিত আমাদের নিতান্ত চেনাজানা ঘটনা ও চরিত্রের সমাহার। এর শব্দমালা ভাষারহস্যে আবৃত এক প্রহেলিকা।

এই আখ্যানের একস্থানে কাতির নামে একটি চরিত্র আছে। আদিতে কাতির নামকরণটি মহান ইচক কর্তৃক সম্পাদিত হয়েছিল। এমনকি এই নামেই তিনি ব্যাংকের চেকও প্রদান করেছিলেন। তো সেই কাতির যে যুবরাজ সবুতরকে থুক্কু কালকেতুকে কিক কষে জন্মজন্মান্তরের মতন অভিশপ্ত হয়েছে, সেই বয়ান এতে কষ্টাক্ষরে অর্থাৎ কষ্টিপাথরে খচিত হয়েছে।

কিন্তু আমার কাছে এই পবিত্র আখ্যান কেবল একটি শব্দগুচ্ছের কারণে আচমনশুদ্ধিযোগে পঠনীয়: ডেক্সট্রোনটিকস-এর উপাসক। আহা! মহামহোপাধ্যায় পয়গম্বর সবুতর আমাকে এই স্বর্গীয় আরকের সন্ধান জানিয়েছিলেন। এই গুপ্ত উপাসক সম্প্রদায়ে অন্তর্ভুক্ত হবার দুর্লভ সুযোগ তিনি দিয়েছিলেন। সেই গোলাপি বর্ণ, সেই সুরভি, আর সেই মৌতাত জন্মান্তেরও আমি ভুলিব না, আমি কভু ভুলিব না। হে কালকেতু, নমো হে, নমো নমঃ।

কালকেতু গজগজাতেগজাতে বিপ্রখ্যাত বুলবুল বৃক্ষের তলায়, সাবদার বেদিতে যান। সেথায় আর-একদল কবি-কথক, যারা অ্যাস্ট্রোনটিকস-বিরোধী, এবং ডেক্সট্রোনটিকস-এর উপাসক, ব’সে (সকলে অবশ্য নয়), চেহারায় সুনিপণু গাম্ভীর্য আনছেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফিদর হম্মাদ, কাতির সওদাগর, জুজু মালহার, উজির আলাদিন, ঈশান জয়দ্রথ্, এবং শিলা আমিষাশী। ফিদর অবশ্য বেদিতে নেই। তিনি বুলবুল বৃক্ষের একটি ডালে বাদুড়ঝোলা হয়েছেন/রয়েছেন।

কাতির শুধান, কালকেতু নাকি?
জি-না,কালকেতু বলেন।
কালকেতু না! কাতির বিস্মিত হন।
আজ্ঞে না, কালকেতু পুনশ্চ বলেন।
সত্যি বলো, তুমি কালকেতু নও? কাতির পুনরপি কাতরান।
নো! নো! নো! কালকেতু চেঁচান।

শুনে, পিজির ক্যান্সার-ওয়ার্ডের চিলছাদে ঘুমানো একটা মোরগের ঘুম চটকে যায়, এবং সে তারস্বরে অভিযোগ করে— ‘কোক্কড়কো! কোক্কড়কো! কোক্কড়কো!’

কাতির তখন, কোনোরূপ উস্কানি ছাড়াই, আবৃত্তি করেন, ঘোড়া হাতে অশ্ব ছুটে যায়, রজস্বলা হলে নাকি, মেয়ে?
এ-পর্যন্ত শুনে, শিলা, বলেন, আজকে? তুই রেতস্বল হবার প্রায় সাতশো বছর আগে— শালা আবাল!
রমণী-মুখে অকথ্য শুনে কালকেতু অসহায় বোধ করেন, বলেন, ভদ্রে, এই কি তোমার উচিত বাতচিত হইতেছে?
শিলা বলেন (কালকেতুকে), তোর তো এখনও হয়ই নি— তুইই হয়েছিস কীনা, সন্ধেয়।
কালকেতু নিরুপায়ে ফিদরকে বলেন, বাঁদরজি, অবতরণে আজ্ঞা হয়।

