মিজানুর রহমান আজহারী

মিজানুর রহমান আজহারী

মহাকালে রেখাপাত

পর্ব ১০

স্বকৃত নোমান

প্রকাশিত : জানুয়ারি ২৭, ২০২০

ধর্মের নামে যখন অধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়, ধর্মকে যখন পণ্য করে তোলা হয়, তখন মিজানুর রহমান আজহারীর মতো ধর্মব্যবসায়ীর উত্থান ঘটে। প্রায়ই শোনা যায়, আজহারীর ওয়াজ মাহফিলে হিন্দুরা মুসলমান হচ্ছে। আসলেই কি তাই? আসল ঘটনা শুনুন সুফি ঘরানার ইসলামি বক্তা আল্লামা মুফতি হাছানুর রহমান হোসাইন নকশবন্দির জবানে। এক ওয়াজ মাহফিলে তিনি গোপন কথা ফাঁস করেছেন। তাঁর বক্তব্য হুবহু তুলে দেওয়া যাক, “নরসিংদীতে মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিলে এক বেডিরে স্টেইজে উডাইয়া মুসলমান বানাইছে। মহিলার বাড়িও নরসিংদী। মহিলার নাম দেলোয়ারা বেগম। তিনি আগে থেকেই মুসলমান। তিনি ছাত্র শিবিরের অঙ্গসংগঠন ছাত্রী কাফেলার কর্মী। তারে স্টেইজে উডাইয়া মুসলমান বানাইল। এই বাদাইম্মা (আজহারী), বেডিরে স্টেজে উঠাইলে ক্যান? মানুষেরে দেখাইতি, ক্যান? এই জীবনে তোরা যতজন মুসলমান বানাইছস, একজনও লাইনে আছে দেখাইতি পারবি? পারবি না। কারণ সব তোদের ভণ্ডামি আর নাটক। কুষ্টিয়ার ওই আমীর হামজা, হেই বেয়াদ্দবও ধরা খাইছে। এক বেডারে সে মুসলমান বানাইছে। পাবলিক কয়, হুজুর এই বেডা এ যাবৎ তিন বার মুসলমান হইছে। এক মানুষরে তোরা আর ক’বার মুসলমান বানাইবি?”

ক’দিন আগে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার হাজীপুর পাটোয়ারী বাড়িতে আজহারীর একটি মাহফিল হয়। সেখানে এক ‘হিন্দু পরিবারের’ এগারোজন সদস্য ‘মুসলমান’ হয়। তারা হলেন: শঙ্কর অধিকারী, তার স্ত্রী রেখা অধিকারী ও সুজাতা অধিকারী। তাদের সন্তান মিতালী, শেফালি, রুপালি, কোয়েল, শ্যামলী, রাজা, সুমা, রাজেশ এবং নাতি সূর্য। গতকাল রাতে এদেরকে গ্রেফতার করেছে রামগঞ্জ থানাপুলিশ। এলাকাবাসী বলছে, এরা প্রত্যেকেই মুসলমান। শঙ্কর অধিকারীর প্রকৃত নাম মনির হোসেন। তিনি ইছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের মেম্বার মোসাম্মদ ফাতেমা বেগমের পুত্র। বেশ ক’বছর ভারতে ছিলেন। বিয়েও করেন সেখানে। দুই স্ত্রী তার। দুই সংসারে ছেলেমেয়ের সংখ্যা আট। তারা হচ্ছে: মরিয়ম, শোফালী বেগম, মারিয়া, নুসরাত, জান্নাত, আবদুল করিম, আয়েশা, আবদুল্লাহ। শঙ্করের নাতির নাম আবদুর রহমান। রামগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, গ্রেফতারকৃতরা ভারতীয় নাগরিক। তাদেরতে ভারতে ফেরত পাঠানো হবে।

মিজানুর রহমান আজহারী এবং তার মতো আরো কয়েকজন ইসলামি বক্তা কেন একের পর এক ধর্মান্তরের এসব নাটক করে বেড়াচ্ছেন? কারণ আছে। আজহারীর হাতে যত হিন্দু ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হবে তত তার নাম ছড়াবে, তত তার বাজার বৃদ্ধি পাবে। ধর্ম তার কাছে পণ্য। ধর্মকে বিক্রি করে তিনি লাখ লাখ টাকা কামাচ্ছেন। বাজার বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ করার দরকার হলে কেন করবেন না? হিন্দু থেকে মুসলমান হওয়ার এই নাটকগুলো তার বিনিয়োগ। এজন্য হয়তো তিনি টাকাও খরচ করছেন। মনির হোসেন হয়তো টাকার লোভেই শঙ্কর অধিকারী সেজেছেন। টাকার লোভেই তার স্ত্রী-সন্তানদের হিন্দু সাজিয়েছেন। নইলে কী কারণে হিন্দু সাজলেন, সাজালেন? নাকি ইসলামের স্বার্থে তিনি এই প্রতারণা করেছেন? ইসলামে কি এমন মিথ্যাচার, এমন প্রতারণা বৈধ? আমার ঠিক জানা নেই।

ধর্ম নিয়ে এই যে তামাশা, এর জন্য কি মনির হোসেনের বিচার হবে? মাওলানা আজহারীর বিচার হবে? ধর্ম মন্ত্রণালয় নামে যে একটি মন্ত্রণালয় আছে, এসব প্রতারণা ও নাটক বন্ধে মন্ত্রণালয়টির কি কোনো দায় নেই? তাহলে মন্ত্রণালয়টির কাজ কী? নাকি কোনো বিচারই হবে না? এসব তামাশা চলতেই থাকবে? আমার মনে হয়, চলতেই থাকবে। আমার মনে হয়, চলতে দেওয়া উচিত। দেশের মানুষ এই প্রতারকদের চিনুক। ধর্মভীরু মানুষদের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে যে এরা প্রতারণা করছে, তা জানুক। এদের মুখোশগুলো উন্মোচিত হোক।

২৬.১.২০২০