
মারিয়া সালামের অণুগল্প ‘ও বন্ধু লাল গোলাপি’
প্রকাশিত : আগস্ট ০৬, ২০২৫
৬ আগস্ট দুপুর। টং দোকানে চায়ের কথা বলে বসে আছি। গলির মধ্যে ছোট-ছোট জটলা হলেও কারওয়ান বাজার অনেকটাই ফাঁকা। মানে, চায়ের দোকানে বিক্রি কম। কর্মচারী ছেলেটা ঘন-দুধের চায়ে টোস্ট ভিজিয়ে খাচ্ছিল আর কিছুক্ষণ পরপর মোবাইলে চোখ বুলাচ্ছিল, আর ঠোঁট নাড়ছিল, ও, বন্ধু লাল-গোলাপি...
চায়ের কথা বলতে গানে বিরাম দিয়ে ছেলেটি বলল, আপা খাড়ান, নাস্তা সাইরা চা দিতাছি।
আমারও তেমন তাড়া ছিল না। মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে কোণার দিকে বসে রইলাম।
ছেলেটা মোবাইলের দিকে তাকিয়ে খিকখিক করে হাসছে আর গলা চড়াচ্ছে, ও, বন্ধু লাল-গোলাপি...
হঠাৎ রাস্তার দিক থেকে একটা চপ্পল উড়ে এসে ছেলেটার কানের পাশ দিয়ে গিয়ে দোকানের ভেতরের দেয়ালে আছড়ে পড়ল। থতমত খেয়ে কিছুটা কেঁপে উঠল ছেলেটা। কাপ থেকে বেশ অনেকটা চা মেঝেতে গিয়ে পড়ল।
নিজেকে সামনে নিয়ে রাগী রাগী গলায় চপ্পলঅলার দিকে তাকিয়ে বলল, এইডা কি হলো মামা? কেবল একটু নাস্তা করতে নিছি।
হালার পুত, কয়দিন ধরে বেচাবিক্রি নাই আর তুই কাস্টমার বসায় গান মারাস।
কথা শুনে আঁচ করা যাচ্ছে, চপ্পলঅলা দোকানের মালিক। ছেলেটা আবার খিক করে হেসে বলল, আরে মামা, ফেসবুকে দেহেন। কয়দিন পর এমবি কিইনা ফেসবুকে ঢুকছি। ঢুইকাই দেখি রঙ্গ। ফেসবুকে খালি লাল আর কালা, সবাই লাল, মাঝখান দিয়ে কয়েকটা কালা-কালা। এর মধ্যে লাল দলের এরা বলছে, এরা গোলাপিরে দলে নিব না।
কই দেহি, বলে ছেলেটার মোবাইলে মাথা ঢুকিয়ে দিল দোকানদার। কিছুক্ষণ পর মাথা তুলে বলল, কী আজব কারবার, ফেসবুকে যুদ্ধ লাগাই ফ্যালছে। দাবার গুটি হয় সাদা-কালা, এরা খেলতাসে লাল-কালা।
কথা শেষ হতেই দুজনেই গা দুলিয়ে হেসে উঠল।
পাশের বেঞ্চে বসা বৃদ্ধ চাচা এতক্ষণে কিছুটা আগ্রহী হলো। জিজ্ঞেস করল, এই লাল আর কালার মানে কি?
ছেলেটা বলল, লাল মানে স্টুডেন আর কালাগুলা লীগ। মানুষ মরছে দুই দলের সমান, একদল সেই শুকে লাল হইছে আর আরেকদল কালা। তবে, জিতসে গিয়া লাল দল।
বৃদ্ধ পায়ের ওপরে পা তুলে উদাস দৃষ্টিতে রাস্তার দিকে তাকিয়ে বলল, ধুর রাখ তোগোর লাল, কালা আর হারজিত। আমাগো কাছে কালা মানে ঘুটঘুইট্টা অন্ধকার, সকালের দেখা নাই আর লালগুলা দেইখা মনে কয়, লালবাত্তি, ব্যবসার চটিপটি গোল।