ফিদর, পায়ে ঝুলে পড়ে, বগোল বাজিয়ে ধরেন:
দেখেছ নাকি তারার ফাঁকি
আকাশ আমি ঘোর একাকী
আয় রে লড়ি কাস্তে ধরি
মেঘের মাথায় হল্লা করি
ভ্যাংকুড়াকুড় ভ্যাংকুড়াকুড়

না-নানানা না-নানানা
ঘোলাজলে আর না’ব না
আর যাব না প্রেতের পিছে
বিস্মরণীর নিতল নীচে
আয় রে লড়ি কাস্তে ধরি
আশাবরির বিভাবরী
ভ্যাংকুড়াকুড় ভ্যাংকুড়াকুড়

প্রেমের চাপে কাঁপছে মাটি
গ্র্যানিট-কঠিন লাল-তামাটে
কে তুই এলি চোখ-দু’টিকে
দুধের বোঁটায় ঝুলিয়ে রেখে
বুঝেছি গো বুঝেছি
তোমায় আমি খুঁজেছি

না-নানানা না-নানানা
আজ রাতে আর নয় শাহানা
নয় বাহানা হাস্নুহানা
তোমায় আমি মারব না
তোমায় আমি ছাড়ব না

হরির উপর হরি হরি
আয় রে লড়ি কাস্তে ধরি
আয় শকুনি পরম গুণিন
খোল রে ভূমার হিমকবরী
ভ্যাংকুড়াকুড় ভ্যাংকুড়াকুড়

না-নানানা না-নানানা
দোলাচলে আর যাব না
মুণ্ডু-হাতে বেতাল ভোলা
বিজুলিজালে বাদুড়-ঝোলা
ভ্যাংকুড়াকুড় ভ্যাংকুড়াকুড়
ভ্যাংকুড়াকুড় ভ্যাংকুড়াকুড়

এরপর, সম্ভবত ল্যাজ নেই ভুলে গিয়ে, এবং ল্যাজে ঝুলবার চেষ্টায়, তিনি পা ছাড়িয়ে নেন ডাল থেকে এবং তারপর যা হবার তা-ই হয়। তিনি অকালে, সাবদার বেদিমূলে, শাহবাগের সাতশ’-সাততম, শহিদ হ’ন।

কাতির এই মৃত্যুর দায় পুরাপুরি কালকেতুর শিরে অপর্ণ-করতঃ বলেন, তুমি দায়ী, তুমি আততায়ী!
তারপর অকস্মাৎ, কালকেতুর বুকে একটা ফ্লাইং-কিক তিনি নেন। কালকেতু ধড়াধ্বড় ধরাশায়ী হন। তখন শিলা এগিয়ে এসে, গা তোল, ভোজন কর, অহে প্রাণনাথ! বলে কালকেতুর হাঁ-মুখে বাগিয়ে ধরেন...

এতন্মুহূর্তে ফুল্লরা দৌড়ে আসেন, বলেন, অলমতি বিস্তরেণ। ফিদরের পানে তাকিয়ে বলেন, আপচ্ছান্তিঃ। এবং কালকেতুকে তুলে নিয়ে হাঁটতে লাগেন। পিছন থেকে শিলার খেয়ে গেলি নি, বাপ! খিদে পাবে যে! এবং কাতিরের মনোডির ধ্বনি ভেসে আসে:

Here lies John Bun
Who was killed by a gun.
His name was not Bun, but Wood.
Wood would not rhyme with gun,
But Bun would.

উপন্যাস : কালকেতু ও ফুল্লরা
লেখক: সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ সু ব্রত অগা গোম
কভার : হার্ড কভার
সাইজ : ৬×৯
পৃষ্ঠা সংখ্যা :

১৬৮ পৃষ্ঠার উপন্যাসটি ২০১৮ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশনা সংস্থা বৈভব প্রকাশ করে। ৩৫% ছাড়ে দাম ২৬০ টাকা। আগ্রহী পাঠক বইটি পেতে ঢুঁ মারতে পারেন https://web.facebook.com/boibhob.pub/?hc_location=ufi

একুশে বইমেলা ২০১৮